মুর্শিদাবাদে কাজের দিনে ঘুরবে না বাসের চাকা, হয়রানির আশঙ্কা যাত্রীদের

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন সোমবার বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বেসরকারি বাস মালিক পক্ষ। মুর্শিদাবাদ বাস মালিক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে একথা জানানো হয়েছে শনিবার। সোমবার সকাল ছ’টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ছ’টা পর্যন্ত জেলায় বাসের চাকা গড়াবে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তার জন্য জেলার প্রতিবেশী সংগঠনগুলিকেও অনুরোধ করা হয়েছে জেলায় বাস না পাঠাতে। শুক্রবার সংগঠনের সদস্যরা বৈঠকে বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান বাস মালিকরা।

দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া বাড়েনি বাসের। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আনুষঙ্গিক খরচ। তেলের দামে রাশ টানা যায়নি।তার ওপর বাস চলাচলের রাস্তার দখল নিয়েছে অটো, টোটো, ট্রেকার। বারংবার সে কথা জানানো হয়েছে প্রশাসনকে। বৈঠক হয়েছে দু-পক্ষের। কিন্তু কাজের কাজ কিছু  হয়নি। উল্টে লাভ কমেছে তাঁদের। দাবি সংগঠনের সম্পাদক তপন অধিকারীর। তিনি বলেন, “যে রাস্তার পারমিট নেই অটো-টোটোর, সেই রাস্তায় বাধাহীন চলছে তারা। এরফলে বাসের যাত্রী কমছে।আলপিন থেকে হাতির চড়া দামের বাজারে লাভ তো দূরের কথা খরচ জোগাড় করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে আমাদের।” তারই প্রতিবাদে বাস ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

করোনা কাল থেকে ক্ষতিতে বাস চালাতে হচ্ছে বলে দাবি করেন মালিকরা। বছর দুয়েক আগে বাসযাত্রীদের কাছ থেকে অনুদানের নামে অতিরিক্ত ভাড়া চালু করেছিলেন মালিকরা। আস্তে আস্তে সেই অনুদান ভাড়ায় পরিণত হয়েছে বলে পাল্টা দাবি করছেন যাত্রীরা।রেলের কাজের জন্য রবিবার পূর্ব রেলের লালগোলা -শিয়ালদহ শাখায় দিনভর একপ্রকার বন্ধই থাকবে ট্রেন চলাচল। পরের দিন সোমবার সরকারি অফিস-কাছাড়ি গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষে এনআই অ্যাক্টে ছুটি। সেদিনের বাস ধর্মঘটে সরকারি কর্মীদের অসুবিধা না হলেও জেলার প্রত্যন্ত প্রান্তের সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হবে। প্রায় ছ’শো বেসরকারি বাস সেদিন রাস্তায় না নামলে অসুবিধায় পড়বেন চিকিৎসা পরিষেবা নিতে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষজনও। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ডে জলঙ্গি যাওয়ার বাস ধরবার অপেক্ষায় ছিলেন শাহনাজ আলম। তিনি বলেন, “ খাতায় কলমে বাসের ভাড়া বাড়েনি ঠিকই।তেমনি বাস পরিষেবাও তলানিতে ঠেকেছে। ভাঙা সিট, ভাঙা জানালা এমনকি সমান হয়ে যাওয়া টায়ার  নিয়ে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার বাস চলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। খরচ বাঁচাতে কেরোসিনেও বাস চালান চালকরা। আমাদের নিরুপায় হয়ে সেই বাসেই চাপতে হয়।” তিনি আরও বলেন, “দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে সরকার যদি ভাড়া বাড়ানোর ছাড়পত্র দেয় তাহলে কী পরিষেবার উন্নতি হবে? হবে না। কিন্তু বাস না চললে আমাদের হয়রান হওয়া ছাড়া লাভ কিছুই হয় না।” পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তনয়া মন্ডল। তিনি বহরমপুরের একটি প্যাথোলজির কর্মী। বাস ধর্মঘটের কথা শুনে তিনি ভ্রু কুঁচকে বলেন, “বাস না চললে খড়গ্রাম থেকে বহরমপুরে আসা মুশকিল। বেকার কাজের দিনে হাজিরা খাতায় লাল দাগ পড়বে। কাজের কাজ কিছুই হবে না। ফলে আমাকে কাজ বাঁচাতে ট্রেকারই ভরসা।”

তবে মালিকদের ডাকা ধর্মঘটের পক্ষে সওয়াল করেছেন মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সম্পাদক আনিসুল আম্বিয়া। তিনি বলেন, “ একজন পরিবহন কর্মীকে টায়ারের দাম, তেলের দাম, ইনসিওরেন্সের খরচ তুলে দিতে হয় মালিককে। তারপরে যা থাকে সেখান থেকে বেতন পায়। তাই নিজের তাগিদেই তাকে যাত্রী তুলতে হয়। কিন্তু বেআইনীভাবে সেই যাত্রী তুলে নিয়ে যাচ্ছে অটো, টোটো চালকরা।” তিনি আরও বলেন, “ অটো টোটো চালকরা এখন নিয়ন্ত্রণহীন।এমনকি বাসের পথ আটকে রাখে যাত্রী তুলতে। অনেক সময় বচসা থেকে হাতাহাতি পর্যন্ত হয় অটো চালক ও বাস কর্মীদের সঙ্গে। পুলিশ ও প্রশাসনকে জানিয়ে কোনও লাভ হয় না। সরকার উদাসীন তাই আমরাও বাস কর্মী হিসেবে এই ধর্মঘটকে সমর্থন করছি।”

বাস মালিকরা যে ‘মিথ্যে’ বলছেন বিষয়টি তেমন নয়। তিরিশ চল্লিশ বছর ধরে বহরমপুরের গির্জার মোড় থেকে খাগড়া ঘাট স্টেশন পর্যন্ত রাস্তায় অটো চলাচল করে। অথচ এই রাস্তায় অটো চলাচলের কোনও অনুমতি নেই বলে জানান বহরমপুরের অটো ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল শেখ। তিনি বলেন, “ এর জন্য অটো চালকদের দোষ দিয়ে শুধু লাভ নেই। সম্প্রতি কান্দির রণগ্রাম সেতু বন্ধ থাকায় বাসে প্রচণ্ড ভিড় হতো।মানুষ সেই বাসে উঠতে চাইত না। তখন আমাদের নিয়ে আসতে হতো। আগে রিজার্ভ করে এই রুটে মানুষজন যেতেন। এখন রিজার্ভ ছাড়াও অটোর পাশাপাশি টোটোও চলে। আয় শুধু বাসের নয়। সবারই কমেছে। তাই প্রতিযোগিতার বাজারে পেট চালাতে আমাদেরও ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। তবে মারামারির খবর শুনি নি।” জেলা সদর মহকুমাশাসক শুভঙ্কর রায় অবশ্য বেসরকারি ধর্মঘটের বিষয়টি তাঁর অজানা বলেই জানান। বলেন “খোঁজ নিয়ে দেখছি।”