Farmers দুর্গাপূজা শুধু উৎসব নয়, চাষিদের কাছে এই উৎসব ছিল আয়ের উৎসব। পূজোর বাজার ধরতে আগেভাগেই ফুলকপি চাষ করেছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া থানার Hariharpara দস্তুরপাড়া গ্রামের কৃষকরা। কিন্তু আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনায় চাল তো দুরের কথা কপি মাঠে টিকিয়ে রাখায় দায় হয়েছে কৃষকদের। হরিহরপাড়া ব্লকের দস্তুরপাড়া গ্রামে অধিকাংশ পরিবারই সবজি চাষের সাথে যুক্ত। দুর্গা পুজোর Durga Puja সময় গ্রামের অধিকাংশ জমিতে ফুলকপি চাষ করেন কৃষকরা। এবছরও পুজোর আগে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে কপি চাষ করেছিলেন কৃষকরা। তবে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি ও প্রখর রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে কপি গাছ। বেশ কিছু গাছে পচন ধরেছে।
Farmers পুজোয় এই জিনিস ফলিয়ে বিপাকে হরিহরপাড়ার কৃষকরা বিঘা প্রতি প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবারে ফুলকপি চাষে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি পিস ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ফুলকপি, খোলা বাজারে তা ৩৫-৪০ টাকা হলেও মাঠে ফলন ভালো না হওয়ায় মুখ ভার কৃষকদের।
অন্যান্য বছর দুর্গা পুজোর মরশুমে কপি বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভের মুখ দেখলেন কপি চাষিরা। তবে এবছর সেই ছবিটা একেবারেই উল্টো। মাঠে মারা যাচ্ছে কপি। কৃষকরা বলছেন কপিতে পচন ঠেকাতে কৃষি দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোন সুরাহা মেলেনি। উৎসবের মধ্যে সকলের মুখে হাসি থাকলেও হরিহরপাড়ার কপি চাষিদের কপালে চিন্তার ভাজ।
Farmers জলবায়ু পরিবর্তনের খামখেয়াল
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন অস্বাভাবিক আবহাওয়া একেবারেই নতুন নয়। আগের মতো ঋতুচক্র এখন আর নিয়ম মেনে চলে না। কখনও অকালবৃষ্টি, কখনও দীর্ঘ খরা, আবার কখনও অস্বাভাবিক গরম—সব মিলিয়ে চাষিরা দিশাহারা। কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই মৌসুমি শাকসবজি চাষ বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফুলকপির মতো সবজি হঠাৎ আর্দ্রতা বেড়ে গেলে বা অতিরিক্ত গরম পড়লে দ্রুত পচে যায়। ফলে ফলন মাঠে দাঁড়িয়েই মারা যায়।
হরিহরপাড়ার দস্তুরপাড়া গ্রামের কৃষক শেখ রহিমুদ্দিন বলেন, “কত কষ্ট করে টাকা ধার নিয়ে চাষ করি। এবার মাঠে কপি রক্ষা করতেই হিমশিম খাচ্ছি। দু’দিন বৃষ্টি, তিন দিন রোদে সব শেষ।” একই হতাশা ঝরে পড়েছে আর এক চাষি মহম্মদ আসমত আলির গলায়, “আগে যতই খরচ হোক, পুজোয় ফুলকপি বিক্রি করে টাকা উঠত। এবারে ক্ষতি ছাড়া কিছুই নেই।”
Farmers বাজারজাতকরণে বড় সমস্যা
চাষিরা শুধু আবহাওয়ার সমস্যায় নয়, বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রেও বিপাকে পড়ছেন। দস্তুরপাড়ার মতো গ্রামের কৃষকদের কাছে সরাসরি পাইকারদের সাথে যোগাযোগের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় হাটে যে দামে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে, তা খরচও তুলতে পারছে না। বড় শহরের বাজারে দাম তুলনামূলক বেশি হলেও সেখান পর্যন্ত কৃষকরা নিজেরা পৌঁছতে পারছেন না। পরিবহন খরচ, কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণের অভাব, আর সরকারি সহায়তা না থাকায় গ্রামের কৃষকরা পাইকারি দামের উপরই নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন।
Farmers এক কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, “কপি বহরমপুরে ৪৫ টাকা, কলকাতায় ৫০ টাকা পিসে বিকোচ্ছে, আমরা ২৫ টাকায় পাইকারকে দিচ্ছি। খরচ বাদে হাতে কিছুই থাকছে না।”
উৎসবের আনন্দে কৃষকের অশ্রু একদিকে পুজোর উৎসবে আনন্দে মেতে উঠেছে চারপাশ, অন্যদিকে মাঠে দাঁড়িয়ে কপির গাছ শুকিয়ে যেতে দেখে মন ভারী হচ্ছে চাষিদের। হরিহরপাড়ার দস্তুরপাড়ায় যেন উৎসবের ঢাক কানে পৌঁছালেও কৃষকের মনে বাজছে হতাশার সুর।
( মামিনুল ইসলাম ও চিরঞ্জিত ঘোষের রিপোর্ট)