স্বল্প ছুটিতে চলুন ঘুরে আসি মুর্শিদাবাদ।

Published By: Madhyabanga News | Published On:

ঋত্বিক দেবনাথ, বহরমপুরঃ  কি আপনারাও আমার মতন বাড়ি, অফিস করে করে ক্লান্ত? কিংবা ব্যস্ততার মাঝে সময় দিতে পারছেন না নিজেদের প্রিয়জনদের? তাহলে আপনাদের মতন মানুষদেরই জন্যে রয়েছে সুখবর। টানা তিনদিনের ছুটি। ৩০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর পড়েছে খাতায় কলমে শনিবার এবং রবিবার। এবং তার ওপর এক্সট্রা পাওনা ২ অক্টোবর অর্থাৎ গান্ধী জয়ন্তীর ছুটি। ব্যাস বগলে ঝোলা গোছান এবং বেড়িয়ে পরুন মুর্শিদাবাদের উদেশ্যে।

কলকাতা থেকে আসা মুর্শিদাবাদ বেশ সহজ মাত্র চার ঘণ্টার ট্রেন জার্নি। তারপরেই সটাং নেমে পরবেন মুর্শিদাবাদে। এছাড়াও আশেপাশে যারা থাকেন এই জেলার তাদের খালি একটা বাস বা ট্রেন চেপে টুক করে আসায় যায়। তাহলে আর কী দেরি না করে প্ল্যান করে ফেলুন একটা ঝটিকা। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, ব্যস্ত জীবন থেকে একটু ছুটি নিয়ে। রোজগারের রান্নাঘরকে একটু টাটা বলে ঘুরে আসুন মুর্শিদাবাদে থেকে। আপনাদের জন্যে রইল মুর্শিদাবাদে এই তিনদিন কি কি দেখবেন তার লিস্ট।

হাজারদুয়ারি প্যালেস-
মুর্শিদাবাদের সেরা দর্শনীয় স্থান বলতে যে ঐতিহাসিক স্থাপত্যের কথা মনে পরে সেটি হল হাজারদুয়ারি প্যালেস। মোট এক হাজারটি দরজা থাকায় এই প্রাসাদের নামকরণ করা হয় হাজারদুয়ারি প্যালেস। যদিও তার মধ্যে ৯০০টি দরজা আসল এবং ১০০টি নকল। কী তাহলে একটু এসে দেখেই যান কোনটা আসল এবং কোনটা নকল।

কাটরা মসজিদ-
হাজারদুয়ারির পরেই মুর্শিদাবাদের সেরা দর্শনীয় স্থান হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে কাটরা মসজিদ। নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। এক সময় এই মসজিদেই প্রায় দু’হাজার জন মানুষ একসাথে প্রার্থনা করতে পারতেন। ভেবেই অবাক লাগছে তো। চলে আসুন অনুভব করে যান প্রার্থনার জোর।

নিজামত ইমামবাড়া-
আরও একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ মুর্শিদাবাদের সেরা দর্শনীয় স্থান হল নিজামত ইমামবাড়া। এক সময় এটি তৈরি হতে খরচা হয়েছিল প্রায় ৬ লক্ষ টাকা। নিজামত ইমামবাড়া পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ ইমামবাড়া।

মতিঝিল পার্ক-
মতিঝিল নামের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নবাব আলীবর্দী খানের জ্যেষ্ঠ কন্যা ঘসেটি বেগমের নাম। এই ঝিলটির আকৃতি অনেকটা অশ্বক্ষুরের মত। এছাড়াও এখানে দেখা যায় সুন্দর মনোরম গাছপালা। থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে।

কাঠগোলা বাগান-
মুর্শিদাবাদের প্রধান আকর্ষণ হাজারদুয়ারি প্যালেস থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত কাঠগোলা বাগান। জিয়াগঞ্জের রাজা লক্ষীপৎ সিং দুগর এই বাগানবাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। এই বাগানবাড়িটি তৎকালীন স্থাপত্যকলার এক অন্যতম নিদর্শন। এছাড়াও তৈরি করা হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। এবং বর্তমানে বহু বাংলা সিনেমাতেও ব্যবহৃত এই বাগানবাড়ি।

নশিপুর রাজবাড়ি-
মুর্শিদাবাদের নশিপুর রাজবাড়ির সাথে জড়িয়ে আছে এক অত্যাচারী কুখ্যাত রাজার কাহিনী। রাজা দেবী সিংহের দরবার ছিল এই নশিপুর রাজবাড়ি। এই রাজবাড়ির ভেতরে রয়েছে একটি রাম মন্দির। বর্তমানে এই রাজবাড়িটি একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে।

কিরীটেশ্বরী মন্দির-
২১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত হয়েছে ভারতের ‘সেরা পর্যটন গ্রাম’ হিসেবে মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী গ্রাম। লোকমতে এই মন্দির খুব প্রাচীন। মুর্শিদাবাদের ডাহাপাড়া রেলস্টেশন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দুরেই অবস্থিত কিরীটেশ্বরী গ্রাম এবং সেখানেই রয়েছে কিরীটেশ্বরী মন্দিরের অবস্থান। কথিত আছে, দক্ষযজ্ঞে সতীর মুকুট এসে পড়েছিল এখানে। যার ফলে এটাকে মহাপীঠ বলা হয়। আদি মন্দিরটি ১৪০৫ সালে তৈরি বলে মনে করা হয়। সেটি লুপ্ত হলে আঠার শতকের প্রথমদিকে পশ্চিমমুখী বর্তমান মন্দিরটি তৈরি করেন কানুনগো বঙ্গাধিকারী দর্পনারায়ণ। মন্দিরটিতে মুসলিম স্থাপত্যের প্রভাব লক্ষণীয়।

এবং সেখান থেকেই মন্দির দর্শন করে। তারপর সোজা পলসন্ডার রাস্তা ধরে বেড়িয়ে যেতে পারবেন বাড়ির উদেশ্যে। পাশেই রাস্তার ওপর পরবে সুন্দর একটি পাঞ্জাবি ধাবা। থেমে একটু পেট পুজো করে আবার ফিরে যেতে পারবেন নিজেদের বাড়ির জন্যে। ব্যাস ছুটি কাটিয়ে আবার অপেক্ষা পুজোর ছুটির জন্যে।