দেবনীল সরকারঃ নবাবের শহর মুর্শিদাবাদ। ডাকনাম, লালবাগ। উৎসবেও নবানিয়ানা বাঁচিয়ে রেখেছেন লালবাগের মানুষ ! এই শহর থেকেই একসময়ে বাংলা শাসন করেছেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইতিহাস কখনও লেখা হলে তার প্রথম অধ্যায়ে মুর্শিদাবাদের –এর নাম থাকা উচিত।
লালবাগের হাজারদুয়ারি প্রাসাদের দক্ষিণে যে বিরাট ফটক বা দরজা রয়েছে তা ‘দক্ষিণ দরজা’ নামে পরিচিত। এই দক্ষিণ দরজার ঠিক সম্মুখে যে জায়গা রয়েছে সেখানেই আজ প্রায় ৬১ বছর ধরে শারদীয়া পুজোর আয়োজন করে আসছে দক্ষিণ দরজা সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি । দরজার একদিকে মসজিদ অন্য প্রান্তেই মসজিদ । এই পুজো বাংলার দুর্গোৎসবে এক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছে। ধর্ম যার যার আপন, কিন্তু উৎসব সবার – এই বিশ্বাস থেকেই হিন্দু মুসলিম খ্রিস্টান সকলে ধর্ম নিরপেক্ষভাবে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন।
লালবাগ সাবডিভিশনে প্রায় ১৫০ টি ক্লাবে বারয়ারি দুর্গাপুজো হয়। এরকমই একটি পুজো হল দক্ষিণ দরজা সার্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি। এই কমিটির সভাপতি হলেন সৈয়দ রেজা আলি মির্জা (লালবাগ চত্বরে তাঁকে সবাই ছোট নবাব বলেই চেনে)। ইনি নবাব ওয়াসেফ আলি মির্জার বংশধর।
পুজো প্রসঙ্গে ছোট নবাব বলেন, “ দাদু ওয়াসেফ আলি মির্জা ১৯৫৯ সালে এলাকার হিন্দুদের দুর্গা পুজোর জন্য জায়গা বরাদ্দ করেন সেই জায়গাতে তবে থেকেই হয়ে আসছে দুর্গাপুজো।” পুজোর চারদিন হিন্দু মুসলিম সবাই ধর্ম ভুলে মাতেন পুজোর আনন্দে। সবাই মিলে একসাথে ভোগ খেয়ে পুজোর উচ্ছ্বাসে ভাসেন। ওই পুজো কমিটির সাধারণ সদস্য শ্রী স্বপন ঘোষ বলে, “ আমাদের এখানে ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ নেই, ছিল না কোনদিনও। এখানে পুজো মন্ডপে পুজো হয় আর পাশের মসজিদে নামাজও হয়। নামাজের সময় আমরা কিছুক্ষণ পুজো স্থগিত রেখে আবার পুজো করি। ভাসানের সময় সবাই একসাথে ঢাকের তালে নাচতে নাচতে গঙ্গায় যায়।”
দক্ষিণ দরজার পাশে রয়েছে নহবত খানা গেট, সেখানেও দুর্গাপুজোর প্যান্ডেল হয়েছে। পাশেই মসজিদ। এখানেও একই ভঙ্গিতে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়ে থাকে। লালবাগের গোলাপবাগ এলাকাতেও দুর্গাপুজোয় সম্প্রীতির একই রকম নজির পাওয়া যায়। গোলাপবাগ জনমঙ্গল সেবা সমিতি এখানে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে। ৪৫ বছর ধরে এখানে দুর্গাপুজো আয়জিত হচ্ছে। এক দেওয়ালে দরগা আর অন্য দেওয়ালেই মন্দির আর সেখানেই হয় পুজো। মন্দির আর দরগার এই রকম সহাবস্থান মুর্শিদাবাদ জেলার আর অন্য কোথাও দেখা যায় না। রাজ্যেও এই নজির খুবই বিরল।