নবাবি মুর্শিদাবাদের আমের কোহিনুর ‘ কোহিতুর ‘ Murshidabad Kohitur Mango

Published By: Madhyabanga News | Published On:

প্রিয়াঙ্কা দেব বিশ্বাসঃ মুর্শিদাবাদ মানেই নবাবিয়ানা  আর নবাবি  আম। সারি সারি আম গাছে বিস্তৃত বাগানের পর বাগান  নবাবি শহরের ঐতিহ্য বহন করে আছে আজও। আমের মরশুমে ল্যাংড়া, রানিপসন্দ, গোলাপখাসেরা- বাহারি আমের চাহিদা থাকেই, কিন্তু সবচেয়ে বেশি চাহিদা সেই ‘ কোহিতুর ‘ এর।  এক কথায় নবাবী আমের কোহিনুর। লাঠির আগায় দড়ির জাল , স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে “ঠোসা” – লাগিয়ে আম পাড়া হয়। সেই জালের মধ্যে তুলোর প্যাডিং থাকে। নামানোর পরেও তাকে রাখা হয় তুলোর মধ্যেই। যাতে সামান্যতম চোটও না লাগে আমের গায়ে। এখানেই শেষ নয়। দু’-তিন ঘণ্টা পরপর আমগুলো উল্টে পাল্টে দিতে হয়। যাতে এক দিকে চাপ পড়ে বা এক দিক গরম হয়ে আমের স্বাদ নষ্ট না হয়।

মুর্শিদাবাদের কোহিতুর আম

নবাবি আমলে এই সব দেখভালের জন্য অভিজ্ঞ লোক থাকত। তাঁদের আম-কেরানি বা আম-পেয়াদা বলা হত। তাঁদের ছিল জহুরির চোখ। তাঁরা দেখেই বলে দিতে পারতেন, কখন কোন আমকে গাছ থেকে পাড়তে হবে বা কোনটিকে জলে ভেজাতে হবে। কোহিতুর আম  যেমন রসালো, তেমন স্বাদ, গন্ধ। সেই কোহিতুরের বাগান  শহর মুর্শিদাবাদে সম্পদ ।  ইতিহাস বলছে, ১৭০৪ সালে ঢাকা থেকে বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে সরিয়ে আনেন মুর্শিদকুলি জাফর খাঁ। তারও পরবর্তী নবাবদের উৎসাহে মুর্শিদাবাদে তৈরি হয় আম-বাগান এবং সেখানে বিভিন্ন ধরনের আমের গাছ লাগানো হয়। সেই সব বাগিচা থেকে কখনও বেরিয়েছে রানিপসন্দ, কখনও মির্জাপসন্দ বা সারেঙ্গা। তেমনই কোনও অনামা মালির হাতে তৈরি হয়েছে কোহিতুর।

 

কোহিতুরের আখ্যান খুব বেশি প্রচার পায়নি কখনও। গাছ পাকা হওয়ার আগেই পেড়ে ফেলতে হয় এই আম। মুর্শিদাবাদের আম-চাষিদের মতে, গাছ পাকা হয়ে গেলে কোহিতুরের স্বাদ বদলে যায়। তাই স্বাদ ধরে রাখতে হিসেব করে দেড়-দু’দিন আগেই আম পেড়ে ফেলা হয়।

নবাব মীরজাফরের বাস ভবনের ঠিক উল্টো দিকেই রয়েছে বাগান । নবাব মীরজাফরের সাধের এই আমের বাগান। দিগন্ত বিস্তৃত আমের বাগানে ছিল দেড়শোর বেশি আম গাছ। যার মধ্যে অন্যতম ‘ কোহিতুর ‘. নবাবি আমল থেকেই কোহিতুর এর চাহিদা রয়েছে যা আজও এক ফোঁটাও কমেনি। তবে রয়েছে আশঙ্কাও। দিন দিন কমে যাচ্ছে কোহিতুর গাছের সংখ্যা। প্রতিটি আম বাগানে বর্তমানে পাঁচ থেকে সাত টি করেই কোহিতুর এর গাছ রয়েছে। ফলনও খুব কম। গাছ প্রতি সর্বোচ্চ আম হয় ৫০ থেকে ৬০ টি । বয়সের ভারে ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে এই প্রজাতির আম গাছ, ফলত কোহিতুর কে বাঁচাতে পুরনো গাছগুলি পরিচর্যা এবং সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন ইতিহাসবিদরা।