Listen to the future  কমছে সবুজ ,বাড়ছে অনলাইনে বিপদ ! মুর্শিদাবাদের শিশুরা ভাবছে কী নিয়ে ?

Published By: Imagine Desk | Published On:

Listen to the future   আন্টার্টিকায় কমছে পেঙ্গুইনের সংখ্যা। বিশ্বজুড়ে কমছে সবুজ।  এর সঙ্গেই অনলাইন দুনিয়ায় বাড়ছে শিশুদের বিপদ । বিষয় ভিন্ন মনে  হলেও দুইয়ের  যোগ রয়েছে । পরিবেশের ভারসাম্যের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্নের মুখে শিশুদের অধিকারও । তাই বহরমপুরের  মেরি ইমাকুলেট স্কুলের ছাত্রী আলভিরা খানের   প্রশ্ন, “ আচ্ছা  আপনারা বলছেন যে আমরা খেলতে যাচ্ছি না। আপনারাই গাছ কাটছেন,  সবুজ ধ্বংস করছেন। শিশুরা তাহলে খেলবে কোথায় ?  বড়দের কাজকর্মের কারণেই বদলে যাচ্ছে পরিবেশ। লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে কোরাল প্রাচীর,  আন্টার্টিকায় কমছে পেঙ্গুইনের সংখ্যা। তাল মিলিয়ে খেলার মাঠ, পুকুর হারিয়ে যাচ্ছে। আমরাও বাধ্য হচ্ছি খেলার জন্য বরাদ্দ সময়  ইন্টারনেটে  দিতে”। নিজের এই মত শনিবার বহরমপুরে অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে ওই ছাত্রী। শনিবার বহরমপুরে শিশুদের কথা শোনার ব্যবস্থা হয়েছিল ইউনিসেফের পশ্চিমবঙ্গ শাখার উদ্যোগে। উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফের UNICEF পশ্চিমবঙ্গ শাখার যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সুচরিতা বর্ধণ  Suchorita Bardhan , কমিউনিকেশন  কনসালট্যান্ট অমিতাভ দাস। আলোচনায় শিশুদের বিভিন্ন অধিকারের পাশাপাশি উঠে এসেছে সমস্যা, সমাধানের কথাও।

 

Listen to the future কী বলছে শিশুরা ?

বহরমপুরের চুঁয়াপুর বিদ্যানিকেতন বালিকা বিদ্যালয়, বহরমপুর মহারানী কাশীশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়, জেএন অ্যাকাডেমি, গীতারাম গুরুকুল,  হিকমপুর হাইস্কুল, কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুল, মেরি ইমাকুলেট স্কুল,  দেবকুন্ডু এসএআরএমজি হাই মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা আলোচনায় অংশ নিয়েছিল । বেলডাঙ্গার দেবকুন্ড শেখ আব্দুর রাজ্জাক মেমোরিয়াল গালর্স হাই মাদ্রাসার  ছাত্রী সুরাইয়া খাতুন, আয়েশা সিদ্দিকা, রেহেনা পারভিনরা   প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, “এখনও মেয়েদের জন্ম হলে কেন বাড়ির বড়োদের মন খারাপ হবে ? কেন বাড়িতে খাবার এলে সেটা ছেলেদেরই আগে দেওয়া হবে ? কেন ছেলেরা দেরি করে এলে কেউ কিছু বলবে না ?  ” ।

Listen to the future
Listen to the future  দেবকুন্ডু এসএআরএমজি হাই মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা জানাচ্ছে নিজেদের মনের কথা

 

তাঁরা  তুলে ধরেছে এলাকার শিশুদের স্কুল ছেড়ে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়া, বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা। জানিয়েছে “দুষ্টু লোকের কুকথা”র কথা। তবে সঙ্গে বলেছে মীনা মঞ্চের টীম কীভাবে রুখছে মেয়েদের বিয়ে। বহরমপুরের গীতারাম গুরুকুলের  পড়ুয়ারা জানিয়েছে, সাইবার বুলিং, সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে আরও সচেতনতা বাড়তে হবে। শিশুরা অনলাইনে বিপদে পড়লে কোথায় যাবে ? সবাই তো সেটা জানে না।

