এখন খবরমধ্যবঙ্গ নিউজপরিবেশবিনোদনহেলথ ওয়াচখেলাঘরে বাইরেলাইফস্টাইলঅন্যান্য

চন্দ্রযানের নেপথ্যে দুই প্রাক্তন ছাত্র , গর্বিত কৃষ্ণনাথ কলেজ

Published on: August 25, 2023

দেবনীল সরকার, বহরমপুরঃ মাস্টারদা সূর্য সেন থেকে ঋত্বিক কুমার ঘটক, কৃষ্ণনাথ কলেজকে বার বার গৌরবের শিখরে নিয়ে গিয়েছেন কলেজের প্রাক্তনীরা। এবার সেই গৌরবের মুকুটে যোগ হল আরও এক পালক। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছে গেছে চন্দ্রযানঃ৩। উচ্ছ্বাসে মেতেছে সারা দেশ। সেই চন্দ্রযানের নেপথ্যে কাজ করেছেন মুর্শিদাবাদের কৃষ্ণনাথ কলেজের পদার্থবিদ্যা ও গনিত বিভাগের দুই প্রাক্তনী। বর্তমানে ইসরোর সিনিয়র প্রিন্সিপাল পদে কর্মরত বিজ্ঞানী তোসিকুল ওয়ারা ‘চন্দ্রযানঃ ৩’ -এর গ্রাউন্ড চেকআউট ডিভিশনাল (জি.সি.ডি)-র প্রধানের দায়িত্বভার সামলেছেন। ১৯৮৪ সালে পদার্থবিদ্যা নিয়ে সামসেরগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়তে আসেন তোসিকুল ওয়ারা। তারপরে ১৯৯১ সালে জুনিয়ার সাইন্টিস্ট হিসাবে ইসরোতে যোগ দেন তিনি। বরাবরই মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি, তাঁর ছাত্র জীবনের স্মৃতিচারণ করলেন সেই সময়ের সহপাঠী তথা বর্তমানে কে.এন কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপিকা ডঃ কৃষ্ণকলি বসু রায়। তিনি জানান, একসাথে তাঁরা ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করতেন। রেডিও ফিজিক্স নিয়ে ছাত্রাবস্থা থেকেই ঝোঁক ছিল তাঁর। একসাথে মাস্টার্স পাশ করে তাঁরা যান কলকাতার রাজাবাজার সাইন্স কলেজে। সেখানে তিনি পিএইচডি করতেন ও তোসিকুল ভর্তি হন বি.টেকে। তারপরে আবার সেখান থেকেই এম.টেক শেষ করে ১৯৯১ সালে পারি ব্যাঙ্গালুরুর ইসরোতে জুনিয়ার সায়েনটিস্ট হিসাবে।

কেমন ছিল তোসিকুলের ছেলেবেলা? প্রতিকূলতার মধ্যেও সামসেরগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম মহব্বতপুরে চারভাইকে মানুষ করেছেন পিতা নিজাম আহমেদ। সকলেই আজ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ভাই সফিকুল ওয়ারা বহরমপুরের একটি হাইস্কুলে রসায়ন বিদ্যার শিক্ষক। দাদার সাথে কাটানো ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করলেন তিনিও। দাদার কাছেই প্রাথমিক পড়াশোনা ও বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয় তাঁর। দাদার পরামর্শেই রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করেন সফিকুল। নাওয়া খাওয়া ভুলে গবেষণার কাজে নিমজ্জিত ছিলেন বিজ্ঞানী তোসিকুল ওয়ারা জানান, ভাই সফিকুল ওয়ারা।

মুর্শিদাবাদের কৃষ্ণনাথ কলেজের আরও এক প্রাক্তনী তুষার কান্তি দাস। ছোট থেকেই মেধাবী ছিল তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজোভাই তুষারকান্তি দাস। স্কুলের পড়াশোনা বেলডাঙার কাশিমবাজার রাজ গোবিন্দ সুন্দরী বিদ্যাপীঠে। তারপরে গণিতে অনার্স নিয়ে বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজে ও মাস্টার্স পাশ করেন আইআইটি খড়্গপুর থেকে ও এম.টেক আই.এস.এম ধানবাদ থেকে। ২০০৫ সালে ইসরো-তে যোগ দেন কৃষ্ণনাথ কলেজের গণিত বিভাগের প্রাক্তনী তুষার কান্তি দাস। বুধবার চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে চন্দ্রযান -৩। চন্দ্রযানঃ৩ -এর সফল অবতরণের পরপরই উৎসবেব মেতেছে বেলডাঙ্গায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা। চন্দ্রযানঃ৩ -এর ল্যান্ডিং সেকশনে কাজ করতেন তিনি। বিজ্ঞানীর দাদা কুমারকান্তি দাস জানান, মেধাবী তো বটেই। তার পাশাপাশি প্রচন্ড কর্মঠ ও পরিশ্রমী তিনি। তাঁর এই পরিশ্রম ও অধ্যবসায় তাঁকে আজ সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে গেছে।

২০২৩ সালের ১৪ই জুলাই দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে চাঁদের উদ্দেশ্যে পারি দিয়েছিল চন্দ্রযানঃ ৩। অবশেষে বুধবার (২৩ আগস্ট) ১ মাস ৯ দিন বাদে, ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬ টা বেজে ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ড করে চন্দ্রযানঃ ৩। যার নেপথ্যে ইসরোর শতাধিক বিজ্ঞানীর পাশাপাশি রয়েছেন কে.এন কলেজের দুই প্রাক্তনীও। যাঁদের গর্বে গর্বিত কলেজও।

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now