দেবনীল সরকার, বহরমপুরঃ উচ্চশিক্ষার সংকট, জাতীয় শিক্ষা নীতির সমস্যা, অধ্যাপকদের বিভিন্ন দাবি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দাবি নিয়ে সেমিনার, আলোচনা ও সম্মেলন আয়োজিত হল বহরমপুরে। রবিবার বহরমপুর ইউনিয়ন খ্রিশ্চিয়ান টিচার ট্রেনিং কলেজের সভাগৃহে অনুষ্ঠিত হল ওয়েবকুটার জেলা সম্মেলন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ১৮০ জন শিক্ষক, অধ্যাপক অংশগ্রহন করেছিলেন সম্মেলনে। অনুষ্ঠানের প্রথমভাগে ভারতে উচ্চশিক্ষার সংকট ও তা থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে সেমিনার হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন। ওয়েবকুটার সভাপতি অধ্যাপক কেশব ভট্টাচার্য, এই সংস্থার রাজ্যের সম্পাদক শুভদয় দাসগুপ্ত।
প্রথম ধাপে একটি সেমিনার হয় এবং সেখানে জেলা থেকে ২৬টি কলেজের প্রতিনিধিরা আসেন। এবং তাঁরা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বছরে দু’বার এই রকম সেমিনারের আয়োজন করা হয়। যেখানে আলোচনার মধ্য দিয়ে উঠে আসে নানান সমস্যা এবং তার সমাধানের বিষয়ে আলোচনায়। আজকের আলোচনা সভায় উঠে এল বর্তমান কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের শিক্ষা নীতিগুলিকে নিয়েও। এবং পাশাপাশি উঠে আসে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেহাল পরিকাঠামোর কথাও।
কোভিড এবং অন্যান্য কারণে আমাদের জেলা শিক্ষার হাল পিছিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কারণ। এইমত পরিস্থিতিতে কীভাবে পড়ুয়াদের মধ্যে আরও ভালো ভাবে শিক্ষার প্রসার করানো যায় সেই নিয়েও আলোচনা করা হয় এদিনের এই সভায়। ছিলেন তরুণ তুর্কি অধ্যাপকেরাও।
কৃষিভিত্তিক জেলা মুর্শিদাবাদ। জেলায় রয়েছে ২৬টি ডিগ্রি কলেজ ও খাতায় কলমে জেলা পেয়েছে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। রয়েছে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসও। তবুও উচ্চশিক্ষায় সংকট। জেলায় এ সমস্যা বহুদিনের। মুর্শিদাবাদ জেলায় শিক্ষার মানচিত্র দেখলে প্রথমেই দেখা যায় উচ্চশিক্ষায় অনীহা। পরিযায়ী শ্রমিক ও নিম্নবিত্ত আর্থসামাজিক জায়গা থেকে উঠে আসা মানুষ কোভিড পরবর্তী সময়ে পরেছিলেন এই সংকটে। কাটিয়ে উঠতে পরেননি এখনও। কেন কী তার কারণ? তা থেকে পরিত্রাণের উপায়ই বা কী?
রবিবার বহরমপুর ইউনিয়ন খ্রিশ্চিয়ান টিচার ট্রেনিং কলেজে ওয়েবকুটার সেমিনারে উঠে এল উচ্চশিক্ষার সঙ্কটের সম্যক চিত্র। জাতীয় শিক্ষা নীতির প্রতিফলন, শিক্ষাব্যবস্থা বেসরকারিকরণের ফলে গরীব ও সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হবেন উচ্চশিক্ষা থেকে উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ অধ্যাপকদেরও।
গ্রামভিত্তিক, দুর্বল আর্থিক কাঠামোর জেলা মুর্শিদাবাদ। এই জেলায় শিক্ষার ভবিষ্যৎ কী? কীভাবে পাল্টাবে জেলার শিক্ষার এই ছবি, তাও উঠে এল আলোচনায়। শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাব ও কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। উপযুক্ত শিক্ষা নীতি প্রয়োগ করে শিক্ষার সামগ্রিক বিষয়ের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করার দাবিও জানান অধ্যাপকেরা।
এদিনের আলোচনায় উঠে এল জেলা তথা রাজ্যে উচ্চশিক্ষায় সঙ্কটের ছবি। উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অধ্যাপকেরা। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড, তবে কীভাবে এই গুরুতর সঙ্কটের ছবি পাল্টে জাতির মেরুদণ্ড আরও দৃঢ় হবে সে দিকেই তাকিয়ে সকলে।