ঋত্বিক দেবনাথ, বহরমপুরঃ ঘটনা, দুর্ঘটনা, ব্রেকিং নিউজ থেকে রাজনীতির দড়িটানাটানি । সাংবাদিকদের কাজে কি এটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ? নাকি সমাজের জন্য বাড়তি দায়িত্বও রয়েছে সাংবাদিকদের ? দায়িত্ব রয়েছে সচেতনতা বৃদ্ধির। সেই রকম কাজের এক পরিসর ‘অ্যাডভোকেসি জার্নালিজম বা মিডিয়া অ্যাডভোকেসি। কিন্তু কী এই মিডিয়া অ্যাডভোকেসি ?
“অ্যাডভোকেসি জার্নালিসাম বা মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সাংবাদিকতায় একটি নতুন ধরনের এক্সপিরিমেন্ট মুর্শিদাবাদে শুরু করেছি”, সোমবার বহরমপুরে এমনটাই জানালেন ইউনিসেফের পশ্চিমবঙ্গ দপ্তরের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান সুচরিতা বর্ধন। সোমবার মুর্শিদাবাদের সাংবাদিকদের নিয়ে বহরমপুরের একটি বেসরকারি অডিটোরিয়ামে একদিনের ‘মিডিয়া অ্যাডভোকেসি প্রোগ্রাম’ কর্মসূচি করা হল। এই কর্মসূচির আয়োজক ছিলেন প্রেস ক্লাব অফ কলকাতা তার সাথে ইউনিসেফ পশ্চিমবঙ্গ। একদিনের কর্মসূচিতে দেখান হল কীভাবে সাংবাদিকতাকে হাতিয়ার করে সমাজের এগিয়ে যাওয়ারকে ত্বরান্বিত করা যায়।
টীকাকরণ থেকে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যর মতো একাধিক বিষয়ে এখনও পিছিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা । স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যানে অ্যানিমিয়া, কম বয়সে অন্তস্বত্বা হওয়ার তথ্যে উঠে এসে উদ্বেগজনক ছবি। ২০১৫-১৬ সালের চতুর্থ সমীক্ষার (এনএইচএফএস-৪) সাথে তুলনা করে দেখা যাচ্ছে ২০১৯-২১ (এনএইচএফএস-৫) সালে মুর্শিদাবাদ জেলায় উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েছে মহিলাদের রক্তাল্পতা। ২০১৫-১৬ সালের চতুর্থ সমীক্ষায় (এনএইচএফএস-৪) দেখা গিয়েছিল ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে ৫৭.৫ শতাংশ মহিলা রক্তাল্পতায় ভুগছিলেন। ২০১৯-২১ (এনএইচএফএস-৫) সালের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে অ্যানিমিয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ওই পরিসংখ্যানে জেলার ৭৭.৬ শতাংস মহিলা রক্তাল্পতায় ভুগছেন। বাল্যবিবাহ, কম বয়সে সন্তানধারণের ছবিটাও বেশ উব্দেগের।
মুর্শিদাবাদের ২০১৯-২১ (এনএইচএফএস-৫) সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৫২.৮% গর্ভবতী মহিলারা তাঁদের সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থায় মাত্র ১০০টি আইএফএ নিয়ে থাকেন সেখানে মাত্র ৩০.৬% গর্ভবতী মহিলারাই কেবল ১৮০টি আইএফএ নিয়ে থাকেন । এই আইএফএ কী উত্তর হচ্ছে আইরন ফলিক অ্যাসিড। সহজভাবে বললে। মহিলাদের অ্যানিমিয়া হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে তাঁদের শরীরে আইরনের ঘাটতি হওয়ার কারণে। এবং সেটি প্রতিরোধ করার জন্যে সরকারীভাবে এই সমস্ত মায়েদের আইএফএ ট্যাবলেট দিয়ে থাকে। এবং স্বাস্থ্যদপ্তরেরে থেকে বারবার বলা হয় যে গর্ভাবস্থায় ১৮০টি অন্তত এই ট্যাবলেট নিতে। কিন্তু সেখানেও দেখা যাচ্ছে বড়সড় ঘাটতি।
যদিও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে হাসপাতালে প্রসব, নিয়মিত চেক আপের পরিসংখ্যানে। শিশুদের টীকাকরণে জেলায় এসেছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। কোন পথে এল সাফল্য সেটা খুঁজে বের করে পিছিয়ে পড়া জেলার তকমা ঘোঁচাতে ভূমিকা নিতে হবে সংবাদকর্মীদের । টীকাকরণ থেকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বাড়াতে হবে মানুষের সচেতনতা।
এই আহ্বান জানিয়ে বহরমপুরে ‘মিডিয়া অ্যাডভোকেসি প্রোগ্রাম’-এর আয়োজন করল কলকাতা প্রেস ক্লাব। সোমবার একটি বেসরকারি অডিটোরিয়ামে প্রেস ক্লাব, কলকাতার উদ্যোগে এবং উনিসেফ এর পশ্চিমবঙ্গ দপ্তরের সহায়তায় এই কর্মশালায় অংশ নিলেন জেলার সাংবাদিকরা । জেলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এগিয়ে আসতে হবে সংবাদকর্মীদেরও। এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এসডিও সদর প্রভাত চট্টোপাধ্যায় এবং মুর্শিদাবাদের সিএমওএইচ ডাঃ সন্দীপ সান্যাল। এবং পাশাপাশি ডাঃ সন্দীপ সান্যাল এই দিনের প্রোগ্রামে মঞ্চে দাড়িয়ে জানান যে, ২০১৯-২১ (এনএইচএফএস-৫) সালের পরিসংখ্যানে যা ছিল তার নিরিখে এই মুহূর্তে মুর্শিদাবাদের অবস্থা অনেক ভালো রয়েছে।
প্রেস ক্লাব অফ কলকাতার সভাপতি স্নেহাশিস সুর ও সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক আশা প্রকাশ করেছেন, লাগাতার উদ্যোগ , সাংবাদিকদের ভূমিকা মানবোন্নয়নের নিরিখে জেলাকে অনকেটাই এগিয়ে নিয়ে যাবে সারাদিন ব্যাপী এই কর্মশালায় মিডিয়া এডভোকেসি বিষয় বক্তব্য রাখেন ইউনিসেফের পশ্চিমবঙ্গ দপ্তরের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান সুচরিতা বর্ধন। এদিন অধ্যাপক ড: উমাশঙ্কর পান্ডে আলোচনা করেন, সলিউশন জার্নালিজম বিষয়ে। আলোচনা করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক পুলকেশ ঘোষ।
এদিন একাধিক সেশনে বাল্যবিবাহ, কম বয়েসে অন্ত:সত্বা হবার সমস্যা ও টীকাকরণ, পুষ্টি ও শিশু শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন ইউনিসেফের বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শদাতারা। উন্নয়নের বিষয় জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মশালায় সাংবাদিকদের আরও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানানো জানিয়েছেন ইউনিসেফ পশ্চিমবঙ্গ দপ্তরের প্রধান ড: অমিত মেহরোত্রা।