নিজস্ব সংবাদদাতা, মুর্শিদাবাদঃ খেত ভর্তি সব্জি। অথচ বিভিন্ন হাটে ঘুরেও মাসের শেষে ছেলের কাছে টাকা পাঠাতে পারবেন কিনা, তা জানেন না মুর্শিদাবাদের কপি চাষিরা। শীতের মরশুমে এবারও বাঁধাকপি, ফুলকপির চাষ করেছেন জেলার চাষিরা। ভেবেছিলেন, শীতের বাজারে সুদে-আসলে পুষিয়ে নিতে পারবেন বছরভরের খাটা-খাটনি। কিন্তু আক্ষেপ, খাটনিই সার। জেলার বিভিন্ন ব্লকে দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ ফুলকপি-বাঁধাকপির চাষিদের।
বহরমপুরের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন ব্লকে প্রমাণ সাইজের একটি ফুলকপির পাইকারি দর গিয়ে ঠেকেছে ৫ থেকে ৬ টাকা। এবং বাধাকপির দাম ৩ থেকে ৪ টাকা। খোলা বাজারে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকা দরে। এবং বাধাকপি ৮ থেকে ১০ টাকা। তাহলে মাঝখান থেকে লাভের গুড় খাচ্ছে কে? কেন এই অবস্থা? জানালেন খোদ চাষিরাই।
বেলডাঙার মহুলা-২-এর চাষি বিজয় হাজরা জানান, ‘আমরা কপি বিক্রি করছি ৩-৪ টাকা করে। বিঘা প্রতি খরচা হচ্ছে প্রায় পনেরো হাজার টাকা। এইমত অবস্থায়, সোনার গয়না বন্ধক রেখে আমাকে ছাস করতে হচ্ছে। যদি এমনই পরিস্থিতি চলে তাহলে আমারা রাস্তায় চোলে আসব।’
যদিও বছরে মোট তিনবার এই ফুলকপির চাষ হয় গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শীত। বাকি দুটো ঋতুতে যতটা চাহিদা থাকে তার চেয়ে বহুগুণ চাহিদা বেড়ে যায় এই শীতের সময়। তার পেছনে রয়েছে কিছু কারণও। শীতের এই সময় বড়দিন, নতুন বছর এছাড়াও আরও অন্যান্য কারণেও ফুলকপির চাহিদা বৃদ্ধি পায় কয়েক গুন। চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি হওয়ার কারণেই চাষিরা পাচ্ছেন না দাম জানালেন সবজি বিক্রেতারা।
বহরমপুরের স্বর্ণময়ী বাজারের সবজি বিক্রেতা ইনামুল সেখ জানান, ‘আমরা ৮-১০ টাকা দামে ফুলকপি কিনছি এবং বাধাকপি কিনছি ৫-৭ টাকা দামে। তাই খোলা বাজারে বিক্রি করছি ১৫ ফুলকপি এবং ৯-১০ টাকা বাধাকপি। এই দামেই আপাতত বেশ কিছু সপ্তাহ জুড়ে বিক্রি চলছে। কিন্তু এই এত কম হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি। ফলে অনেক সবজি নষ্ট হচ্ছে।’
দাম যাই হোক না কেন, ফুলকপির রোস্ট থেকে মাছের ঝোলে। শীতের মরশুমে আমিষ নিরামিষ সব পদেই ঘোরাফেরা এই ফুলকপির। পৌষ মাস পড়তে না পড়তেই ঠান্ডা পড়েছে জাঁকিয়ে। শীতকালীন বাজারের থলি থেকে পাতাশুদ্ধ ফুলকপির উঁকি দেওয়া স্বাভাবিক দৃশ্য। কিন্তু তারপরেও চাষিরা পাচ্ছেন না দাম। মাথার ওপর চিন্তার মেঘ। সেই মেঘ কাটার আশায় জেলার চাষিরা।