khadi mela ‘খাদি আসলে জীবনযাত্রা’
khadi mela khadi Berhampore khadi mela Berhampore সিল্ক। খাদি। ইউনাইটেড। সমিতি।-এই চারটি অক্ষরের একটা মিল হচ্ছে প্রত্যেক্টি শব্দই ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে। মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) সিল্ক এসময় সিল্ক রুটে প্রাচ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করত। খাদি স্বাধীনতা আন্দোলনের দেশীয় পণ্যের গর্ব। ইউনাইটেড অর্থাৎ একতাতেই আমরা জয় পেয়েছি। আর সেই নামের সঙ্গে জড়িয়ে ইতিহাসের মুর্শিদাবাদ। মুর্শিদাবাদ খাদি মেলায় ‘ইউনাইটেড সিল্ক খাদি সমিতি’ নামের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে ক্রেতা টানতেও। বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ারে ৩ নম্বর স্টলে‘ ইউনাইটেড সিল্ক খাদি সমিতির বিক্রেতাদের মুখে তাই হাসি। তাঁরা জানাচ্ছিলেন, খাদি আসলে জীবনযাত্রা। খাদির দেশীয় পণ্যই যেন জীবনের কথা শোনাচ্ছে দর্শকদের। ২০ টাকা থেকে শুরু খাদির সামগ্রী। এছাড়াও প্রতিটা সামগ্রীর ওপর কুড়ি থেকে পঞ্চাশ শতাংশ ছাড়।

আরও পড়ুনঃ Ashima Vyadh Khadi Mela: অসীমা ব্যাধরা হস্তশিল্পের নীরব…
khadi mela রঙিন ফতোয়া, খাদির শার্ট, হ্যান্ডলুম কুর্তা, গামছা, শাড়ি, ধুতি থেকে শুরু করে নানান খাদি পণ্য
khadi mela khadi Berhampore khadi mela Berhampore সমিতির স্টলে ঢুকলেই চোখে পড়ে রঙিন ফতোয়া, খাদির শার্ট, হ্যান্ডলুম কুর্তা, গামছা, শাড়ি, ধুতি থেকে শুরু করে নানান খাদি পণ্য। জমাট পাট রঙের কাপড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা বিক্রেতার মুখের হাসি যেন গল্প বলে-এই মেলা শুধু ব্যবসা নয়। মানুষের আশা ও ভরসার জায়গা। এ চিরকালীন। এ স্বাস্থ্য বান্ধব। পরিবেশ বান্ধব। এবছরের মতো মেলা শেষের দিকে এগোচ্ছে। মুর্শিদাবাদ খাদি মেলা ২০২৫–২৬ও প্রমাণ করে দিলো, খাদি শুধু কাপড় নয় এটি একটি সংস্কৃতি, এক জীবনযাত্রা। ওই সমিতির এক প্রতিনিধি জয়দেব গনাই জানালেন, “খাদি ও খদ্দর বলতে শুধু পোশাক নয়। জীবনদর্শন। এখানে সুতো তৈরি থেকে তা দিয়ে পোষাক তৈরি পর্যন্ত সবই হাতে করা হয়। শিল্পীরা খুব মন দিয়ে প্রতিটা কাজ করেন। এতে স্বদেশি ভাবনা আছে। যা মহাত্মা গান্ধী শুরু করেছিলেন।”
khadi mela khadi Berhampore khadi mela Berhampore জয়দেববাবু আজ টানা চোদ্দো বছর যুক্ত এই সমিতির সঙ্গে। খাদি কমিশন ও ভারতের হস্তশিল্প পর্ষদের স্বীকৃতি পাওয়ায় এই সমিতির সামগ্রীর ওপর আলাদা বিশ্বাস তৈরি হয়েছে মানুষের মনে। জয়দেববাবুর কথায় এটা বোঝাই যায়, এই কাজ শুধু ব্যবসা নয়, গ্রামের লোকেদের হাতে কাজ ফিরিয়ে দেওয়া এবং ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার অক্লান্ত চেষ্টা।
khadi mela khadi Berhampore khadi mela Berhampore কোথায় তৈরি হয়?
