পবিত্র ত্রিবেদীঃ কান্দি আসলে জেমুয়া কান্দি। ১৭৪২ সাল নাগাদ গঙ্গারামের লেখায় ‘কান্দি’ নাম পাওয়া যায়। তবে ১৮৫৬ সালে আমরা প্রথম কান্দি মহকুমা দিয়ে কান্দির নাম ব্যবহার করি । জানাচ্ছেন নবদুর্গা হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক কুনালকান্তি সিংহরায় ।
নতুন জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম প্রাচীন জনপদ কান্দি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরেই চায়ের ঠেক থেকে ডাইনিং রুম আলোচনা সর্বত্র । অনেকেই দাবি জানিয়েছেন নতুন তিন জেলার নামের সাথেই মুর্শিদাবাদ যোগ রাখার। তবে এই সুযোগে আলোচনায় উঠে আসছে কান্দির প্রাচীন ইতিহাসও।
ইতিহাসের শিক্ষক এর বিশদে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, কান্দির নামকরণ নিয়ে অনেকগুলো মতামত আছে। অনেকে বলেন, ‘কান্দরময়’ এলাকা থেকে নাম হয়েছে কান্দি। কান্দর মানে ছোট নদী ।
অনেকে বলেন নদীর জলের কাদা জমে জমে এই অঞ্চলের নাম হয়েছে কান্দি। এই অঞ্চলের মানুষ উচ্চারণে চন্দ্রবিন্দু বেশি ব্যবহার করেন । সেখানে কাঁদি থেকে কান্দি করেছেন। এক অংশের মতে, কর্ম রাজাদের রাজধানী ছিল এই এলাকা । সেই কর্মান্ত থেকে হয়েছে কান্দি।
যোগেশ চন্দ্র রায় বলেছেন, কান্দি শব্দ এসেছে কন্দ শব্দের অপভ্রংশ থেকে। যার অর্থ হলো প্রধান ভূমিখন্ডের শাখা। কান্দির নাম একা থাকে না। আসামে পাওয়া যাবে হাইলাকান্দি। এখানে আছে ছাতিনা কান্দি, কদম কান্দি। বাংলাদেশে আছে দাউদকান্দি । আসলে এটি হলো যেমন ‘কান্দি’ । ১৮৫৬ সালে প্রথম কান্দি মহকুমা তৈরি হয়। সেখানে কান্দি নামটা স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহৃত হয় । তারপর ১৮৫৯ সালে কান্দি স্কুল তৈরি হয় । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । ১৮৫৯ সালে তৈরি হয় কান্দি পৌরসভা। ১৮৮৬ সালে তৈরি হয় কান্দি হাসপাতাল। মুঘল আমলে এই এলাকার নাম ছিল “ফতেসিংহ পরগনা” । ফতেসিংহ বলে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর লেখা প্রবন্ধ আছে। সেখানে জানা যায় আজকের বড়ঞা , খড়গ্রাম, ভরতপুর, কান্দি পৌরসভার রসোড়া থেকে কর্ণসুবর্ণ পর্যন্ত এলাকা ছিল ফতেসিংহ পরগনা । আবুল ফজলের গ্রন্থে আকবর কিভাবে এই ফতে সিং পরগনা এলাকা থেকে কতটা রাজস্ব পেয়েছে সেসব বর্ণনা দেয়া আছে । আবার ১৭৪২ থেকে ৪৫ সাল নাগাদ কবি গঙ্গারাম লিখছেন মহারাষ্ট্র পুরাণ। সেখানে বর্গী আক্রমণ হচ্ছে কোন কোন এলাকায় সেটা বলতে উনি ব্যবহার করেছেন জেমুয়া কান্দি শব্দটি।
নামকরণ নিয়ে নানা মত থাকলেও নতুন জেলা ঘোষণায় খুশি কান্দির মানুষ।