বাড়িতে আয়কর হানার পর ব্যবসায়িক মহলেও ব্যাকফুটে বাইরন?

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতা, জঙ্গিপুরঃ কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাসের বাড়িতে আয়কর দফতরের কর্তারা বুধবার দিনভর খানা তল্লাশী চালিয়েছেন।  গভীর রাতে তাঁর বাড়ি থেকে নগদ  প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে ধুলিয়ানের রাস্তা ছাড়েন তাঁরা। এদিকে বিধায়কের বাড়ি তল্লাশি চালানোয় ফের একবার বিরোধীরা তৃণমূলকে লক্ষ করে কটাক্ষ শুরু করেছেন জেলায়। যা ‘বেদনাদায়ক’ বলে তৃণমূলের জঙ্গিপুর সংগঠনে রব উঠেছে বলে সূত্রের খবর।  তাঁদের দাবি, বাইরন  রাজনীতির ময়দানে নতুন।রাজনীতির ‘অ আ ক খ’ তার এখনও কিছুই জানা হয়নি। বিধায়ক হিসেবেও এলাকায় তাঁকে জন সংযোগে তেমন দেখা যায়নি। ফলে রাজনীতির কূট কচালী থেকে তাঁর বাড়িতে ইডি হানা, এটা সরলীকরণ ছাড়া কিছু নয় বলেই মত তৃণমূলের একাংশের। উল্টে তরুণ শিল্পপতি বাইরনের বাড়িতে আয়কর হানার পর ব্যবসায়িক মহলেও ব্যাকফুটে বাইরন, দাবি বিড়ি মহল্লারও।  

২০২২-এর ২৯ ডিসেম্বর প্রয়াত হন সাগরদিঘির বিধায়ক সুব্রত সাহা। সেই আসনে উপনির্বাচন হয় ফেব্রুয়ারীতে। বামেদের সমর্থনে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে বিধায়ক হন বাইরন। মে মাসে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে নাম লেখান তিনি। সেই তৃণমূলেও তিনি প্রভাব খাটাতে ব্যর্থ। শাসক দলের একাংশের দাবি, তৃণমূলের কোনও কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা যায় না। নিজেও উদ্যোগী হয়ে দলের কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিধায়ক বলেন, “উনি যে দলের একজন বিধায়ক তা আমরা টের পাই কাগজে পড়ে, না হলে গড়পরতা দিনে তাঁকে মনেই পরে না।”

নবগ্রামের বিধায়ক কানাই মন্ডল এ প্রসঙ্গে বলেন, “ বিষয়টি নিঃসন্দেহে বেদনাদায়ক। বাইরনের  বিধায়ক পরিচিতির আগে শিল্পপতি পরিচয়। সেখানে উনি যা গড়মিল করেছেন তা তাঁর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। তারসঙ্গে দলের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় খারাপ তো লাগছেই।”

এমনিতেই জেলার রাজনৈতিক মহলে বাইরনের থেকে তাঁর বাবা বাবর বিশ্বাস অধিক পরিচিত। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় থেকে অধীর চৌধুরী সকলেই তাঁর পরিচিত। এমনকি বাবর বিশ্বাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও ছিল তাঁদের। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁর বাড়িতে স্থানীয় থানাও তল্লাশী চালায় নি বলেই দাবি সূত্রের। বিশেষ একটি সূত্রের দাবি, বাবরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকার সূত্রেই অধীর চৌধুরীর প্রস্তাব না ফেরাতে পেরে ছেলেকে নির্বাচনে লড়বার অনুমতি দিয়েছিলেন বাবর। সেই ছেলে এভাবে তাঁর ‘ মান ‘ ডোবানোয় মনখারাপ বাবরেরও, দাবি সূত্রের।

চলতি বছর জানুয়ারিতে জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাকির হোসেনের বাড়িতে আয়কর হানার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ থাকলেও এক্ষেত্রে যে রাজনীতির যোগ নেই তা একবাক্যে স্বীকার করছেন স্থানীয় সব পক্ষই।

কেন্দ্রীয় এজেন্সি বাইরনের বাড়ি তল্লাশি চালানোর পর একইভাবে জঙ্গিপুরের বিড়ি মহল্লাও কিছুটা অস্বস্তিতে।  মুখে কুলুপ আঁটলেও অস্বস্তি এড়াতে পারছেন না অনেকেই।  ঔরঙ্গাবাদ বিড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার জৈন  বলেন, “এই ঘটনা অস্বস্তির তো বটেই। তবে এই তল্লাশির পিছনে কোনও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র নেই। একজন শিল্পপতি হিসেবে ওদের ব্যবসা প্রসারিত হয়েছে। আর তা হলে আয়কর দফতরের একটা নজরদারি চলে। সেই কারণেও এই তল্লাশি বলে মনে হচ্ছে। তবে এত বছরের বিড়ি মহল্লায় কোনও ব্যবসায়ীর বাড়িতে এইভাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তল্লাশি হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই একটা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।”