Food & Health বাংলা বিষয় নিয়ে গ্র্যাজুয়েশান করছেন নদীয়ার বাসিন্দা পায়েল দাস। বাড়ি থেকে এতদূর এসে বহরমপুরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকেন তিনি। দরকারি সমস্ত জিনিস রয়েছে তার ঘরে। পায়েল বর্তমানে নিজেই রান্না করে খায়। সকালে কলেজ যাওয়ার আগে রাতে বানানো খাবার খায়। অনেক সময় রাতে বেচে যাওয়া খাবার গরম করে খায় সে। গরমে যাতে খাবার নষ্ট না হয় তাই বাড়ি থেকে একটি ছোট্ট মিনি ফ্রিজও নিয়ে এসেছে। ব্যাস আজকের খাবার কালকে খাওয়া আবার একটু খেয়ে ফ্রিজে রেখে দেওয়া সেটাই বার করে আবার গরম করে খাওয়া। পড়াশোনার চাপে বলা চলে এই রুটিং ফলো করে সে। কিন্তু পায়েল ভাবতেন এইভাবে খাবার নষ্ট হয় না।
বর্তমান আধুনিক যুগে। খাবার স্টোর করে রাখা একদমই সহজ ব্যাপার হয়ে পরেছে। গরমে বেশি খাবার হলেই ফ্রিজে। সেই ফ্রিজ থেকে বার করে আবার গরম করে প্লেটে। কিন্তু আপনি কি জানেন খাবার কতবার গরম করে খাওয়া দরকার ? কতটুকু গরম করলে ভালো হয় ?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বহু মানুষ অনিরাপদ খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। তারাই এই সমস্যার প্রধান শিকার। খাবার যদি নিরাপদ না হয়। তাহলে তার থেকে ঘটতে পারে নানান সমস্যা। পেটের পীড়াদায়ক সমস্যা থেকে আরও অনেক কিছু।
বিভিন্ন সময়ে ভারতে খাদ্যের কারণে সৃষ্ট গণ্ডগোলের পর নানা ধরনের আলাপ-আলোচনা ওঠে। জনগণও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, পরিবার চাইলেই যথাযথভাবে খাবার সংরক্ষণ করার মাধ্যমে খাদ্য থেকে সৃষ্টি রোগবালাইকে প্রতিরোধ করতে পারে। সেক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মেনে চলা উচিৎ।
নিরাপদ খাবারের প্রথম ধাপ ঘর থেকেই শুরু হয়। পরিবার কতটা সচেতন। কী কী খাচ্ছেন। কীভাবে গ্রহণ করছেন। এইসব বিষয়ে যদি পরিবার সচেতন হয়। তবে খাদ্য থেকে তৈরি হওয়া সমস্যার অনেকাংশ কমে যাবে। কারণ রান্না করা বা কাঁচা খাবার কীভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, খাবারের বিষক্রিয়া এড়াতে করণীয় কী, একই খাবার বারবার রান্না করলে খাবারের গুণমান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কি না; এরকম আরও নানা বিষয়ে যদি মানুষ শুরু থেকেই সচেতন থাকে, তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ এড়ানো সম্ভব।
খাবার নিরাপদ রাখতে যেসব পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, তার মধ্যে রয়েছে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখা, খাবার ভালোভাবে রান্না করা, খাবারকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা এবং রান্নার সময় নিরাপদ পানি ও নিরাপদ কাঁচামাল ব্যবহার করা।
খাবার বারবার গরম করলে কী হয়
তাপমাত্রার বিষয়ে ডব্লিউএইচও’র সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও অনেক সাধারণ মানুষ তা জানেন না।
সেজন্যই অনেকেই আছে, যারা ফ্রিজে সংরক্ষিত খাবারকে বাইরে নামিয়ে বারবার গরম করেন।
এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ জানান, খাবার বারবার গরম করলে প্রথমত খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। দ্বিতীয়ত, এতে খাবারে ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। এটি পেটের জন্য বেশ ক্ষতিকর এবং এটি থেকে থেকে ডায়রিয়া বা বদহজম দেখা দেয়। আবার, খাবারে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান দ্বিতীয়বার গরম করলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে বিষাক্ত উপাদান তৈরি হতে পারে, যা পরবর্তীতে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ফ্রিজে কীভাবে খাবার রাখতে হবে?
ফ্রিজের সহজলভ্যতার কারণে ফ্রিজে খাবার রাখাটা আমাদের নিত্যকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলেন, ফ্রিজে বেশিদিন খাবার সংরক্ষণ করা উচিৎ না। ফ্রিজে দীর্ঘদিন খাবার রেখে দিলে খাবারের রং পরিবর্তন হয়ে যায়, স্বাদ গন্ধযুক্ত হয় ও পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়; যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না।
তবে যেগুলো পচনশীল খাবার, সেগুলোকে দুই ঘণ্টার মাঝে ফ্রিজে রাখতে হবে এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। তবে সেই খাবারকে খুব বেশিদিন ফ্রিজে রেখে দেওয়া যাবে না।
পুষ্টিবিদদের মতে গরমের সময় খাবার সঠিকভাবে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে এবং বাসি খাবার একদমই খাওয়া যাবে না। এদিকে ফ্রিজ থেকে বের করা খাবার সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া যাবে না। ফ্রিজ থেকে খাবার বের করার পর তা কিছুক্ষণ স্বাভাবিক তাপে রেখে দিয়ে গরম করতে হবে। আবার খাবার গরম করার পরও তা সঙ্গে সঙ্গে না খেয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রা রেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।