Listen to the future
Listen to the future আলোচনায় মহারাণী কাশীশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রীরা

 

Listen to the future মহারাণী কাশীশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রী আদৃতা পাল, সুদীপ্তা ঘোষ, তারান্নুম কবির, তনিশা মণ্ডক, দিৎসা চক্রবর্তীরা  তুলে ধরেছে শিশুদের উপর পরিবেশ বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাবের কথা। বলেছে, কীভাবে শিশুদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।  সমাধানের কথাও শুনিয়েছে ছাত্রীরাই । আদৃতা পাল  কথায়, বড়দের জন্য যেরকম ভোটাধিকার থাকে। শিশুদের জন্যও সেরকম একটা প্ল্যাটফর্ম  তৈরি করা দরকার। বলেছে, শহরে শহরে দরকার সবুজ এলাকা। পরিবেশ যোদ্ধা হিসেবে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগের কথাও তুলে ধরেছে ছাত্রীরা। ছাত্রীরা বলেছে, অন লাইনে ওঁত পেতে আছে বিপদ। এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন করা দরকার।

Listen to the future হিকমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়া মাসুদ সেখ, হানিফ সেখ, সহেলি সুলতানা, শবনম খাতুন, মনিরা খাতুন, খাদিজা পারভিনরা আবার জানিয়েছে স্কুলছুটদের জন্য তাদের মন খারাপের কথা। সহেলি সুলতানা বলেছেন, “যারা স্কুল ছেড়ে দিচ্ছে অনেকেই পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনার সঙ্গে আর সম্পর্ক থাকছে না। যথেষ্ট উপার্জনও করতে পারছে না। পরিবারের উচিৎ আরও বেশি করে দায়িত্ব নেওয়া যাতে কেউ শিশু শ্রমিক না হয়ে যায়”। তারা বলেছে, বাল্যবিবাহের কথাও।

Listen to the future
Listen to the future শিশুদের সঙ্গে কথা বলছেন সুচরিতা বর্ধণ

 

Listen to the future  শিশুরা যে সব কথা স্কুলে বা বাড়িতে মন খুলে বলতে পারছে না। সেই কথাও উঠে এসেছে স্কুল পড়ুয়াদের আলোচনায়। চুয়াপুর বিদ্যানিকেতনের ছাত্রী দিশা মণ্ডল বলেছেন, বাড়িতে বা স্কুলে  এমন কাউকে দরকার যে আমাদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনুক। সঠিক পরামর্শ দিক।বহরমপুর জেএন অ্যাকাডেমির পড়ুয়ারাও জানিয়েছে, সুখ দুঃখ, অনুভূতির কথা বলা যায় না বাড়িতেও। এই স্কুলের পড়ুয়া  সাত্ত্বিক ব্যানার্জির উদ্বেগ, “ সমাজের নানা রকম দ্বন্দ্ব বিভেদের কারণে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ফিকে হয়ে যাচ্ছে। সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। তাতে শিশু, নারী সকলের অধিকার রক্ষা হবে, সাম্য আসবে। এতে এগবে দেশ”।

বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের ছাত্ররা জানিয়েছে, শিশুদের অধিকারের কথা অভিভাবকদেরও গুরুত্ব দিয়ে জানানো উচিত। গীতারাম গুরুকুলের ছাত্র আখতার রেহান সেখ জানিয়েছে, অনেক সময় শিশুদের পছন্দকে গুরুত্ব দেয় না পরিবার। একই সঙ্গে রেহান বলেছেন, কেউ কোন রকম হেনস্থার মুখোমুখি হলে সেটা নিয়ে কথা বলা উচিৎ। তবেই রক্ষা হবে শিশুদের অধিকার।  ইউনিসেফের পশ্চিমবঙ্গ শাখার যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সুচরিতা বর্ধন বলেন, “ আমরা বহরমপুরে এসেছি শিশুদের কথা শুনবো বলে। শিশুরা কেমন ভবিষ্যৎ দেখতে চায় ? আমরা শুনতে এসেছি। শিশুরা জানিয়েছে, শিশু অধিকার তারাও নিশ্চিত করতে চায়। শিশুদের কথা আমরা সরকারের কাছে তুলে ধরবো”।