ছট পুজোয় জমজমাট বহরমপুর, কড়া নজরদারি পুলিশের

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ ছটে ভিড় হল বহরমপুরের কলেজ ঘাটে। অন‍্য ঘাটগুলোতেও ছিল উপাসকতবে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল ম‍্যাচ থাকায় এবার ভিড় উপচে পরেনি। তবু ভিড় সামলাতে পুলিশি নিরাপত্তা ছিল। যান নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক ব‍্যবস্থাও ছিল আঁটোসাঁটো। ছট মানে মূলত সূর্যের উপাসনা। সূর্যাস্তের সময় ঘাটে ঘাটে উপাসকরা জমায়েত হন। বেশ কয়েক বছর ধরে এই পুজো উপলক্ষে ভাগীরথীর তীরে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয় সেই মঞ্চ। প্রাচীন রীতি ও ঐতিহ্য মেনে হয় ছটপুজো। চারদিন ধরে চলে এই উৎসব। পবিত্র স্নান, উপবাস ব্রত পালন, জলে দাঁড়িয়ে থেকে প্রার্থনা করা এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্যদেবের উদ্দেশে অর্ঘ্য নিবেদন করা এই ছট পুজোর অঙ্গ।

পুরাণে আছে, ছট মাতা হলেন ব্রহ্মার কন্যা এবং সূর্যদেবের বোন। বলা হয় জগৎ-এর সৃষ্টির সময় ব্রহ্মা নিজেকে দু’ভাগে ভাগ করেন। একদিকট পুরুষ এবং অন‍্য দিক প্রকৃতি হিসেবে প্রকাশিত হয়। প্রকৃতি দেবী অর্থাৎ, সৃষ্টির অধিষ্ঠাত্রী দেবী আবার নিজেকে ছ’ভাগে ভাগ করেন এবং তাঁর ষষ্ঠ অংশটি দেবসেনা নামে পরিচিত হয়। লোকশ্রুতি প্রকৃতির ষষ্ঠ অংশ হওয়ায় তিনি ছটি মাইয়া নামেও পরিচিত।
কথিত আছে, সন্তান লাভের আশায় স্বয়ম্ভু মনুর পুত্র রাজা প্রিয়ব্রত এবং তাঁর স্ত্রী মালীনিকে যজ্ঞ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন কাশ‍্যপ ঋষি।যজ্ঞের পরে মালিনী অন্তঃসত্ত্বা হলেও তাঁর গর্ভজাত সন্তানের মৃত্যু হয়। এর পর ছটি মাতা প্রিয়ব্রতকে দর্শন দিয়ে সন্তান লাভের জন্য তাঁর উপাসনা করতে বলেন। রাজা সেই দেবীর নির্দেশ মতো পূজা করেন এবং পুত্র সন্তান লাভ করেন। বলা হয়ে থাকে, সেই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ দিন। তার পর থেকেই এই পূজার প্রচার হয়, এবং সকলে সন্তানের মঙ্গল কামনায় এবং পরিবারের কল্যানের জন্য ছটপুজো করে আসছেন।

ছটপুজো মূলত কার্তিক মাসের শুক্ল ষষ্ঠী ও সপ্তমীতে হয়। তার আগের দু’দিন ধরে চলে প্রস্তুতি পর্ব। সর্বমোট চার দিন ধরে পালিত হওয়া এই উৎসবের প্রথম দিনটিকে বলা হয় ‘নাহায়-খায়ে’পর্ব। দ্বিতীয় দিন পালিত হয় খারনা। সারাদিন নিরম্বু উপবাস শেষে ক্ষীর বা ক্ষীর জাতীয় খাবার খেয়ে উপবাসভঙ্গ করা হয় বলে খারনা নাম হয়েছে। তৃতীয় দিনে উপবাসের সঙ্গে চলে সূর্যের শেষ রশ্মি বা সবিতার উপাসনা। এই দিনটি সন্ধ্যা অর্ঘ্যের দিন। কার্তিক শুক্লা ষষ্ঠীতেই এই অর্ঘ্য দেওয়া হবে সূর্যদেবকে। এই সময়ে সূর্যদেব ও ছটি মাইয়াকে নিবেদন করা হবে জল ও দুধ। সূর্যদেবের পূজার পর সারারাত ধরে চলবে ষষ্ঠীদেবীর উপাসনা, ব্রতগান গাওয়া হবে রাত জেগে।