রামচন্দ্র বিশ্বাস, বেলডাঙা, ৪ নভেম্বরঃ লাল, সবুজ, হলুদ। জাতে বিদেশি হলেও দেশের বাজারে চ্যাম্পিয়ান ক্যাপসিকাম। শীত আসতেই খোদ মুর্শিদাবাদ জেলাতেও শুরু হয়েছে ক্যাপসিকাম চাষ। বহরমপুর শহর থেকে বারো কিলোমিটার দূরে বানিনাথপুর গ্রামে ক্যাপসিকাম চাষ করে তাক লাগাচ্ছেন বছর ষাটের আবদুল মোহিত খান। পলি হাউস বানিয়ে ফলাচ্ছেন হরেক রঙের ক্যাপসিকাম। লোহার পাইপ দিয়ে বানানো ঘড়ের স্ট্রাকচার। তার ওপরে দেওয়া সাদা স্বচ্ছ ত্রিপল। এবং মাঝখানে একটু হাওয়া চলাচলের জন্যে ফাঁক করা। এইভাবেই সারি সারি ক্যাপসিকামের চাষ চলছে মুর্শিদাবাদে।
ফুলকপি, ডালশস্যের মতো প্রথাগত চাষ থেকে বেড়িয়ে অন্যরকম চাষে ঝুঁকছেন মুর্শিদাবাদ জেলার চাষিরা। এই ক্যাপসিকাম চাষের মূল সময় শীতকাল। প্রধানত সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম চোখে পরে। পাশাপাশি হলুদ, লাল রঙের ক্যাপসিকামও চাষ চলছে। এরফলে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরাও।
ক্যাপসিকাম যেটি মিষ্টি মরিচ নামেও পরিচিত। গন্ধে লঙ্কার মতন ঝাঁজ দিলেও, স্বাদের ক্ষেত্রে একদম অন্যরকম কথা বলে। ক্যাপসিকাম ভারতীয় সবজি নয়। দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় বহুল পরিমাণে এই সবজির চাষ হয় এবং উৎপত্তি স্থলও কমবেশি সেখানেই। ভারতে ইংরেজর আসার পর থেকেই এই সবজি চাষ শুরু হয়। আনুমানিক তখন থেকেই ভারতে এই ফসলের পথচলা শুরু।
ধীরে ধীরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে মুর্শিদাবাদে এই ফসলের চাষ শুরু হয়। বাজারে যখন পেঁয়াজের দাম আকাশ ছোঁয়া। এমন সময় ক্যাপসিকাম চাষ করে চাষিরা নিজেদের লোকসানের টাকা কিছুটা হলেও উসুল করতে পারবে বলে মনে করছেন। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে চাষ করতে এই চাষ বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। এই চাষের জন্যে সবচেয়ে বেশি দরকার পলি-হাউসের যেটি তৈরি করতে দরকার প্রায় বারো লক্ষ টাকার।
যার কারণেও অনেক চাষিরা পিছিয়ে আসে এই ক্যাপসিকাম চাষের জন্যে। তাও রাজ্য সরকার সমস্ত দামের অর্ধেকটা সাবসিডি হিসেবে প্রদান করে। ফলে একেবারে চাষিদের সমস্ত টাকা লাগাতে হবে না। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ টাকা আনাও এই জেলার চাষিদের কাছে একটি বড় ব্যাপার।
প্রধানত এই ক্যাপসিকাম চাষের জন্যে দরকারি পলি-হাউস। সেখানেই সারি সারি ভাবে একটি নির্দিষ্ট গ্যাপ রেখে লাগানো হয় ক্যাপসিকামের চারা। এবং তারপর লাগানোর দেড় মাসের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে গাছগুলি। সেই সময় দড়ি দিয়ে বাঁধতে হয় যাতে একে ওপরের সাথে জড়িয়ে না যায়। এবং এই সমস্ত কাজ করতে দরকার অন্তত্য পাঁচজন। এছাড়াও যেহেতু এই জেলায় কালবৈশাখীর প্রবণতা খুববেশি। তারফলে বৈশাখ মাসে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির ফলে ছিঁড়ে যায় সেই সমস্ত ত্রিপল। এবং সেই কারণে আরও খরচা বেড়ে যায় চাষিদের।
বিঘা প্রতি খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা কিন্তু লাভের কথা শুনলে মনে হবে কেন এই চাষের ওপর জোর দিচ্ছেন না জেলার অন্যান্য চাষিরা। প্রতিবিঘা ক্যাপসিকাম বিক্রি করে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে। অর্থাৎ প্রায় লাখখানেক টাকার লাভ। খোলা বাজারে যেহেতু এই ক্যাপসিকামের ডিমান্ড রয়েছে তাই এই মিষ্টি মরিচ বিক্রি করে খুশি সবজি বিক্রেতারাও।
বহরমপুরের গোরাবাজার সংলগ্ন এলাকার সবজি বিক্রেতা জানান, আগে আমাদের এই ক্যাপসিকাম আনতে হত শিয়ালদা থেকে কিংবা বাইরে থেকে আরও। কিন্তু মুর্শিদাবাদে উৎপাদন হওয়ার পর থেকেই যেমন মালটা সস্তায় কিনছি আমরা। তেমনই যেহেতু বাজারে ডিমান্ড রয়েছে তাই ৬০-৮০ টাকা কিলো বিক্রি হয়। ৮ থেকে ৮০ প্রায় সব বয়সী মানুষ এই সবজি খাদ্য হিসেবে গ্রহন করেন। কখনও চাউমিনে বা পিজার ওপর অথবা বাঙালির যেকোনো নিরমিশ পদেও ব্যবহৃত হয় এই মিষ্টি মরিচ বা ক্যাপসিকাম।