মধ্যবঙ্গ ওয়েব ডেস্কঃ ব্যস্ত ট্রেনসফর। ক্লান্তি যেন মাথার ওপর ভর করেছে। আবার পেটে রয়েছে খিদেও। এমন সময় মোবাইল ফোনের চার্জও শেষ হয়ে আসছে, দেখে ফোন অগত্যা পকেটে। কী আর করার! ঠিক তখনই আওয়াজ পাবেন ঝুরিভাজা, চিপসের হকারের। বহরমপুর থেকে যারা শিয়ালদা লাইনে যাতায়াত করেন, তাঁরা জানেন ট্রেন মুড়ি, চিপস, চা, ঝুরিভাজা বিক্রির চেনা ছবি। এসবের মাঝেও আপনাকে উতলা করে দেবে চিপসের সুবাস, আর বিক্রির অভিনব ধরণ।
মনে আছে, হরিদাসের বুলবুল ভাজা? তবে সে হরিদাস আর বুলবুল ভাজা না হলেও এই ‘ভাজাভুজি, টাটকা তাজা খেতে মজা’। বহরমপুর-শিয়ালদহ কিংবা রানাঘাট-লালগোলা লাইনে আপনি পাবেন বছর ষাটের তরণী বিশ্বাসকে। কাঁধে টিনের বাক্স ঝুলিয়ে ফেরি করছেন মুখরোচক ভাজাভুজি। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে বিক্রি করছেন এই মুখরোচক। সময়ের সাথে সব জিনিষের মতো বাড়াতে হয়েছে দাম, কিন্তু পরেনি মান। আজও আলু, কলা ও ঝুরিভাজা নিজের হাতে ভেজে সেগুলিকে কাগজের প্যাকেটে ভরে, সেই টিনের বাক্স কাঁধে নিয়ে ট্রেনে ফেরি করেন।
বেলডাঙ্গা পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডে সুরুলিয়া কলোনীতে বাস তরণী বিশ্বাসের। স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, পুত্রবধূ নিয়ে সংসার তাঁর। পরিবারের সবাই হাত লাগান তরণীর মুখরোচক তৈরির কাজে। সকাল থেকেই ব্যস্ত থাকে এই বাড়ির ছবি। কেউ আলু ছাড়াচ্ছেন তো কেউ কলা কাটছেন চিপসের জন্য। গরম কড়াইয়ের পাশে বসে একনাগাড়ে ভেজে চলেছেন তরণী বিশ্বাস। ভাজা হলে কাগজের ঠোঙ্গাতে মোড়া হচ্ছে সেই মুখরোচক। রোজ প্রায় দুশো প্যাকেট মুখরোচক তৈরি করেন তরণীর পরিবার। আজ বৃদ্ধ তরণীর ব্যবসায় হাত দিয়েছেন ছেলে সঞ্জীব বিশ্বাস। তিনি বলেন, “বাবাকে ছোট থেকেই দেখছি এই কাজ করতে। আমিও আগে যেতাম বাবার সাথে। তবে এখন আমিই ব্যবসাটা ধরার চেষ্টা করছি। বাবারও বয়স হয়েছে তাই। আর আমাদের ‘তরণীর মুখরোচক’ এখন একটা ব্র্যান্ডের মতো হয়ে গেছে। আমাদের খাবারের নিজস্ব স্বাদ, ধরণ। প্লাস্টিক না ব্যবহার করে কাগজের ঠোঙ্গায় বিক্রির জন্য আমাদের খদ্দেররা এই ‘তরণীর মুখরোচক’ পছন্দ করেন। ব্যবসাও যা হয় চলে যায় আমাদের।”