Jalangi River: নদীর জন্য একটা দিন

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নদীর জন্য হতে পারে আস্ত একটা দিন। জলঙ্গী নদী Jalangi River  বাঁচাতে কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজ এবং ‘সেভ জলঙ্গি’ সংগঠন  জলঙ্গী বাঁচাও দিবসে একটি  আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেছিল। কী সেই সেমিনার থেকে ফিরে কলম ধরলেন  বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রাণময় ব্রহ্মচারী। 

নদীর জন্য একটা দিন। না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। তাও আবার যে সে নদী নয়। আমাদের চিরচেনা ‘জলঙ্গী’। সেই নদীর জন্যই ছিল ১৭ ফেব্রুয়ারি। এই দিনটি ছিল জলঙ্গী বাঁচাও দিবস। স্রেফ একটা জীর্ণপ্রায় নদীর জন্য এতো মানুষ এভাবে আকূল হতে পারে সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।  শনিবার মৃতপ্রায় নদী ও জলাভূমি রক্ষা বিষয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন হয়েছিল কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের বীণাদাস মেমোরিয়াল হলে । কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজ এবং ‘সেভ জলঙ্গি’ সংগঠন এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেছিল। সেই সেমিনারে আমারও অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল।

সেমিনারের যুগ্ম উদ্যোক্তা কলেজ অধ্যক্ষা নাতাশা দাশগুপ্ত  ও সেভ জলঙ্গীর সভাপতি বিশিষ্ট চিকিৎসক যতন রায়চৌধুরী এই দুজনের পরিশ্রম সেমিনারকে সার্থক করেছে। সাথে ছিল সমগ্র টিমের অংশগ্রহণ।
শনিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করেন স্বনামধন্য নদী বিশেষজ্ঞ ও রাজ্য নদী কমিশনের চেয়ারপার্সন ড: কল্যান রুদ্র। এই সমস্যা যে শুধু জলঙ্গী নদীর নয়, প্রায় সমস্ত নদীই সংকটে ভুগছে। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। কল্যান রুদ্র বুঝিয়ে বলেছেন কীভাবে ভাগীরথী নদীর দীর্ঘ পথে পলি জমে জমে নদী নাব্যতা হারিয়েছে । আবার অন্যদিকে নদীকেই বর্জ্য পদার্থের আস্তাকুঁড়ে পরিণত করা হয়েছে।
এর ফলে ফলে চূর্ণী নদী এখন সবচেয়ে দূষিত নদীর তকমা অর্জন করেছে।
আলোচনায় ছিল প্রশ্নোত্তরের পর্বও। এই প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল, কেন জল থাকছে না নদীতে ?
সারাদেশে নদী সহ খালবিলের সংখ্যা চুয়াত্তর লক্ষ সাতশ চল্লিশ, কিন্তু বাস্তবে অনেক খালবিল, এমনকি নদীও দিনে দুপুরে চুরি হয়ে যাচ্ছে। অঞ্জনা, শিয়ালমারি, পাগলা, বাশলই , কানা ময়ুরাক্ষীর মতো শাখানদী প্রায় হারিয়ে গিয়েছে । বর্ষাছাড়া অন্য সময় এই সব নদীতে জল ই থাকেনা । নদীর বুকে দোতলা বাড়িও তৈরী করে ফেলছেন অনেকে। তাহলে নদী বাঁচবে কীভাবে ?
ড: রুদ্র উত্তর দিয়েছেন ” নদীর কোনো অংশীদার নেই, কোনো অভিভাবক নেই। এটা একটা সমস্যা। পোর্ট ট্রাষ্ট ভাগীরথী নদী সহ প্রধান বন্দর এলাকা গুলি রক্ষণাবেক্ষন ও দেখভাল করলেও ছোট শাখানদী গুলি প্রায়ই অভিভাবকহীন । নদীকে রক্ষা করতে মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে”।
ডঃ কল্যান রুদ্রর আলোচনার সুতো দিয়েই দিনভর অন্যান্য নদীগবেষকরা মালা গেঁথেছেন।
ডঃ সনৎ গুছাইতের আলোচনায় উঠে এসেছে, কীভাবে প্লাস্টিক সহ নানা বর্জ্য পদার্থ নদীখাতকে দূষিত করছে।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গবেষক ডা: আজনারুল  ইসলামের আলোচনায় জানা গিয়েছে কেন মাথাভাঙা, চূর্ণি, জলঙ্গী প্রভৃতি নদীগুলি অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে।

নদী নিয়ে আলোচনা নদীর মতোই কাঁটাতার মানে নি। অন লাইনে সেমিনারে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গবেষক মল্লিক আক্রম হোসেন  । ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অবিভক্ত দুই বাংলাদেশের নদী সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন ।
মহারাষ্ট্র নদী গবেষক ও নমামি গঙ্গের মুখ্য প্রকল্পক ডা: স্নেহা ডোন্ডের আক্ষেপ করেছেন দূষণ ও অপরিকল্পিতভাবে নদীখাতে বর্জ্য ফেলা নিয়ে। তিনি আক্ষেপের সাথে উল্লেখ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে নদী দূষণ বেড়ে চলেছে । রাজ্যের পুকুর সংস্কৃতির বিনিষ্ট হওয়া নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সেমিনারে ওয়াটারম্যান হিসেবে সারাদেশে খ্যাত ডা: রাজেন্দ্র সিংহ নেপাল থেকেই তাঁর বার্তা পাঠিয়েছেন । এদিনের আলোচনা চক্রে ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য ।
সেমিনারের দ্বিতীয় পর্বে অধ্যাপক ড: সুমন ভট্টাচার্য, ড: আজনারুল ইসলাম, সাংবাদিক সুস্মিত হালদার, দুর্বাদল ভট্টাচার্য জলঙ্গি সহ বিভিন্ন প্রায় হারিয়ে যাওয়া নদীগুলির বাঁচিয়ে তোলার রাস্তা খুঁজেছেন।
তবে এই সমস্যা যে ঠান্ডাঘরে মাথাঘামিয়ে মেটানো যাবে না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন ডা: যতন রায় চৌধুরী।
গবেষকরা বলেছেন, নদীর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। নদীর সমস্যা যে আসলে মানুষের সমস্যা সেটা বুঝিয়ে বলতে হবে। নদী বাঁচলে যে মানুষের জীবনও বাঁচবে সেটা সকলের উপলব্ধির মধ্যে আনতে হবে ।
এই বার্তার রেশ ধরেই বিকেলে জলঙ্গী কদমতলা ঘাটে কচিকাঁচাদের বসে আকো প্রতিয়োগিতা হয়েছিল। ছিল আদিবাসী নৃত্য অনুষ্ঠান , নদী বন্দনা ও আরতি । তবে থাকছে, এতো প্রচেষ্টার পরও জলঙ্গী নদী টিকবে তো ? এই প্রশ্নের উত্তর কেবল সময়ই দিতে পারবে । তবুও আশায় বুক বাধছে একদল নদী পাগল মানুষ।

(লেখক বিশিষ্ট সাংবাদিক।  মতামত লেখকের নিজস্ব। )