বিড়ি বাঁধব না স্কুলে যাবো ? জঙ্গিপুরের শিশুদের অধিকার সোনার যেন পাথরবাটি

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মেহেদি হাসানঃ সকাল সাড়ে সাতটা। জঙ্গিপুর মহকুমার আহিরণ গ্রামে দাঁড়িয়ে আছেন আপনি। গ্রামের স্কুলের পাশেই একটা চায়ের দোকান । সেই দোকান ডানদিকে রেখে, বাঁ দিকে এগিয়ে যান। আপনার সাথে দেখা হবে নার্সিনা সেখের। বয়স ১০। ক্লাস সেভেন। কিন্তু সেসব নামেই। স্কুলের খাতাতেই লেখানো আছে না। প্রায় দুই মাস স্কুলেই যায় না নার্সিনা। কেন ?

উত্তর দেবে ফুটফুটে মেয়েটা, বিড়ি বাঁধতে হবে তো। স্কুলে যাবো কখন ! কথা এগতেই নার্সিনা জানিয়েছে, বাড়িতে বাবা অসুস্থ। মা বিড়ি বেঁধেই সংসার চালান। মায়ের সাথে বসে বিড়ি না বাঁধলে চলবে না সংসার।
নার্সিনার মা জুম্মাতারা বিবিরও সোজা কথা, সারাদিন বিড়ি বেঁধেও এক হাজার বিড়ি বানানো যায় না। বাড়ির বাচ্চাদের সাথে নিয়েই কাজ করতে হয়। মজুরির যা অবস্থা। সবাই মিলে বিড়ি না বাঁধলে খাবো কী ?
জঙ্গিপুর এলাকায় বিড়ি বেঁধে সংসার চালান প্রায় ৯ লক্ষ মহিলা। বাড়ির পুরুষরা অধিকাংশই পরিযায়ী শ্রমিক। তারা জানাচ্ছেন কোভিডের পরে কাজ কমে গিয়েছে। অনেকের কমে গিয়েছে মজুরিও। তাই বিড়ির উপরই অনেকটা নির্ভর করতে হচ্ছে।

বাসুদেবপুরের ফুলন বিবি জানিয়ছেন, এখন এক হজার বিড়ি বেঁধে ১৫০ টাকা পাওয়া যায়। তাও সপ্তাহে প্রতিদিন কাজ পাওয়া যায় না। এভাবে কি সংসার চলে ? “আমরাও চাই ছেলেরা পড়ালেখা করুক। বড় হোক। চাকরি করুক। কিন্তু উপায় কী বলুন ?”, প্রশ্ন ফুলন বিবির।
তবে বিড়ি বাঁধাতে বাঁধতে স্কুলের সাথে দূরত্ব বাড়াচ্ছে শিশুরা। অনেকেই স্কুল ছাড়ছেন , মেনে নিচ্ছেন শিক্ষক শিক্ষিকারাও। কেন্দ্রীয় সরকারের স্কুলশিক্ষা ও সাক্ষরতা বিভাগের ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন বা ইউডিআইএসই-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে মাধ্যমিক স্তরে স্কুলছুটের সংখ্যা গড়ে ১৪.৬% । ছেলেদের মধ্যে স্কুল ছুটের হার ১৪.৯%, এবং মেয়েদের মধ্যে স্কুল ছুটের হার ১৪.২%। বিড়ির বাঁধার কাছে যুক্ত হওয়ায় বিড়ি মহল্লার শিশুদের সাথে দূরত্ব বাড়ছে স্কুলের। অনেকেই স্কুলে নাম লিখিয়ে রাখলেও, স্কুলে যাওয়ার সময় পাচ্ছে না।

ছাবঘাটি কেডি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৌশিক দাস বলেছেন, স্কুল ছেড়ে শিশুরা পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। কেউ বিড়ি বাঁধছে। এটা খুবই উদ্বেগের