উৎসবের আগেও মাথায় হাত পাট চাষিদের, হাল ফিরবে কবে?

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মধ্যবঙ্গ নিউজ ডেস্কঃ পাট বলতে গ্রাম বাংলার যে ছবি প্রথমেই চোখে পড়ে তা হল বিস্তীর্ণ সবুজ ক্ষেতে মাথা উঁচিয়ে আছে কচি পাট। বড় হলে সেই পাট জাগ দেওয়া হয় জলে। সেই সময়ে দূরদুরান্ত থেকে পাট পচার গন্ধ, এই জেলার মানুষের অতি পরিচিত। প্রতিবারের মতো এই ছবি দেখা গেছে এবারেও। কিন্তু পাট চাষে লাভের মুখও দেখতে পেলেন না জেলার পাট চাষিরা। উৎসবের আগে খুশির মেজাজে সবাই। কিন্তু নীরবে কাঁদছেন জেলার পাটচাষিরা।

মুর্শিদাবাদ জেলার ব্লকে ব্লকে দেখা যাচ্ছে একই ছবি। পাট চাষে করতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে খরচ সেই খরচই তুলতে পারছেন না চাষিরা। লাভ তো বহুত দূর কি বাত! ধনপতি মণ্ডল পাট চাষি জানান, পাটের বীজ লাগানো থেকে পাটে ছাড়ানো এবং পচানো সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকার খরচা হয়েছে। এবং পাট হয়েছে প্রায় ১৪ কুইন্টাল। কুইন্টাল প্রতি দাম পেয়েছি ৩ হাজার টাকা করে। আমার মোট দশ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মুর্শিদাবাদ জেলায় রয়েছে ২৬ টি ব্লক, আর জেসিআই কেন্দ্র রয়েছে ১৫টি। তবে সব পাটচাষিরা জেসিআই-এ পাট বিক্রি করতে পারেন না। কারণ ট্রান্সপোর্টের খরচ আর জেসিআই-এর বাধ্যবাধকতা। তাই জেসিআই এর থেকে কম রেটেই পাট বিক্রি করতে হয় স্থানীয় দালালের কাছে, বলছেন ক্ষতিগ্রস্ত পাটচাষিরা। মার্চ এপ্রিল মাস থেকে জেলা জুড়ে পাটের চাষ শুরু হয়। তিনধাপে হয় পাটের ফলন। প্রথমে বীজ বোনা, পাট জাগ দেওয়া আর সবশেষে পাটের তন্তু বিক্রি। এবারে বর্ষা বিলম্ব করেছে, আর বিপত্তি তাতেই।

যে সময় পাট লাগানো হয় অর্থাৎ মার্চ থেকে জুনের সময় প্রচণ্ড গরম থাকার কারণে দেখা যায় জলের অভাব। ফলে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় চাষিরা বেশি টাকা খরচ করে বসিয়েছে জলের মেশিন। কেউ বা ঘণ্টা প্রতি ন্যূনতম ১৫০ টাকা দিয়ে জম কিনে জাগ দিয়েছেন পাট। যার ফলে বেড়েছে পারিশ্রমিক।

জেসিআই সূত্রের খবর, গুণগত মান অনুযায়ী পাঁচ রকমের পাট জেসিআই চাষিদের থেকে কিনে থাকে হয়। গত ২০২২-২৩ সালের MSP অনুযায়ী কাঁচা পাটের দাম ছিলঃ

TD ১ প্রতি কুইন্টাল ৫৪২৫ টাকা
TD ২ প্রতি কুইন্টাল ৫২২৫ টাকা
TD ৩ প্রতি কুইন্টাল ৪৭৫০ টাকা
TD ৪ প্রতি কুইন্টাল ৪২২৫ টাকা
TD ৫ প্রতি কুইন্টাল ৪০২৫ টাকা

চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ MSP অনুযায়ী কাঁচা পাটের দাম বেড়ে হয়েছে ।

TD ১ প্রতি কুইন্টাল ৫৭৮৫ টাকা
TD ৩ প্রতি কুইন্টাল ৫০৫০ টাকা
TD ৫ প্রতি কুইন্টাল ৪২৭৫ টাকা

অর্থাৎ প্রায় ৩০০ টাকা করে প্রতি কুইন্টাল দাম বেড়েছে জেসিআই তরফে। কিন্তু তাও চাষিরা সেইভাবে লাভ পাচ্ছেন না। কারণ মাঝে রয়েছে মিডিলম্যান। আর জেসিআই’এর নিয়মাবলী। এছাড়াও জলের অভাব, সচেতনতা এবং সঠিক পরিমানে পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে বলছে খোদ জেসিআই।

বদলাচ্ছে দুনিয়া। গোটা পৃথিবীতে এখন বিকল্প পাট। তবে কীভাবে কাটবে পাটচাষিদের এই দুরাবস্থা। জেলার সোনালি তন্তুর হাল ফিরবে কবে? কবে পাট চাষ করে আবার শান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন চাষিরা। সেদিকে তাকিয়ে মধ্যবঙ্গের মানুষ।