khadi mela khadi Berhampore khadi mela Berhampore সমিতির উৎপাদন কেন্দ্র সামশেরগঞ্জ ও পাশের গ্রামে। গ্রামের শতাধিক কারিগর দিনরাত সুতো কাটেন, বুনন করেন, রঙ মেশান। সমিতির প্রতিনিধিরা জানান, ছোট্ট গ্রামগুলোতেই সবচেয়ে দক্ষ মানুষ লুকিয়ে আছেন। শুধু দরকার সুযোগ। বয়স্ক কারিগর থেকে তরুণ প্রজন্ম সবাই যুক্ত এতে। এই স্টলে শাড়ি, ফতোয়া, পাঞ্জাবি, গামছা, তোয়ালে, বিছানার চাদর, লুঙ্গি সবই পাওয়া যাচ্ছে। দামও তুলনামূলক কম, যা সাধারণ মানুষের কাছে আরও আকর্ষণীয়। কুড়ি টাকা থেকে শুরু। এখানে জিনিস রয়েছে সাত হাজার টাকা দামের। গ্রামবাংলার মেয়েদের হাতে তৈরি ‘কাঁথাস্টিচ’ এর শাড়ি, এছাড়াও প্রতিটা সামগ্রীর ওপর থাকছে কুড়ি থেকে পঞ্চাশ শতাংশ ছাড়। ক্রেতাদের সুবিধার্থে জয়দেববাবুর মতে, “ক্রেতারা এখন আর শুধু বাইরে থেকে আসা পলিয়েস্টার বা সিন্থেটিকের দিকে তাকায় না। স্বাস্থ্যবান্ধব, আরামদায়ক এবং দেশীয় কাপড়ের দিকে মন দিচ্ছেন। খাদির চাহিদা বাড়ছে। আগের বার এর তুলনায় এবারে মেলায় বেশি ভালো বিক্রি হয়েছে । চেনা জিনিসের ভিতর নতুনত্ব আনা সময়ের দাবি।

khadi mela khadi Berhampore খদ্দরের রুমাল পুরো শেষ, খাদির রুমাল হাতে গোনা কয়েক পিস পড়ে
khadi mela khadi Berhampore khadi mela Berhampore সমিতির সদস্যরা জানালেন, এখন ডিজাইনার কাটিং, রং এসব যুক্ত হচ্ছে যাতে তরুণদের আকর্ষণ বাড়ে। আগে শুধু সাদা ধুতি–কুর্তা ছিল।এখন নরম টেক্সচার, সুন্দর ডিজাইন, নানান রং-ও যোগ হচ্ছে । প্রথমে থান তৈরি হয়। তারপর সেই থানে বিভিন্ন রং করা হয়। তার পর যে কাপড়ে যেমন কাজ সেটা ভাগ হয়ে যায়। প্রতিটা কাজে কতটা সময় লাগবে তা নির্ভর করে কাজের ও কারুকাজের উপর। কিছু জিনিস দিনে কুড়ি থেকে তিরিশটা তৈরি হয়। আবার কিছু কিছু জিনিস একটা তৈরি করতেই চোদ্দো থেকে পনেরো দিন সময় লেগে যায়। যেমন একটা কাঁথা স্টিচ-এর ভরাট কাজ এর শাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় পনেরো – ষোলো দিন। আবার খাদি কাপড়ে তৈরি ছেলেদের শার্ট একদিনে চল্লিশ – পঞ্চাশ পিস তৈরি হয়ে যায়। এদিকে চার হাতের গামছা একদিনে দশ – বারো পিস তৈরি করে ফেলেন শিল্পীরা। এখনও বেশ কিছু দিন মেলার বাকি আছে। তবে ইতিমধ্যেই খদ্দরের রুমাল পুরো শেষ। খাদির রুমাল হাতে গোনা কয়েক পিস পড়ে আছে। জমে উঠেছে এবারের ২০২৫-২৬ এর খাদি মেলা।
khadi mela khadi Berhampore সন্ধে হলেই নামছে মেলায় অভ্যাগতদের ভিড়। আর কিছুদিন চলবে এই খাদি মেলা , দশ ডিসেম্বর অবধি। ঠান্ডাও বেশ জমে উঠেছে। আছে আরও অনেক কিছু। ফুরফুরে মেজাজে সপরিবারে মেলা ভ্রমণ হাতছানি দিচ্ছে–















