আজ, শনিবার সন্ধ্যায় রুকুনপুর বলরামপাড়া গ্রামের বাড়িতে দেহ পৌঁছবে
নিজস্ব প্রতিবেদনঃ বাড়িতে ৪৫ দিনের ছুটি কাটিয়ে দু’সপ্তাহ আগে শনিবার কাজের জন্যে কাশ্মীর রওনা দিয়েছিলেন। আজ, শনিবার হরিহরপাড়ার (Hariharpara) বাড়িতে ফিরছে তাঁর মরদেহ। কাশ্মীরে (Kashmir) শহিদ হওয়া হরিহরপাড়ার বীর সেনাকর্মী পলাশ ঘোষকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে অপেক্ষায় সমগ্র গ্রাম। ‘দেশের জন্যে প্রাণ দিয়েছে, গর্বিত’। চোখের কোনে জল লুকিয়ে বলছেন পলাশ ঘোষের (Martyred Soldier Palash Ghosh) বাবা প্রশান্ত ঘোষ। কিন্তু মানছে না মায়ের মন। ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছেন। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন স্ত্রী। বাড়িতে রয়েছে ৮ বছর ও ৪ বছরের দুই কন্যা সন্তান। কান্নাকাটি দেখে তারা ভাবলেশহীন। তবে তাদের বোঝার মতো বয়স হয়নি যে বাবা আর ফিরবে না।
Hariharpara Martyred Soldier Palash Ghosh পলাশের মা আদুরী ঘোষ কথা বলতে পারছেন না। তিনি অস্ফুটে বলেন, ”ছেলে ফোন করেনি। ওর সঙ্গে যারা থাকতেন তাঁরা ফোনে বলছিলেন, ফোন হারিয়ে গিয়েছে। চিন্তা করবেন না। পরে সবার মুখে শুনছি অপারেশন করতে গিয়েছিল ধস চাপা পড়েছে”। বীর সেনাকর্মী পলাশ ঘোষ (৩৮) জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযানে গিয়ে শহীদ হয়েছেন কাশ্মীরে। সেখান থেকে ২ হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরে মুর্শিদাবাদ জেলায় রুকুনপুর বলরামপাড়া গ্রাম ভেঙে পড়েছে শোকে। মঙ্গলবার অনন্তনাগ জেলায় ভারতীয় সেনার এলিট প্যারা ইউনিটের এই সৈনিক নিখোঁজ হন। শুক্রবার এই ল্যান্স হাবিলদারের দেহ উদ্ধার হয়েছে।
Hariharpara Martyred Soldier Palash Ghosh জানা গিয়েছে, হরিহরপাড়া থানা এলাকার পলাশ ঘোষ গত ৬-৭ অক্টোবর সন্ত্রাস দমন অভিযানে শামিল হয়েছিলেন। দেহের সঙ্গেই উদ্ধার হয়েছে বন্দুক। বৃহস্পতিবার উদ্ধার হয়েছিল ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষের দেহ। ভারতীয় সেনার এলিট প্যারা ইউনিটের এই দুই সৈনিক মঙ্গলবার কোকেরাং-এ একটি অভিযান চলাকালীন নিখোঁজ হন। আহলান গাডোলে অভিযান চলছিল। ভারতীয় সেনা কাছে খবর ছিল ওই এলাকায় জঙ্গীরা লুকিয়ে রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর মরদেহ রুকুনপুর বলরামপাড়া গ্রামে পৌঁছবে। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার-পরিজন ও স্থানীয় মানুষরা।
শেষ দেখার জন্যে গ্রামবাসীরা প্রহর গুনছেন কখন আসবে দেহ?
Hariharpara Martyred Soldier Palash Ghosh পলাশ ঘোষের বাবা প্রশান্ত ঘোষ শক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ”ও তো নিজের জন্যে নয়। দেশের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু বাবার মন মানছে না। দেশের জন্যে শহীদ হয়েছে এ আমার গর্ব। ওরা থাকে বলে তো আমরা আরামে থাকি। ওখানে প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ কাশ্মীরে ওই জায়গা ঘন জঙ্গল। ওই বৃষ্টিতে তলায় ধস নেমেছে বুঝতে পারেনি।”
আরও পড়ুনঃ Palash Ghosh কাশ্মীরে মিলল হরিহরপাড়ার বীর সেনাকর্মীর দেহ । এলাকায় শোক
Hariharpara Military Palash Ghosh ২০০৯ সালের ২৭ মার্চ চাকরিতে যোগ দেন পলাশ ঘোষ। আগ্রায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন। রুকুনপুর হাইস্কুলে পঠন পাঠন। তারপর বহরমপুর কমার্স কলেজ। সেখানে দর্শনে প্রথম শ্রেণী। তবে কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালীন বহরমপুরে মিলিটারির চাকরির লাইন। সেখান থেকে চাকরিতে চলে যান। অপারেশন সিন্দুরের সময় কাশ্মীরে ছিলেন।
আরও পড়ুনঃ Murshidabad Labour বেঙ্গালুরুর হাসপাতালেই পরপর ৪ শ্রমিক শেষ…
Hariharpara Martyred Soldier Palash Ghosh গ্রামবাসী মানিক সরকার বলেন, বুধবার পলাশের দাদা মৃগাঙ্ক ঘোষের কাছে ফোন এসেছিল, চিন্তার কারণ নেই। পলাশের ফোন হারিয়ে গিয়েছে। অপারেশনে আছেন। তারপরে শুক্রবার সকালে শুনতে পাই ভরতপুরে বাড়ি পলাশের সঙ্গে একই প্যারা কমান্ডোতে থাকা একজন কোনও মেসেজ নিয়ে আসছেন। তখন থেকেই আমাদের মনের মধ্যে খটকা বাঁধে। পরে ওই ঘটনা জানতে পারি। অভিযানে গিয়ে তুষার ঝড়ে দুজনে দল ছাড়া হয়ে যান। হয়তো ঝড়ে বরফে চাপা পড়ে গিয়েছিলেন। সোমবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন দু’জনে।
Hariharpara Martyred Soldier Palash Ghosh আরেক গ্রামবাসী বলেন, প্রিয় ভাই পলাশ ঘোষ। অনন্তনাগে গত ৬ তারিখে একটি বিশেষ অভিযানে গিয়ে তিনি বীরের মৃত্যু বরণ করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় সরকারিভাবে তাঁর পরিবারকে মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়েছে। আমরা গ্রামবাসী হিসেবে গর্বিত এরকম এক বীর শহীদকে ভারত মায়ের চরণে তাঁর প্রাণ নিবেদিত হতে দেখলাম। গ্রামবাসীরা তাঁকে বীরের শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে অধীর অপেক্ষায় আছি। ঘটনাটি দুঃখের হলেও আমাদের গর্বের।