শিক্ষক অভাবে পড়ুয়া কমছে বহরমপুরের সরকারি ইংরেজি মাধ্যম হাই-মাদ্রাসায়

Published By: Madhyabanga News | Published On:

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ পড়ুয়া চলতি বছর কম ভর্তি হয়েছে মুর্শিদাবাদ মডেল হাইমাদ্রাসায়। স্কুল পরিচালনার জন্য যা যা পরিকাঠামো দরকার সব আছে, নেই শুধু শিক্ষক। আর পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় চাহিদা থাকা সত্বেও ছাত্র ভর্তি করতে পারছেন না বলে দাবি স্কুল কতৃপক্ষের। এই স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের দাবি আগেই উঠেছিল। শুক্রবার সেই দাবির সত্যতা নিজের চোখে দেখে গিয়েছেন রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমেদ হাসান ইমরান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সংখ্যালঘু দপ্তরের জেলা আধিকারিক, বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আইজুদ্দিন মন্ডলরা।  স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ ওয়াহেদুজ জামান বলেন, “জেলা আধিকারিক, রাজ্য আধিকারিকদের জানানো হয়েছে তাঁরাই বিষয়টি দেখছেন।”

মডেল স্কুল পরিদর্শন করছেন মাইনরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান আহমেদ হাসান ইমরান। নিজস্ব চিত্র

সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলায় শিক্ষার প্রসারের জন্য এই স্কুল তৈরি হয়েছিল ২০১৩ সালে। বহরমপুরের উপকন্ঠে বানজেটিয়ায় শ্যামানগরের কাছাকাছি এই ইংরেজি মাধ্যম হাইস্কুলের উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  সরকারি পরিচালনাধীন এই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। ২০১৫ সালে যখন এই স্কুলে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হত তখন পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১২০ জন। সেই স্কুল  গত ন’বছরে হাইমাদ্রাসায় উন্নিত হয়েছে। পড়ুয়ার সংখ্যাও বেড়ে সাতশো ছাড়িয়েছে। চলতি বছর এই স্কুল থেকে ২৯ জন পড়ুয়া হাই মাদ্রাসা পরীক্ষা দিচ্ছে। তাদের ভাল ফলের ব্যপারে আশাবাদী স্কুলের শিক্ষকরা। সর্বোচ্চ ৯৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে গতবছর ইংরেজি মাধ্যম হাইমাদ্রাসায় রাজ্যে নাম কুড়িয়েছিল এই স্কুলেরই পড়ুয়া ইউসুফ আলী আহমেদ সরকার।

শুধু পড়াশোনাতেই নয়, খেলাধুলা, গানবাজনা, ক্যুইজ প্রতিযোগিতাতেও এই স্কুলের পড়ুয়াদের রেকর্ড ভাল। ২০১৯ সালে বর্তমান প্রধান শিক্ষক স্কুলে যোগ দেন। তারপরে ২০২১ সালে শেষবার তিন জন স্থায়ী শিক্ষক তাঁরা পেয়েছেন। স্কুল সূত্রে জানা যায়, এই স্কুলে শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, প্রতিবেশী নদিয়া, বীরভূম এমনকি বিহার থেকেও পড়ুয়ারা পড়তে আসে। স্কুলে আরও দুটি হস্টেল তৈরি হচ্ছে, মিড ডে মিলের ডাইনিং হল তৈরি হচ্ছে কিন্তু স্থায়ী শিক্ষক বাড়ছে না বলেই আক্ষেপ পড়ুয়াদেরও। যার ফলে  প্রী-প্রাইমারিতে ৮০ জন পড়ুয়া ভর্তির সুযোগ থাকলেও একটি বিভাগের উপযোগি ৪০ জন পড়ুয়ার বেশি একজন পড়ুয়াকেও ভর্তি করা যাচ্ছে না। প্রশাসনিক কাজকর্ম ছাড়াও প্রধান শিক্ষককে নির্দিষ্ট ক্লাসের বেশি ক্লাস যেমন নিতে হচ্ছে তেমনি অন্য সহশিক্ষকরাও বেশি বেশি ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে বিষয়ের পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার ফল ভুগতে হচ্ছে পড়ুয়াদের।

বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আইজুদ্দিন মন্ডল বলেন, “ স্কুলের পরিকাঠামো আছে, কিন্তু পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। যদি সরকারিভাবে ওই স্কুলে শিক্ষক দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে  নিঃশর্তে বেসরকারিভাবে শিক্ষক নিয়োগের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব আমি দিয়েছি কমিশনের চেয়ারম্যানকে।”  শুরু থেকেই এই স্কুলে স্থায়ী শিক্ষকের অভাব প্রকট। ২০১৭ সালে এই স্কুলে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকেরা বেতন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শেষমেশ জেলা প্রশাসন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে অস্থায়ী ভাবে ওই মাদ্রাসার পঠন-পাঠন চালানোর ভার দিয়ে সেবার দায় সেরেছিল। সেই চুক্তিও ২০১৮ সালে শেষ হয়।

পরবর্তীতে নতুন করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয় জেলা প্রশাসনের। ২০২৩এর এপ্রিলে তাদের চুক্তি শেষের পর নতুন আরও একটি সংস্থা বর্তমানে ওই স্কুলে অস্থায়ী শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করেছেন। তবে সদ্য নিয়োগ হওয়া প্রাথমিক শিক্ষকদের অন্তত তিন চারজনকে এই স্কুলে ডেপুটেশনে পাঠিয়ে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক ঘাটতির সাময়িক সুরাহা করতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা  প্রশাসন, দাবি সূত্রের।