সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কথা অজানা ধুলাউড়িডাঙার চাষীদের, আড়তদারের ধার্য্য দামেই বেচছেন ঘাম-রক্ত ঝরানো ফসল

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতা,কান্দিঃ সরকার সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার কথা বলেছে।কিন্তু সে কথা পৌঁছায়নি কান্দি মহকুমার ধুলাউড়িডাঙা গ্রামে।আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামের অধিকাংশই ভাগচাষী। সেখানেই ধান চাষ করেন ইন্দ্রাণী মার্ডি, বিমল সোরেন, লক্ষ্মী সোরেন, গোপেন মুর্মুরা। তিন ফসলি জমি। সেখানে আউস, আমন বোরো তিন ধরনের ধানই চাষ হয়। চাষের জন্য প্রয়োজন বীজ, সার, কীটনাশক।এমনকি সেচের জলও কিনতে হয় চড়া দামে। জমি যার সেও কখনও কিনে এনে দেন, কখনও নিজেরাও কিনে আনেন। নিজেদের ঘাম রক্ত ঝরিয়ে বাঁচান মুনিষ খরচ।পরে নিজেদের মধ্যে খরচের ভাগ বাটোয়ারা করে নেন মালিক ও তারা

কিন্তু এই ভাগচাষীরা জানেন না সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে।সারের কালোবাজারি হচ্ছে, না কি দোকানদার সঠিক দামেই সার বিক্রি করছেন  ওঁরা জানেন না তাও। এমনকি ভালমন্দ পরখ করার কেউ নেই। কোথায় বীজের দাম কত? জল না কিনে বিকল্প কোনও ব্যাবস্থা করা যায় কি না? না কেউ সে ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গেও আলোচনা করেনি, তাঁরাও কোথাও যাননি এ ব্যাপারে কারও পরামর্শ নিতে।সে ব্যাপারে আগ্রহও নেই তাঁদের।ধান চাষের সময় এলে জমির মালিক যেমন ওদের খবর দেয় ওরাও তেমনি মাঠে চলে আসেন চাষ করতে। বিমল বলেন, “ধান চাষ করে লাভ হয় না। বছরের ভাতের জোগানের জন্য চাষ করি।”

ধান কাটতে ব্যস্ত চাষী ধুলাউড়িডাঙা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

শুধু জানেন, যে ধান উঠবে সেই ধান আড়তদারকে বেচে দেবেন। আড়তদার কে? সে কি মধ্যস্বত্ত ভোগী? না কি চাল কলের আড়তদার? সেটাও জানেন না তাঁরা? সরকার ধানের জন্য কত দাম ধার্য্য করেছে? তাও অজানা ওদের। গোপেন মুর্মু বলেন, “নিজের এককাঠা জমি না থাকায় পরের জমিতে চাষ করতে হয়। মালিকের সঙ্গে আধাআধি চুক্তি। খরচও আধাআধি, ফসলের ভাগও আধাআধি।” কত খরচ হয়? কত ধান ওঠে? বিমল বলেন, “এবার চার বিঘে জমি চাষ করেছি। দু’বিঘে পাবে জমির মালিক। বাকি দু’বিঘে পাব আমি। তবে খরচের তুলনায় ফসল পাই না। তিনটি লাঙল, সার, জল মিলিয়ে বিঘা প্রতি সাত থেকে আট হাজার টাকা খরচ হয়। এবছর সাত-আট মণ ধান হলে তিন চার মণ ভাগে মিলবে।” ওঁরা ইউরিয়া আঠারো টাকা কেজিতে, ডিএপি ৩২টাকা কেজিতে, আর একটি মিশ্র সার জমিতে ব্যাবহার করেছেন, সেটি ২৬টাকা প্রতি কেজি হিসেবে কিনেছেন।জমিতে যতবার চাষের জন্য জল দিতে হয়েছে প্রতিবার ওদের দেড় হাজার টাকা করে গুণতে হয়েছে। এ বছর ধানের ধসা রোগ হওয়ায় ধানের ফলন কম হয়েছে দাবি করেন এই প্রান্তিক চাষিরা। বিমল বলেন, “আগে দশ-বারো মণ ধান হতো এই জমি থেকে। খাওয়ার জন্য ধান রেখে বাকি ধান বেচে দেব।” কোথায় ধান বেচবেন? গোপেন, বিমল, লক্ষ্মীরা কাছেই এক আড়তদার আছে তাঁর কাছে গিয়ে ধান বিক্রি করে আসেন।” কত দামে বিক্রি করেন? কখনও প্রতি কুইন্ট্যাল ধান বারোশো থেকে আঠারোশো টাকায় তাঁরা আড়তদারের কাছে ধানের দাম পেয়েছেন। এমনকি আটশো টাকা কুইন্ট্যালেও ধান বিক্রি করেছেন তাঁরা। সরকার তো দাম বেঁধে দিয়েছে কুইন্ট্যাল প্রতি ২২০৩ টাকা। সে কথা অবশ্য তাঁরা জানেন না বলেই দাবি করেন।আড়তদার কেন? বিমল বলেন, “ কিষাণ মান্ডিতে আমাকে ধান বিক্রি করতে দেবে না।আমাদের তো জমি নেই। ভাগচাষি। কাগজপত্র না থাকায় আমাদের ওখানে ঢুকতেই দেবে না।”