Daaker Saaj: খাগড়ার ডাকের সাজেও সংকট, শোলার বাজার কেড়েছে রেডিমেড গয়না, কেমন আছে শোলাপাড়া ?

Published By: Madhyabanga News | Published On:

দেবনীল সরকারঃ এককালে মুর্শিদাবাদের শোলার কাজের নাম ডাক ছিল রাজ্য জুড়ে। সেই নাম ডাকের জেরে দেশ বিদেশ থেকে আসত কাজের অর্ডার। দুর্গা পুজোর সময়ে প্রচণ্ড কর্মব্যস্ত থাকতেন শোলা শিল্পীরা। প্রসিদ্ধ ছিল বহরমপুর, খাগড়ার ‘ডাকের সাজ’। তবে এই শিল্পীদের অবস্থা এখন পাল্টে গিয়েছে । সংকটে শহরের ডাকের সাজের শিল্পীরা।

গয়না বানাতে ব্যস্ত বাবু দাস

শোলা থেকে তৈরি করা হয় নৌকা, হাতি, ঘোড়া, পালকি, টোপর এছাড়াও বিভিন্ন দেব দেবীর মূর্তির মডেল । যা কাঁচের ফ্রেমে সাজিয়ে বিক্রি করা হয়। এই কাজের একজন দক্ষ শিল্পী ইন্দ্রপ্রস্থের বাসিন্দা শিল্পী সুভাষ সরকার। সুভাষবাবু প্রবীণ শিল্পী। শোলার মডেল তৈরি করে দেশ জোড়া নাম ডাক হয়েছে তাঁর। এখন তাঁর বাড়ির কারখানায় কাজ করেন তাঁর পুত্র মিন্টু সরকার ও আরও ছয়জন শিল্পী।

শোলার কাজ
বাড়ির কারখানায় কাজ করেন মিন্টু সরকার । মিন্টু বলেন, “ আমিই এই কাজের শেষ জেনারেশন । আমার পর আমার পরিবারের কেউ আর এই কাজ করবে না” ।

মিন্টু বলেন, “ আমিই এই কাজের শেষ জেনারেশন । আমার পর আমার পরিবারের কেউ আর এই কাজ করবে না। বাবার কাছ থেকে কাজ শিখে আমি কাজ শিখেছি । ছোট থেকেই কাজ করছি। তবে এখনকার নতুন ছেলেমেয়েরা কেউ এই কাজে আর আগ্রহী নয়। তাই বহরমপুরে যাঁরা শুধু ডাকের সাজের কাজ করত। চিন্তার মুখে পড়েছেন সেই সব শিল্পীরা । আমরা আগে শোলা দিয়ে ডাকের সাজের কাজ করতাম এখন সেই সব কাজ রেডিমেড বাজারে পাওয়া যায় । তাই আমরা অর্ডার মাফিক মডেলের কাজ করি । আমাদের বানানো কাজ দেশের বাইরেও যায় হরদম”।
পুজো আসছে। ব্যস্ত হাতে কাজ করছেন শোলা শিল্পীরা

ডাকের সাজের আরেক শিল্পী হলেন তরুণ সরকার । সম্পর্কে ইনি শোলা শিল্পী সুভাষ বাবুর ভাই কিন্তু তাঁর আর্থিক অবস্থা ততটা স্বচ্ছল নয়। রয়েছে বেশ কিছু অভিযোগ। ‘শোলাবাড়ি’ নামে খাগড়া মোল্লাগেড়ের মোড়ে তাঁর বাড়ি। সেখানে শোলার ছোটখাটো কাজের পাশাপাশি ঠাকুরের গহনা তৈরির কাজ করেন তরুণ বাবু ও তাঁর পরিবার । প্রায় ১৪ জনের পরিবার তাঁর । তিনি বলেন, “ এই কাজে ইনকাম নেই। আগে শোলার কাজের চাহিদা ছিল। ডাকের সাজেরও বাজার ছিল”।

নাতনিকে কোলে নিয়ে শোলা শিল্পী তরুণ সরকার

তিনি সুভাষ বাবুর মতো মডেল বানানোয় আগ্রহী নন। তার মূল আগ্রহের জায়গা হল শোলার তৈরি ডাকের সাজ। নিজের হাতে দেবদেবীর গহনা তৈরি করেন তিনি। এই কাজ খুবই সুক্ষ্ম। তিনি আরও বলেন, “মডেল আমরা বানাই না। যে কাজ জানি সেই কাজ করেই চলে যাচ্ছে কোনোরকমে । আর এখন তো সব দোকানে কমদামে রেডিমেড গহনা পাওয়া যায় । ডাকের সাজও বাইরের জেলা থেকে কিনে এনে কম দামে এই জেলার দোকানে বিক্রি হচ্ছে। ফলে, আমাদের কাজের ফিনিসিং থাকলেও পর্যাপ্ত দাম পাওয়া যাচ্ছে না।“

আগে, মধুবর্ষনের মোড়ে ছিল বহরমপুর শোলা শিল্পালয় । আজ সে দোকান যদিও নেই । আজ পাঁচ ছয়দশক আগে সেখানে ছিল হিরন্ময় কর্মকারদের রমরমা । সেখানেই কাঁচের শোকেসে সাজানো থাকত মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত শোলার শিল্প ।

সুভাষ সরকারের কারখানার একাংশ

সেখানেই শোলার কাজে হতেখড়ি সুভাষ সরকার ও তরুণ সরকার এঁদের । সেখান থেকে কাজ শিখে বাড়িতে শোলা কিনে কাজ শুরু করেন । বহরমপুরের শোলা শিল্পীরা তাঁদের কাজ সেই দোকানে বিক্রি করতেন। আজ এই জেলায় ডাকের সাজের কাজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তার অন্যতম কারন শোলা ও অন্যান্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি এবং নতুন প্রজন্মের এই কাজে অনীহা। তাই চাহিদার যোগানের জন্য প্রতিবেশী বনকাপাশি, ইটাহার ও অন্যান্যগ্রাম থেকে শোলা ও ডাকের সাজ কাজ কিনে বহরমপুরের দোকানে রেডিমেড বিক্রি করা হয়। সেই দোকান থেকে সস্তায় কিনে এনে কাজ করছেন জেলার শিল্পীরা। ফলে যে অল্প সংখ্যক জেলার শিল্পী নিজের হাতে ডাকের সাজ বানাতেন ভাটা পড়েছে তাদের বাজারে। শোলার বদলে তাদের হাতে এসেছে থার্মোকল, ফোম জাতীয় জিনিস। হারিয়ে গেছে জেলার শিল্পীদের তৈরি অথেন্টিক ডাকের সাজ।

নবরং, খাগড়া । অনেকে এখন প্রতিমার গয়না কেনেন দোকান থেকেই

এখন বহরমপুরের শোলা শিল্পীরা যাঁরা এই কাজ করে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছেন, তাঁরা নিজেদের দোকান-কারখানা তৈরি করেছেন। কিন্তু পিছিয়ে পড়েছেন যাঁরা নিজের দোকান দিতে পারেননি, বড়ো বাজারে নামতে পারেননি তাঁরা। তরুণ বাবুর শিল্পীরা চাইছেন, শোলা শিল্পে নজর দিক সরকার। তবেই বাঁচবে শিল্পীরা।