Health Benefits of Jamun কর্মসূত্রে হাসিনা বিবি রোজ বেলডাঙা স্টেশন থেকে বহরমপুর আসেন। গরমে ঘেমে, হাঁপাতে হাঁপাতে স্টেশনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে। টোটো ধরে যখন লালদীঘির ধার দিয়ে যান। তখন তিন দেখতে পান তিন থেকে চারজন ঝুড়ি ভর্তি শুধু জাম নিয়ে রোজ বসছেন ইদানীং। হাসিনার বাবা ডায়াবেটিসের রোগী। তাই পুষ্টিবিদের পরামর্শ মতো জামের খোঁজ চলে প্রায়ই। দেখতে পেয়েই তিনশো গ্রাম কিনে ব্যাগে পুরে নিয়েছেন তিনি।
তবে হাসিনা জাম খেতে মোটেই ভালবাসেন না। তার চেয়েও বড় কথা, এত দিন তাঁর ধারণা ছিল, শুধু মাত্র রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যেই বোধ হয় জাম খেতে হয়। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা তো বটেই, শরীরের আরও নানা উপকারে লাগে জাম।
মুর্শিদাবাদে গ্রীষ্মকালে নানা ধরণের ফলমূল দেখা যায়। প্রবাদ রয়েছে, জ্যৈষ্ঠমাস মাসে মধু মাস। কারণ এই মাসে বিভিন্ন ধরনের রসাল ও মিষ্টি, সুগন্ধি ফল উঠতে শুরু করে। যেমন- আম, লিচু, তরমুজ, জাম এছাড়াও আরও অন্যান্য কিছু।
কিন্তু আপনি কি জানেন গরমে জামে কী গুণ লুকিয়ে রয়েছে ?
জামের মধ্যে রয়েছে নানান পুষ্টিগুণ। বয়স, শারীরিক অবস্থা, রোগ ভেদে নিয়মিত ও সঠিক মাত্রায় এই ফল খেলে তা শারীরিক অনেক রোগব্যাধির ক্ষেত্রেও উপকারী। ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ ছাড়া আর কীভাবে উপকারী এই মরসুমি ফল ?
১) হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি–
ভিটামিন সি এবং আয়রনে ভরপুর জাম রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালনও ভাল হয়। রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছলে শারীরবৃত্তীয় কাজ কর্ম সঠিক হয়।
২) ব্রণের সমস্যা দূর করে
জামের মধ্যে রয়েছে ‘অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট’ জাতীয় একটি উপাদান। যা তৈলাক্ত ত্বক থেকে অতিরিক্ত সেবাম ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ব্রণের সমস্যা দূর হয়।
৩) চোখের যত্নে
চোখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হল ভিটামিন এ। জামের মধ্যে এই ভিটামিন রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। তাই চোখ ভাল রাখতে গেলে যে কয়েকটা দিন জাম পাওয়া যায়, খেয়ে নেওয়াই ভাল।
৪) হার্টের জন্য ভাল
১০০ গ্রাম জাম থেকে পটাশিয়াম পাওয়া যায় প্রায় ৫৫ গ্রাম। হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পটাশিয়াম। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ধমনী সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে জাম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা।
৫) মাড়ির সমস্যায়
মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বা দাঁতের সমস্যা মেটাতেও কার্যকরী জাম। এ ক্ষেত্রে জাম খাওয়ার পাশাপাশি জামের গুঁড়ো মাজন হিসেবে ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যায়।
এমনকি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে জাম। স্থানীয় জাম বিক্রেতা রাজিব সেখ তিনি জানান, ‘২৫০-৩০০ টাকা কিলো বর্তমানে জাম বিক্রি হচ্ছে। জামের বাজার এই বছর একটু মন্দা। আগের বছর ভালো ছিল। কোনদিন ভালো যায়। তো কোনদিন খারাপ। এই বছর ফলন কম তাই দাম একটু বেশি। ১০০ গ্রামের দাম ২৫-৩০ টাকা’। অর্থাৎ ৫-৬ টাকা পিস হিসেবে জাম এই মুহূর্তে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সারা বছর পাওয়া যায় না। বলে অনেকে এখন বেশি বেশি করে কিনে বাড়িতে স্টোর করে রাখেন। আবার জামের জুস একই সঙ্গে বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে।