Imagin Green Journalism: স্কুল পড়ুয়ারাই এবার গ্রিন জার্নালিস্ট, বহরমপুরে শুরু প্রশিক্ষণ

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মধ্যবঙ্গ নিউজ ডেস্কঃ পরিবেশ বাঁচাতে এবার স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরাই হয়ে উঠবে সাংবাদিক। গ্রিন জার্নালিস্টরা রক্ষা করবে সবুজ, পরিবেশ, চারপাশের বিভিন্ন প্রাণী। মুর্শিদাবাদে গ্রিন জার্নালিস্টদের প্রশিক্ষণ শুরু করল ইমাজিন কমিউনিটি মিডিয়া।
রবিবার বহরমপুরে জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উদ্বোধন হয় গ্রিজ জার্নালিস্ট প্রশিক্ষণের। সোমবার বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে প্রশিক্ষণের প্রথমদিনে অংশ নিলেন বহরমপুরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা।
এদিন গ্রিন জার্নালিজম নিয়ে আলোচনা করেন পরিবেশকর্মী উন্মেষ মিত্র এবং অর্ধেন্দু বিশ্বাস । ছাত্রছাত্রীদের সাথে পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন উন্মেষ। পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর। তিনি বলেন, এই প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরা পরিবেশ রক্ষায় সাহসী ভূমিকা নেবেন।
স্নেহাশিস শুর বলেন , প্রকৃতিকে রক্ষায় শুরু হোক দ্বিতীয় স্বাধীনতার যুদ্ধ । প্রতিটা ছাত্র-ছাত্রী হোক সবুজের সেনানী। ইমাজিন কমিউনিটি মিডিয়ার উদ্যোগে সোমবার বিকেলে বহরমপুর রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে গ্রিন জার্নালিজমের প্রশিক্ষণ শিবিরে ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ইমাজিন কমিউনিটি মিডিয়া তোমাদের জায়গা দিচ্ছে। তোমাদের নিজেদেরকে সচেতন হতে হবে। সাংবাদিকতার কাজের সঙ্গে তোমরাও শামিল হয়ে গেলে। পৃথিবীতে উষ্ণতা বাড়ছে। সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস বাড়ছে। গ্রিন হাউস গ্যাসে আগুন জ্বলছে।

গ্রিন জার্নালিজম কর্মশালায় শহরের বিভিন্ন স্কুল থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করলেন বিশিষ্টরা। প্লাস্টিক বর্জন করতে হবে, জলাভূমি ভরাট বন্ধ করতে হবে, দূষণ কমাতে হবে, অরণ্য বাড়াতে হবে। পরিবেশ বাঁচাতে হবে। আগামী প্রজন্ম যাতে সুস্থ, সুন্দরভাবে এই পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে তার জন্য সবার এই দায়িত্ব নিতে হবে। আর এই কাজে ছুটে যাবে ছাত্র-ছাত্রীরাই। তারা সবুজ সাংবাদিক। তারা কৃত্রিম নগর সভ্যতায় প্রকৃতিকে রক্ষা করতে এই যুদ্ধের সেনা। অনুষ্ঠানের বার্তা উঠে এল,। বাস থেকে, গাড়ি থেকে রাস্তার মধ্যে প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে দিতে দেখলে কাউকে হাতটা চেপে ধরুক ছাত্র-ছাত্রীরা । তবে তারা টের পাবে এটা অন্যায়।

আলোচনা করছেন উন্মেষ মিত্র

পরিবেশবিদ, গবেষক, সাংবাদিকরা এখন পৃথিবীর সামনে বিপন্নতার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। কর্মশালা চলাকালীনই শুভঙ্করের মতো ছাত্র সাহস করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, প্রকৃতি রক্ষায় সে রুখে দাঁড়াবে। সেই সময় মঞ্চ থেকে মোক্ষম প্রশ্ন , বাধা পেলে কি করবে? তোমরা বয়সে ছোট। ওরা নিশ্চয়ই বড় বড় লোক। কার্যত তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ছাত্রটি জানিয়ে দিল, এলে ভিডিও করে তুলে দেবো । আপনারা সাহস দিচ্ছেন। ছাত্রটির ওই দৃপ্তকন্ঠে শুনে সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানাতে করতালিতে ভরে ওঠে প্রেক্ষাগৃহ। তৈরি হল সবুজ বাঁচাতে সাংবাদিকতার শপথের মুহূর্ত। সেই মন্ত্রেই ছাত্র-ছাত্রীরা এগিয়ে চলল গ্রিন জার্নালিজমে।

এদিন ভারতবর্ষের অন্যতম পিছিয়ে পড়া জেলা মুর্শিদাবাদ থেকে গ্রিন জার্নালিজমের উদ্যোগ ইমাজিন কমিউনিটি মিডিয়া সামনে নিয়ে এল। এদিন ওই প্রশিক্ষণ পর্বের সূচনা হয়। ইমাজিন মিডিয়ার এই অগ্রণী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য পেশ করেন গবেষক উন্মেষ মিত্র। তিনি অডিও ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশন করে দেখালেন, কীভাবে বন্যায় ডুবে যাচ্ছে প্রতিবেশী পাকিস্তান। শকুনের মতো পাখি চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। কিংবা ইউরোপে অগ্নিকাণ্ড। যার অন্যতম কারণ গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন । গোরাবাজার ইশ্বরচন্দ্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক ড. জয়ন্ত দত্ত আশঙ্কার কথা শুনিয়ে প্রিয় ছাত্র ছাত্রীদের সামনে বললেন, আজ থেকে 30 বছর পরে এমন দিন আসবে অক্সিজেনের গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে ঘুরতে হবে। এই দূষণ থেকে প্রকৃতিকে রক্ষা আমাদের করতেই হবে।
অনুষ্ঠানে গ্রিন জার্নালিজমে অংশ নেয় প্রায় শ’খানেক ছাত্র-ছাত্রী। মহাকালী পাঠশালা, চুঁয়াপুর বিদ্যানিকেতন, কৃষ্ণনাথ কলেজিয়েট স্কুল, ঈশ্বরচন্দ্র ইনস্টিটিউশন, কে এন কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নিয়েছিল। প্রথমেই তাদেরকে একটি করে ফর্ম পূরণ করতে দেওয়া হয়। সেখানে তারা কেন গ্রিন জার্নালিস্ট হতে চায় তা নিজের ভাষায় লেখে। বেশ কয়েকজন স্কুল শিক্ষক, শিক্ষিকাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে ‘অমৃত কথা’ নামে একটি নাটক উপস্থাপিত হয়। যে নাটকের শেষে দেখা যায় ভিখারির কাঁধে বয়ে বেড়াতে হয় দেশের স্বাধীনতার পতাকা। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের হয়তো অনেকে পাগল মনে করছে। যে নাটকের অনেকটা অংশ কথাহীন। ওই নীরবতা বাঙময় হয়ে একবার মনে করিয়ে দিল, স্বাধীনতার আত্মত্যাগ আমরা কতটা মনে রেখেছি। নাটক শেষে মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম সংস্কৃতির মুখ প্রদীপ ভট্টাচার্য মঞ্চে উঠলেন। অডিটোরিয়ামে আলো জ্বলে উঠলো। করতালিতে ভরে গেল প্রেক্ষাগৃহ । সবুজ বাঁচানোর শপথের খুশিতে আলো জ্বললো কচি সবুজ স্কুলপড়ুয়াদের মুখেও।