বেদান্ত চট্টোপাধ্যায়, বহরমপুরঃ শীত মানেই পশমিনা শাল। শালের ওমে উষ্ণতা খোঁজে শরীর। সেই শালের পসরা সাজিয়ে প্রতিবছর জমে ওঠে বহরমপুরের কাদাই মার্কেট। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ডিসেম্বরের শহরে বসেছে শালের বাজার। আর সেখানেই প্রায় দুহাজার দুশো কিলোমিটার সফর করে কাশ্মীর থেকে বহরমপুরে এসেছেন খালিদ কাশ্মীরি। শীত আসতেই হাজির প্রতি বছর বহরমপুরের আস্তানায়। সাথে করে শীতের পসরা। এই শহরের সাথে খালিদের সম্পর্ক ২৫ বছরের।
বহরমপুর তাঁর সেকেন্ড হোম বলছেন শালের সওদাগর খালিদ। শীতের মরশুমে বহরমপুরে কাদাই মার্কেটে ইতিমধ্যেই ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। সৌম্য পুরুষ খালিদ এত বছরে ভাব জমিয়ে ফেলেছেন তাঁর ক্রেতাদের সাথেও। তিনি জানান, কোভিড পরবর্তী সময়ে ব্যবসা অনেকটাই কমেছে। তবে বহরমপুরের প্রতি ভালোবাসা তাকে বারবার আকৃষ্ট করে এখানে আসতে। আগে শুধুমাত্রই হ্যান্ডমেড কাশ্মীরি শাল নিয়ে আসতেন। তবে এখন মানুষের চাহিদা বেড়েছে। হ্যান্ডমেড সালের পাশাপাশি বাজারে এসেছে কাশ্মীরি ডিজাইনার ব্যাগ, সোয়েটার, কাপ্তান আরও কত কী। বিশেষ করে এই বছর বাজারে নজর কেড়েছে কাশ্মীরি কানি শাড়ি। ছেলেদের জন্য রয়েছে লেদার জ্যাকেট, সোয়েটার, টুপি , জহর কোট আর সর্বপরি কাশ্মীরের বিখ্যাত পশমিনা শাল ক্রেতাদের সাথে কথা বলতে বলতে জানান খালিদ।
শীতের এই সময়টা কাশ্মীরের তাপমাত্রা নামতে নামতে গিতে দাঁড়ায় ক্রমাঙ্কের নিচে (-৫°/৭° বা আরও কম)। এই আবহাওয়ার কারণে এই মুহূর্তে ব্যবসা করা তো দূরঅস্ত, বাড়ি থেকে বেড়ানোই কঠিন হয়ে যায়। তাই পাহাড় ছেড়ে সমতলই ভরসা খালিদের মত ব্যবসায়ীদের। বছরের অন্যান্য সময় কাশ্মীরে এই শালের ব্যবসা করেন তাঁরা। ভরসা পর্যটক থেকে শুরু করে স্থানীয়রা। ৩৬ বছর বয়সী তরুণ যুবক হাসতে হাসতে বলেন, “পরিবার ছেড়ে এত দূরে থাকতে কি কারও ভালো লাগে? তবে পেট তো চালাতে হবে।” আরো জানান বহরমপুরের প্রতি ভালোবাসার কথা। জানান, “বহরমপুর আমার দ্বিতীয় বাড়ি। এখানকার মানুষ, আবহাওয়ার সাথে আমার একটা অন্য সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ভালো লাগে এখানে আসতে, ব্যবসা করতে। ব্যবসায়ীরা এখানে যে শাল নিয়ে আসেন তার দাম শুরু হয় প্রায় ১০০০ থেকে ১২০০ এর মধ্যে। কাশ্মীরি জিনিসের দাম বেশি বলে অনেক ক্রেতা মুখ ফেরান। তবে শ্রীনগরের এই তরুণ, ব্যবসা করতে করতেই এক ক্রেতা কে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, আসল আর নকল কাশ্মীরি জিনিসের তফাৎ। শালের উপর সুতো দিয়ে করা কাজ এবং কাপড়ের ধরণ বলে দেয় কোনটা কাশ্মীরের অথেন্টিক কাজ।