অভয়া কাণ্ডে শিউরে উঠেছিলেন
নিজস্ব প্রতিবেদনঃ পেটের টানে ঝুঁকি নিয়ে পশ্চিম এশিয়ায় গিয়ে একের পর এক পরিযায়ী শ্রমিকের হেনস্তার ঘটনা সামনে আসছে। নাড়িয়ে দিয়েছে অভয়া কাণ্ড। পশ্চিম এশিয়া থেকে ফেরা কান্দির (Kandi) এক মহিলা ইঞ্জিনিয়ার সেই প্রেক্ষাপটে রাতের বিমানে কাতার থেকে একাই ফেরার কথা শোনালেন। তিনে এসেছেন জগদ্ধাত্রী পুজোয় (Jagadhatri Puja) অংশ নিতে। পুজোয় এসে এক লহমায় যেন তিনি ফিরে যান ছোটবেলায়।
কাতারে থাকতে আর জি কর হাসপাতালের ভিতরে নৃশংস ঘটনায় চমকে উঠেছিলেন। তখন থেকে খানিকটা হলেও ভয় পেয়েছিলেন। তবু সাহস সঞ্চয় করে একাই সে দেশ থেকে মাঝরাতের বিমানে উড়ে এসেছেন কলকাতা বিমানবন্দরে। সেখান থেকে সোজা মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। হইহই করে পুজো কাটালেন। “তিলোত্তমার ঘটনায় শিউরে উঠেছিলাম। তবুও একরাশ ভয় নিয়েই চলে এলাম প্রাণের টানে, মাটির ঘ্রাণে”- এরকমই বলছিলেন মৌসুমি গালা ব্যানার্জি।
আরও পড়ুনঃ Murshidabad Womens Cricket: মহিলা ক্রিকেট টিম বিশ্বকাপ ফাইনালে, পথ দেখাবে জেলায়?
জগদ্ধাত্রীর বিসর্জনের সময় অভয়ার জন্যে তাঁর মন কেঁদে ওঠে। ধরে রাখতে পারলেন না আবেগ। নিজেই বলছিলেন সেকথা। ঘটনাচক্রে সেদিন এক ভারত কন্যার কাঁদার ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল মোবাইলে-মোবাইলে। ভারতকে মহিলাদের বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলে দেওয়ার নায়ক জেমাইমা রডরিগেজ ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন, কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর উপর বিশ্বাস রাখার জন্যে। একের পর এক আবেগ মথিত মন্তব্যে ভেসে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া। এক জন লিখেছিলেন,জগদ্ধাত্রীর চোখে জল কেন জেমাইমা?
Kandi Jagadhatri Puja জন্মসূত্রে বাঙালি। কান্দি থানা এলাকার বাগডাঙ্গার ব্যানার্জি বাড়িতে জন্ম মৌসুমির। ইঞ্জিনিয়ার বাবার পেশার কারণে বাগডাঙায় শৈশব কাটিয়ে বেড়ে ওঠার সময় কেটেছে মহারাষ্ট্রে। ওখানেই আর্কিটেকচারে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা। মাঝপথে এক মারাঠি মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে প্রণয়। তারপর কর্ম আর বিবাহ, দুই যোগসূত্র মিলে পাড়ি দেওয়া এক ভিন দেশে। কাতার। বর্তমানে কাতারের রাজধানী দোহাতে দুই সন্তান আর স্বামী নিয়ে ভরপুর সংসার মৌসুমীর। একদিকে সংসার অন্যদিকে কাজ।
Kandi Jagadhatri Puja সেখানে থাকলেও তাঁর মন পড়ে থাকে শিকড়ে। চোখ চলে যায় বাংলার খবরে। বাগডাঙ্গায় বসে তুতো দাদা সুমন চ্যাটার্জির ড্রয়িং রুমে স্মৃতির পাতা ওল্টাচ্ছিলেন এই প্রবাসী বং কন্যা। সেই তার মেয়েবেলার জগদ্ধাত্রী পুজোর কথা শোনাচ্ছিলেন। ভোর-ভোর ঘুম থেকে উঠে ঠাকুরের ঘট ভরা। বলবার সময় খুশিতে ভোরে উঠছিলেন। যেন পুতুল-পুতুল সেই ছোট্ট মেয়ে। ”প্রথমদিনেই একই সঙ্গে সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীর পূজো…। নবমীর পুজো হতে বেশ দেরি হয়ে যেত। ফলে সেদিনের খিচুড়ি খেতে প্রায় বিকেল পেরিয়ে যেত। তবুও তা ছিল আনন্দের। পরদিন দ-শ-মী…। পুজো শেষ হলে মাকে বিদায় জানানোর পালা। চোখ দুটো জলে ভরে আসতো। আর আজ।” এ কেমন ঘটনা? যে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্যে চিকিৎসায় অতন্দ্র প্রহরী, তাঁর সঙ্গে এটা কী হল?
স্পষ্ট, মনের কোনে কোথাও ওই ঘটনা ভুলতে পারছেন না তিনি। এই বাংলায় মেয়েকে পুজো করা হয় দেবী রূপে। কখনো সে দুর্গা। কখনো কালী। কখনো সরস্বতী। লক্ষ্মী অথবা মা জগদ্ধাত্রী।
Kandi Jagadhatri Puja মৌসুমী বলছিলেন, দোহা থেকে সরাসরি কলকাতা আসার কাতার এয়ারওয়েজের বিমান ধরার আগের কথা। ওঠার আগে তাঁর স্বামী সেখানে তাঁকে বারবার সাবধান করে দিয়েছেন, ”ফ্লাইট প্রায় মাঝরাতে কলকাতা বিমানবন্দর পৌঁছবে। সাবধানে থেকো। নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। তিনি নিজের দায়িত্বেই ফিরে এসেছেন। মাটির টানে, প্রাণের আহবানে। সাহসী কন্যার এগিয়ে চলার ফুরফুরে মৌসুমি হাওয়া নিয়ে।











