ঋত্বিক দেবনাথ, বহরমপুরঃ মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুর। এই শহরের বুকেই গড়ে উঠেছে প্রশাসনিক ভবন থেকে সমস্ত কিছুই। অর্থাৎ সমস্ত জেলার চাপ থাকে এই শহরের বুকে। সকালে ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে বিকেলে ঘুরতে যাওয়া পর্যন্ত সব বিষয়েই জেলার মানুষকে এই শহরের ওপর দিয়ে যেতে হয়। এবং বহরমপুরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় থাকে মানুষের ভিড়।
ফলে শহরের বিভিন্ন জায়গাতে ফুটপাত দখল করে হোক কিংবা সরকারি জায়গা দখল করে সেখানেই অবৈধভাবে তৈরি হয়েছিল নানান দোকান। এবং সেই সমস্ত দোকানগুলির কারণেই বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় যানজট সর্বদা। এই যানজট কাটানোর জন্যে বহরমপুর পৌরসভা আগস্ট মাস থেকে বারবার নোটিশ পাঠাতে থাকে। যখন কোনরকম সুরাহা মেলেনি সেই সময় অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে তৎকালীন মহকুমা শাসক প্রভাত চ্যাটার্জি তত্ত্বাবধানে, সমস্ত শহর জুড়ে প্রায় ১০০টির ওপর অবৈধভাবে তৈরি হওয়া দোকান বুলডোজার নামিয়ে সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন এলাকা। এখানেই শেষ না অবৈধ নির্মাণের গাড়ি। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বহরমপুর রেল স্টেশনের দিকে যাওয়ার পথে বহরমপুর পুলিশ থানার আগে প্রায় ১৫টি মতন স্থায়ী এবং অস্থায়ী দোকান তৈরি হয়েছিল। বেশিরভাগ খাওয়ার হোটেল বা ছোট ছোট সাইবার ক্যাফে। যেখানে হরদম ভিড় থাকতো থানায় আসা মানুষের এবং বাইরে থেকে আসা মানুষদেরও। এবং সবচেয়ে বড় বিষয় থানা থেকে ঢিল ছোড়ার দূরত্বেই এইসমস্ত দোকান। পাকা একতলা দোকান, মেঝে সানমাইকার এছাড়াও ভেতরে রাখা বড়বড় জেরক্সের মেশিন। একপ্রকার সাজানো গোছানো ছিল এই সমস্ত দোকান। কিন্তু আরও প্রশাসনের টনক তখন নড়ে যখন তারা দেখতে পায়। থানা গায়ে লাগোয়া ফিশারির যে পুকুর রয়েছে তার বেশকিছুটা অংশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং তার ওপর কলম তুলে পেছনের দিকে সমস্ত দোকানদার নিজেদের দোকান বাড়িয়ে ফেলেছেন। আণ্ডারগ্রাউন্ডে তৈরি হয়ে গোডাউন। যেখানে চলত অবৈধ কাজ। এই সমস্ত দেখেই টনক নড়ে প্রশাসনের। সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে দেওয়া হল সমস্তটা।
স্থানীয় দোকানদার নেখতার সেখ জানান, “আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমি একজনের কাছ থেকে এই জায়গাটি কিনেছিলাম। সেই সময় সে দাম নিয়েছিল ছয় লাখ টাকা। আমাকে কাগজ দিয়েছিল। কিন্তু পরে জানতে পারলাম এটা সরকারের জায়গা। কেও কিছু বলেনি এতদিন তাই কোনরকমের চিন্তা ছিলনা। কিন্তু হঠাৎ সকালে এসে এইটা দেখব সেটা বুঝতে পারিনি।”
এমনই অবস্থা অন্যান্য দোকানদারেরও। কেও কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখে ভেঙে ফেলা হয়েছে তাঁদের দোকান। নিজেরাও জানতেন অবৈধ ভাবে তৈরি করেছিলেন এই দোকানগুলি। একপ্রকার একটি রাজনৈতিক চাপানউতোরও সৃষ্টি হয়েছে। কারণ পাশেই যে পৌরসভা নির্মিত দোকানগুলি রয়েছে সেইগুলিও নাকি অবৈধ দাবি দোকানদারদের। কী হবে এই সমস্ত দোকানদারদের এটাই এখন দেখার বিষয়।