নিজস্ব সংবাদদাতা, কান্দিঃ বেহাল রাস্তায় ঢোকে না অ্যাম্বুলেন্স, কাঁধই ভরসা রোগীর। কান্দি ব্লকের হিজল গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানীপুর গ্রামের রাস্তার এমনই অবস্থা। কিন্তু রাস্তা বললে পরক্ষণেই ভাঙবে ভুল। রাস্তার সজ্ঞা যেন এখানে এসে থমকে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের মানুষজন চলাচল করার জন্য মাটির পথকে রাস্তা বানিয়ে নিয়েছেন। ওই পথ দিয়েই ঢোকে গরুর গাড়ি, কখনও ট্রাক্টর। তার জেরে মাটির রাস্তার এমন দশা যে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতেই ভয় পায়। রোগী তো দূরঅস্ত। অথচ সময় আসলেই নির্বাচন হয়ে যায়। কেউ কথাও দেয় না, ফলে কথা রাখারও দায় থাকে না। কথাতেই আছে না কাঁদলে খাবার জোটে না। এবার ওই রাস্তায় খাটিয়া বানিয়ে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার ভিডিও করে সমাজমাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। মুহুর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
এলাকাবাসী বাসেদ সেখ বলেন, ” যাঁকে ভিডিওতে দেখছেন তিনি প্যারালাইসিসের রোগী। বাধ্য হয়ে তাকে তিন কিলোমিটার রাস্তা কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয়েছে।” এরপর তিনি যা বললেন তা রীতিমতো ভয়ঙ্কর। বাসেদ বলেন, ” অনেক প্রসূতি মা মারা গিয়েছে এই রাস্তা দিয়ে তাদের কাঁধে করে নিয়ে গিয়েছে। আমরা না পেয়ছি গাড়ি, না পেয়েছি টোটো অটো।” তিনি আরও বলেন, ” ভোটের সময় আসে আর বলে রাস্তা করে দেব। হয় আর না। গ্রামে এই রাস্তার কোনও বিকল্প রাস্তা নেই। প্রশাসনের অবহেলাই এই গ্রামের ভবিতব্য।” অসুস্থ ওই বৃদ্ধের ছেলে সের মহম্মদ বলেন, ” এমনিতে জল কাদায় প্যান্ট পরে চলা যায় না ওই রাস্তায়।
বাবার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে বাইকে করে এই শুকনো অবস্থাতেও নিয়ে যেতে পারতাম না। তাই মানুষজনের কাঁধে করে নিয়ে যেতে হল। এই রাস্তা তৈরি হলে আমার বাবার মতো অনেক মানুষকে এতটা ঝুঁকি নিয়ে যেতে হয় না। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। আমাদের কথার গুরুত্ব নেই।” এই গ্রামের হাল ফেরাতে গিয়ে কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার অবশ্য ৩৪ বছরের বাম শাসনকালের প্রসঙ্গ টেনেছেন। তিনি বলেন, “৩৪ বছর আগে গ্রাম বাংলার রাস্তা কেমন ছিল আমরা যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তারা জানি। গত বারো বছরে এই কান্দিতে প্রায় ৯০ শতাংশ রাস্তা হয় পিচের না হয় কংক্রীটের।” সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কথা মনে করিয়ে বিধায়ক বলেন, ” চোখের জল, নাকের জল আর বন্যার জল তার নাম হিজল। ২০০০ সালে আমরা ওখানে নৌকা করে যেতে হয়েছিল।
ওই এলাকায় যত রাস্তা আছে তার ৮০ শতাংশ কাজ করে ফেলেছে পঞ্চায়েত। কান্দি পঞ্চায়েত সমিতি একশো দিনের কাজ প্রকল্পে ওই রাস্তা মাটির রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। কংক্রীটের রাস্তা তৈরি হবে বলে ওই রাস্তার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একশো দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র বছর দুয়েক হয়ে গেল। কাজটা হবে কী করে?” তবে জেলা পরিষদের সঙ্গে মাস ছয়েক আগে এই রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার কথা হয়েছে বলে অবশ্য দাবি করেছেন বিধায়ক। পাশাপাশি তিনি গ্রামবাসীকে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে বলেছেন। রাস্তা হবেই। কবে হবে? তা অবশ্য দিনক্ষণ জানাননি এলাকার বিধায়ক।