Humayun Kabir বর্ণময় হুমায়ুন। কতদূর পড়াশোনা ? সম্পত্তি কতো ?

Published By: PRIYANKA DEB BISWAS | Published On:

Humayun Kabir  ফের বিতর্কের শীর্ষে ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির। বাংলাদেশ সফর থেকে ফিরে লাগাতার নিশানা করছেন দলের নেতাদের। জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার থেকে দলের শৃংখলা রক্ষা কমিটি কেউই হুমায়ুনের নিশানার বাইরে থাকছেন না। কিন্তু জানেন কি হুমায়ুন কবিরের রাজনৈতিক জীবন কেমন ? চলুন দেখে নিই।

Humayun Kabir কতদূর পড়াশোনা ? সম্পত্তি কেমন ?

হুমায়ুন কবির নির্বাচনী এফিডেফিটে জানিয়েছেন তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাশ। ২০১৩ সালে  মহারাষ্ট্রের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর ওপেন স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন তিনি।  ( তথ্য  সূত্রে Association for Democratic Reforms (ADR))

হুমায়ুন কবিরের নামে রয়েছে ১০ টি  মামলা। তাঁর মধ্যে রয়েছে খুনের চেষ্টা , কিডন্যাপিং , সরকারি আধিকারিককে কাজে বাধার মতো অভিযোগ। তবে এখনও অবধি কোনও মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন নি তিনি। ( তথ্য  সূত্রে Association for Democratic Reforms (ADR))

আরও পড়ুনঃ Humayun Kabir 2025 হুমায়ুনকে মাঠ ছাড়তে নারাজ নেতারাও

২০২১ সালের নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী হুমায়ুন কবিরের সম্পত্তির পরিমাণ ৩ কোটি ৭ লক্ষ ৪২ হাজার ৩০০ টাকা।  ২০১৯ সালের মোট সম্পত্তি ছিল ৩ কোটি ৬৩ লক্ষ ৮ হাজার ৩৭৪ টাকা। ২০১৬ সালে তাঁর ঘোষিত সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৯৬ লক্ষ ৫৪ হাজার ৮২৬ টাকা। ২০১৩ সালে রেজিনগর উপনির্বাচনের সময় সম্পত্তির পরিমাণ ছিল  ২ কোটি ৩৬ লক্ষ ৪৩ হাজার ১৬৫ টাকা। ২০১১ সালে এই সম্পত্তি ছিল ১ কোটি ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪৮৬ টাকা।( তথ্য  সূত্রে Association for Democratic Reforms (ADR))

Humayun Kabir বর্ণময় চরিত্র হুমায়ুন কবির

মুর্শিদাবাদ জেলার রাজনীতিতে এক বর্ণময় চরিত্র হুমায়ুন কবির। কংগ্রেস দল থেকে রাজনীতিতে উত্থান।  জেলা পরিষদ সদস্যও  হন। অধীর চৌধুরীর Adhir Chowdhury  অনুগামী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।  ২০১১ সালে  রেজিনগর থেকে কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক  হন । তবে এরপর কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবণতি ঘটে। ২০১২  সালের ২০   নভেম্বর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন হুমায়ুন কবির। সেবার   বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফাও  দেন তিনি । সঙ্গে সঙ্গেই হুমায়ুন কবিরকে  প্রতিমন্ত্রী করে তৃণমূল । প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী হন হুমায়ুন কবির ।  প্রতিমন্ত্রী থাকতে গেলে তো জিতে আসতে হবে। তাই ২০১৩ সালে  তৃণমূলের টিকিটে উপনির্বাচনে লড়েন হুমায়ুন কবির। সেবার  উপনির্বাচনে হেরে যান হুমায়ুন কবির। কংগ্রেসের টিকিটে জিতে রেজিনগরের বিধায়ক হন রবিউল আলম চৌধুরী। তৃতীয় হন হুমায়ুন কবির।  হুমায়ুনের  যায় মন্ত্রিত্ব ।  সেবার বেশদিন তৃণমূলে থাকেন নি।

Humayun Kabir মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার পর জেলা তৃনমূলের নেতা হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।  তবে শুরু হয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে মনোমালিন্য শুরু হয় হুমায়ুনের । ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হন হুমায়ুন কবির।  তিনি বারবার বলেছেন,  ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে বিনা নোটিশে দল থেকে বহিষ্কার করা  হয়েছিল।  ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রেজিনগর আসন থেকে  নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড়ান হুমায়ুন । সেই আসনে প্রার্থী দেয় কংগ্রেস, তৃণমূল দুই দল।   তারপর আবার যোগদান করেন  কংগ্রেসে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের হয়ে ময়দানেও নেমেছিলেন হুমায়ুন কবির।  কংগ্রেসে মন না টেকায় ২০১৮ সালের জুন মাসে  বিজেপিতে যোগদান করেন ।

Humayun Kabir  ২০১৯  সালের লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে বিজেপির’র টিকিটে লড়েছেন হুমায়ুন। তবে  ২০১৯ এর ডিসেম্বরে আবার বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেন তিনি । মাস আটেকের বিরতির পর আবার যোগা দেন  তৃনমূলে। হুমায়ুন কবিরের বার বার এই রং বদল- নিয়ে বিরোধী শিবিরে ওঠে সমালোচনার ঝড়।   তবে সেসবে পাত্তা দেন নি হুমায়ুন কবির। ২০২১ সালে ভরতপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করে তাঁকে। কংগ্রেসকে হারিয়ে জেতেন হুমায়ুন। কিন্তু তারপরেও হুমায়ুনকে সামলাতে নাজেহাল তৃণমূল। লোকসভা নির্বাচনে ইউসুফ পাঠানকে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন হুমায়ুন কবির। পরে যদিও ইউসুফের ভোট প্রচারে শামিল হয়েছিলেন।

