মুর্শিদাবাদে লোকসভা নির্বাচনে শাসকের পক্ষে, ইঙ্গিত ইমামদের

Published By: Madhyabanga News | Published On:

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ উত্তর ২৪ পরগনায় দেগঙ্গার কর্মীসভা থেকে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তিনি ওই সভা থেকে বলেন, ” সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণ বাড়ানো হয়েছে। আরও কিছু করব। তৃণমূল কোনও মানুষে ভেদাভেদ করে না। সব মানুষকে ভালবাসে। আমার কাছে সব মানুষ প্রিয়। সব মানুষকে নিয়ে ঘর করতে পারি। ধর্ম মানে সকলকে কাছে টেনে নিয়ে সকলকে ভালবাসা, সকলকে আমন্ত্রণ।”

বিজেপিকে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে আক্রমণ করে সংখ্যালঘুরা তৃণমূলের পাশেই আছে বলে ওই কর্মীসভায় দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কেউ যদি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে তাদের বলব বিজেপির টাকা নিয়ে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে যাবেন না। মনে রাখবেন ক্ষমতায় আমরাই থাকব।” ওইদিনই বহরমপুর জেলাপরিষদের আলোচনা কক্ষে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের পাশে থাকার বার্তা দিলেন মুর্শিদাবাদের ইমামরা। পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ জেলায় লোকসভা নির্বাচনে তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষেই থাকবেন বলে ইঙ্গিত তাঁদের।কিছুদিন আগে মুর্শিদাবাদ জেলায় ইমামদের সংগঠনের জেলা সভাপতির পদ থেকে নিজামউদ্দিনকে সরিয়ে ওই পদে আব্দুর রেজ্জাককে বসিয়ে ছিল তৃণমূল।

সভাশেষে ইমামরা। নিজস্ব চিত্র

সূত্রের দাবি, দলের সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি ইমাম সংগঠনের এই সদস্যদেরই একাংশ। যা নিয়ে জলঘোলা কম হয় নি জেলায়। পরে অবশ্য সিদ্ধান্ত বদলে ফের নিজামউদ্দিনকেই ওই পদে বসানো হয়। সেই বিতর্ক সরিয়ে রেখে মঙ্গলবার ইমামদের জেলা সম্মেলনে সেই ইমামরাই তৃণমূলের পক্ষেই আছে বলে দাবি করেন জেলা নেতাদের একাংশ।

তবে এর জন্য দলের বর্তমান জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার ও চেয়ারম্যান রবিউল আলম চৌধুরীকে কৃতিত্ব দেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তাঁর দাবি,” হঠাৎ করে শাওনী সিংহরায় নিজামউদ্দিনকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। ইমামরা তাঁদের ভালমন্দ নিজেরা বোঝেন। ইমামদের যারা কাছের মানুষ তাদেরই এই নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। নিজামুদ্দিন বিশ্বাস এখন রাজ্য সম্পাদক, জেলার বিভিন্ন ইমামদের তিনি নেত্বত্ব দেন।” এদিন তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলায় এত মুসলমান বাস করে না। সেই জেলায় ইমাম সংগঠন আরও মজবুত করা উচিত। এঁরা শাসকদলের পক্ষে কাজ করেন। মুসলিম সমাজেও এদের অনেক গুরুত্ব।” ইমামদের পক্ষে টেনে তিনি বলেন,” আমরা জেলা ইমামদের সঙ্গে আছি। ভবিষ্যতেও থাকব। তৃণমূল দলকে আরও শক্তিশালী করা যাবে।”

একই দাবি করেন জেলা সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি নাজিমুদ্দিন মন্ডল। তিনি বলেন, ” সংখ্যালঘু সেল, ইমাম সংগঠন যৌথভাবে এই জেলায় কাজ করে। জেলার ৭৫ শতাংশ মানুষ মুসলিম। তাঁদের প্রতিনিধিত্বই আমরা করি। আমরা চাই ২০২৪ এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে কেউ মুসলিম ভোট ভাগ করতে যেন না পারে।” ইমামদের সংগঠনের জেলা তথা রাজ্য সম্পাদক নিজামুদ্দিন বলেন, “আমরা নিরপেক্ষ। কিন্তু সরকারের ভাল কাজের পক্ষে থাকব। লোকসভা নির্বাচনে ধর্ম নিরপেক্ষ যে দল যেখানে শক্তিশালী সেখানে আমরা তাদের সমর্থন করব।”

জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “ইমামদের সম্মেলনে রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি তাঁদেরকে সমাজের কাছে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। ইমাম, পুরোহিত এরা ধর্ম নিয়ে কাজ করেন। সেখানে তাঁরা যদি রাজনীতির নেতাদের মতো কথা বলেন তাহলে তাঁদের নিজেদের কাজের বদলে রাজনীতির প্রচারক হওয়াই উচিত।” সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ বদরুদ্দোজা খান বলেন, ” ইমামদের ওই সংগঠন তৃণমূল পরিচালিত। তাই শাসক দলের পক্ষে থাকার কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক। ওদের কোনও নিরপেক্ষতা নেই। উন্নয়নের কথা সরিয়ে রেখে একদিকে বিজেপি অন্যদিকে তৃণমূল ধর্মের রাজনীতি করছে।”