বহরমপুরে সিপিএমের কর্মসূচিতে টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটানো নিয়ে পুলিশের সমালোচনা সেলিম,অধীরের

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ এক সন্দেশখালি (Sandesh Khali) কান্ডে উত্তাল রাজ্য। তার আঁচ লেগেছে বহরমপুরেও। একদিকে সন্দেশখালি কান্ডের প্রতিবাদ,অন্যদিকে নিজেদের দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য খেত মজুরদের  আইন অমান্য কর্মসূচি ছিল সোমবার। সেই কর্মসূচি ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শহর বহরমপুর। সেখানে টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটানো নিয়ে পুলিশকেই পাল্টা দুষেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Selim)। পুলিশের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন বহরমপুরের কংগ্রস সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর (Adhir) চৌধুরীও। রাজ্যের বিরোধী দুই দলের শীর্ষ নেতার কন্ঠে উঠে এসেছে সন্দেশখালির প্রসঙ্গও।

সিপিএমের কৃষক সভার আইন অমান্য আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বহরমপুরের টেক্সটাইল কলেজ মোড়। আন্দোলনরত কর্মীরা যাতে জেলা প্রশাসনিক ভবনে না পৌঁছতে পারে তারজন্য আগেভাগে কলেজে ঢোকার মুখে লোহার ব্যরিকেড দিয়ে এলাকা ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। তার মাত্র কয়েক হাত দূরে সেখানে বক্তব্য রাখছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেই সভা থেকে সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি তোলেন তিনি। সমালোচনা করেন পুলিশেরও। তিনি বলেন, “পুলিশের কাজ শুধু উর্দি পড়ে ঘুরে বেড়ানো নয়, ফুটানি মারা নয়, গাড়ি করে ঘুরে বেড়ানো নয়, মন্ত্রীদের চামচাগিরি করা নয়, কাজ চোর ধরা।”  সঙ্গে যোগ করেন, ” যারা ওখানে মা বোনেদের ইজ্জত নিচ্ছে, যারা নদী দখল করেছে, চর দখল করেছে, বামফ্রন্টের আমলে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের জন্য যাদের আমরা জমি দিয়েছিলাম, অপারেশন বর্গার নাম করে জোতদারদের কাছ থেকে জমি নিয়ে বলেছিলাম লাঙল যার জমি তার। আর এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তার ভূমি রাজস্ব দপ্তরেরে আধিকারিক পুলিশ ডিএম এসপিরা কী বলছে জোর যার জমি তার। তাহলে মা বোনেরা ঝাঁটা হাতে ধরবে না?” তাঁর বক্তব্য শেষের পর দলের ঘোষিত কর্মসূচি মতো ব্যরিকেডের দিকে আইন ভাঙতে এগিয়ে যান দলের কর্মীরা তাঁরই নেতৃত্বে। তারপরেই বহরমপুরে বেঁধে যায় ধুন্ধুমার কান্ড।

আরও পড়ুনঃ বহরমপুরে কৃষক, শ্রমিকদের মিছিলে পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি ধুন্ধুমার

মহম্মদ সেলিম বলেন, ” আইন আমান্য নতুন নয়। এদিন পুলিশ ছাড়া ঘটনাস্থলে কোনও সিভিল অফিসার এসডিও, ডিএম কেউ ছিল না। আমি নিজে ছিলাম। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ হয়েছে। সেই কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠি চালায়, টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটায়। আহত হয়েছেন আমাদের বহু প্রবীণ কর্মী। পুলিশ অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্নভাবে হেনস্থা করেছে।” তিনি বলেন, ” দিল্লিতেও পুলিশ কৃষকদের কর্মসূচিতে টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে, এখানেও একই ঘটনা ঘটেছে।” যদিও মিছিল থেকে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ঢিল ছোড়ার অভিযোগও উঠেছে। সেলিম তা অস্বীকার করে বলেন, “পুলিশ তদন্ত করুক। যে ঢিল ছুড়ছে তাকে পুলিশ ধরলো না কেন?” তিনি এটাও বলেন, “এর আগেও বহরমপুরে আইন অমান্যের ঘটনা ঘটলো। কিন্তু কতবছর পরে এখানে এইরকম ঘটনা ঘটলো? কোথাও লেখা ছিল না, কোনও ঘোষণা ছিল না কোথা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা আছে?” তিনি বলেন, “পুলিশের সংগ্রহে লাঠি ছিল, টিয়ার গ্যাস ছিল কিন্তু আইন অমান্যকারীদের ধরবার মতো কোনও বাস ছিল না।”

তার সুরেই বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, ” শান্তিপূর্ণ আইন অমান্য আন্দোলনে পুলিশের বাহাদুরি দেখানোর কিছু নেই। পুলিশ সন্দেশখালিতে বাহাদুরি দেখাক। এই ধরনের পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা করি।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আরও বলেন, ” আইন অমান্য করবার অধিকার আমাদের আছে। কংগ্রেসের বিক্ষোভ মিছিলের উপরেও হামলা হয়েছে। আন্দোলন আগামী দিনে তৃণমূল নিষিদ্ধ করবে। সেই পথেই এগোচ্ছি আমরা। এটা একটা স্বৈরাচারি সরকার চলছে।”

তবে সিপিএম ও কংগ্রেসের দাবি পাল্টা দাবি করেছেন তৃণমূলের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সংগঠনের জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার। তিনি বলেন, ” পুলিশ কাউকে পুজো করবে না। পুলিশকে ইঁট মারা হয়েছে সেটা সেলিম বলছেন না। একসময় এই বাংলার ট্রিগার হ্যাপি দলের নেতা সেলিমের মুখে আইন অমান্য মানায় না। যারা আজ আইন অমান্য করেছে তাদের হাত  কয়েকহাজার মানুষের রক্তে রাঙানো হাত। সেদিন আমরা কংগ্রেস করতাম।  অধীর চৌধুরী ভোটে জেতার জন্য সেই সেলিমের কাঁধে চেপেছে। তিনি ভুলে গিয়েছেন এদের জন্য মা তার ছেলেকে হারিয়েছে। বোন তার ভাইকে হারিয়েছে।”