২০২৫ এর শীতের আগে ফের গরম গরম ভাষণে নেতাদের বিরুদ্ধেই  ময়দানে হুমায়ুন ।  ১৪ অক্টোবর  ভরতপুরে  হুমায়ুন কবির বিজয়া সম্মিলনী মঞ্চ   বলেন, “আমার ভাই অপূর্ব সরকারকে বলব নিজের চরকায় একটু বেশী তেল দেন ভাই। আপনার জায়গাটাও সুরক্ষিত রাখার একটু বেশী চেষ্টা করুন। নাহলে আগামি দিনে বিপদে আপনি পড়বেন” ।

Humayun Kabir

Humayun Kabir ভাইফোঁটার দিনও ফুঁসেছেন হুমায়ুন । বলেছেন, ”  ২০২৩ সাল থেকে আমার দুজন ব্লক সভাপতি সরাতে। ২০২৩ সাল থেকে বলে আসছি।  কতবার চিঠি দিয়েছি, চিঠি দিয়েছি ।  নেতৃত্বকে কতবার বলেছি।  অথচ চোরের মায়ের বড় গলা বলে প্রবাদ বাক্য আছে”  ।  এরপর দলের নেতাদের সঙ্গে পুলিশের যোগ নিয়েও মুখ খোলেন হুমায়ুন। তারপরই বলেছেন, ”  তাহলে বের করে দাও, আমি তো চাইছে বের করে দেওয়া হোক। তারপর বোঝাব এই জেলায় রাজনীতি কাকে বলে। যাদের নেতা বানিয়ে রেখেছে তাদের একেক জনের কী পজিশন আর কোথায় এসেছে। তাদেরকে কতটা সাপোর্ট দিয়ে কিভাবে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। এক নম্বর শ্রীমান অপূর্ব সরকার, শ্রীমান ভীষ্মদেব কর্মকার, শ্রীমান নিলিমেস বিশ্বাস, শ্রীমান কাউসার হোসেন, শ্রীমান ফতেমা বিবি, শ্রীমান নাজমূল মিঞা। এইসব নেতাদের ছবি দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখছে ২৬ এর ভোটে অটোমেটিক মানুষ ভোট দিয়ে দেবে। এদের গঠন দেখে,  চলা ফেরা দেখে মানুষ ভোট দিয়ে দেবে ” ।

Humayun Kabir দলের শৃংখলারক্ষা কমিটি হুমায়ুন নিয়ে নাজেহাল। জানা গিয়েছে,  হুমায়ুন ইস্যুতে বৈঠকে বসতে চলেছে তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান হবে মুখ্যমন্ত্রীকে । এনিয়ে ২৫ অক্টোবর  হুমায়ুন কবির বলেন, ” অনেক অতীত  হয়ে গেছে। ২০২৪ এর নভেম্বর মাসে প্রথম এক পাতার শোকজ নোটিশ করেছিল দল বা দলের শৃঙ্খলা কমিটি। সেই শোকজের ৩ পাতার জবাব দিয়েছিলাম। সেই উত্তরে তারা সন্তুষ্ট হল না খুশি হল তাঁর সদুত্তর আজ পর্যন্ত পায়নি। দ্বিতীয় শোকজের উত্তর দিয়েছিলাম সেটারও উত্তর পায়নি। জুন মাসে শেষ ওয়ার্নিং।  নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কড়া নোটিশ বলা হয়েছে। আমাকে হাতে দেওয়ার আগেই সাংবাদিকদের হাতে দিয়ে দিয়েছেন  শৃঙ্খলা কমিটির কনভেনার  শোভনদেব বাবু। আসামীকে নোটিশ দেওয়ার আগেই তা সাংবাদিকদের দিয়ে দিলেন। দু-দুবার শোকজের উত্তর দেওয়ার পর যখন আমি কোন সদুত্তর পাইনি তখন আমি আর তৃতীয়  ওয়ার্নিং  নোটিশের প্রয়োজন মনে করিনি” । তাঁর স্বভাবসিদ্ধ বয়ান,  ” আবার নোটিশ আসলে দেখা যাবে, আগাম কিছু বলব না। কি হবে, আমি আগামী কাল বেঁচে থাকবো কিনা জানি না। কাজেই কে কখন শোকজ লেটার দেবে, তাঁর সময়সীমা কী দেবে, তাঁর কি উত্তর হবে তারপরে ভেবে দেখবো” ।

Humayun Kabir হুমায়ুন কবিরকে মাঠ ছাড়তে নারাজ তৃণমূলের বাকি নেতারাও। বলছেন,  ফাঁকা মাঠে গোল হবে না। হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ময়দানে তৃণমূলের এক ঝাঁক নেতা। হুমায়ুন কবিরের এত অভিযোগের পরেও সম্প্রতি প্রকাশ্যে  মুখ খোলেন নি তৃণমূল জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার Apurba Sarkar । যদিও  ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল নেতাদের ডিফেন্সের টিম।