বেদান্ত চট্টোপাধ্যায়ঃ কবি শব্দজাল বুনেছিলেন , “ নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার/ কেহ নাহি দিবে অধিকার ”! তবে আজ ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে এই শব্দজাল বারংবার ভুল প্রমাণ করে আসছেন এই বাংলার মেয়েরা। তেমনই এক মেয়ের সন্ধান দেব আমরা। বহরমপুর শহরের গোরাবাজারের অনিতা হালদার ; নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের আর পাঁচটি মেয়ের মতোই অনিতারও খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যায়! তারপর বরের সাথে চুটিয়ে সংসার, এক সন্তান | স্বামীর সাথেই সামলাতেন চপের দোকান! তবে হঠাৎই ছন্দপতন হয় বছরখানেক আগে! স্বামী মারা যান! তার পরেও থেমে থাকেননি অনিতা। সমাজের সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে আজ অনিতা নিজেই বানিয়ে ফেলেছে স্ট্রিট ফুডের দোকান । মনে অদম্য জেদ ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করার! নিজে স্বপ্ন দেখেছিলেন পুলিশ অফিসার হবেন বা শিক্ষিকা হয়ে ছাত্র-ছাত্রী পড়াবেন । অনিতা যখন স্কুলে পড়তেন দিদিমনিরাও তাঁর হাইট দেখে বলেছিল, ‘ লেগে থাক তুই পুলিশ হবি ’, কিন্তু সে স্বপ্ন ধাক্কা খেয়েছে। ধাক্কা দিয়েছে জীবন। জীবনের মার ফিরিয়ে দিতে আজ স্ট্রিট ফুডের দোকানকে কেন্দ্র করেই ছেলেকে বড় পুলিশ অফিসার গড়ার স্বপ্ন দেখে অনিতা । বিএ সেকেন্ড ইয়ারে পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়ে যায় অনিতার! তবে এখনও সুযোগ খুঁজছেন পড়াশোনা শুরু করার ।
শহর বহরমপুরের রেজাউল করিম সরণী বলতেই প্রথম যে ছবিটা চোখের সামনে ভাসে, পরপর সার দিয়ে স্ট্রিট ফুডের দোকান। কী নেই সেখানে, রোল,কাবাব থেকে শুরু করে কবিরাজি, ফিসফ্রাই,ফিশ ফিঙ্গার, মোমো সবই পাওয়া যায় ; বহরমপুরের তরুণ প্রজন্মদের আড্ডা দেওয়ার একটা অন্যতম জায়গাও বলতে পারেন এই “ফুড স্ট্রিট” । আপাতত এই ফুড স্ট্রিটেই স্ট্রিট ফুডের দোকানে পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনিতা ।
লক্ষ্য একটাই সৎপথে প্রতিষ্ঠিত হওয়া । আত্মবিশ্বাসী অনিতা জানাচ্ছেন, “ আমার লড়াইটা অন্যরকম হলেও আজকের দিনে মেয়েরা, নিজের মতো করে যে কোন পেশাই বেছে নিতে পারেন, সেটা স্ট্রিট ফুডের দোকান হলেও কোন সমস্যা নেই! ”
আগে চুঁয়াপুর কদমতলাতে স্বামীর সাথে বিভিন্ন রকমের তেলেভাজা বিক্রি করতেন অনিতা । স্বামীর কাছেই শিখেছেন কাজ। আজ নিজের মতো করেই তৈরি করেছেন এই দোকান। এর পাশাপাশি অনিতা আরো জানিয়েছেন,“ একটা মেয়ে যখন নিজের পায়ে সৎ পথে দাঁড়াতে পারে, স্বাবলম্বী হতে পারে ; তাকে চট করে কেউ টলাতে পারে না। আমার মত আরও যারা মেয়েরা রয়েছে, তারাও এগিয়ে আসুক, নিজে কিছু একটা করুক। সেটা স্ট্রিটফুড হোক বা চপের দোকান। নিজের মতন করে নিজের ব্যবসা শুরু করুক ”।
শহরের বহু খাদ্যপ্রেমী বলছেন,“ রেজাউল করিম ফুড স্ট্রিটের স্ট্রিট ফুড বরাবরই অসাধারণ, তবে অনিতার তৈরি কবিরাজি, কলকাতার বড় বড় রেস্টুরেন্টকেও হার মানাবে”।