নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আদতে কোন প্রতিবন্ধকতাই নয়। মনের জোর থাকলে যে সবকিছুই সম্ভব তা আবারও প্রমাণ করলো বহরমপুর লিপিকা মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলের কলা বিভাগের ছাত্রী রিয়া রায়। আজন্ম দৃষ্টিহীন রিয়া ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা করত ব্রেইল পদ্ধতিতে। তবে উচ্চমাধ্যমিকে এসে ঘটে ব্যাঘাত। ছিলনা কোন রকমের বই। পড়াশোনার সবটাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর ও পরিবারের উপর নির্ভর করে। হাজার চড়াই উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে রিয়ার নজরকাড়া সাফল্যে খুশি তার স্কুলের শিক্ষক থেকে পরিবারের সকলে। রিয়ার প্রাপ্ত নম্বর ৪১২।
রিয়ার সাফল্যের চাবিকাঠি কি? এই প্রশ্নের রিয়া উত্তরে বলে ডিসিপ্লিন, ডেডিকেশন আর ডিটার্মিনেশন। এবার লক্ষ্য উচ্চ শিক্ষা। পড়াশোনা করে প্রফেসর হতে চাই রিয়া। রিয়া নিজে চোখে দেখতে না পেলেও সকলের মাঝে শিক্ষার আলো দিয়ে ছড়িয়ে দিতে চায়। রিয়ার যাবতীয় পড়াশোনার কাজে তাঁকে সাহায্য করত রিয়ার ছোট বোন স্নেহা রায়। এমনকি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও রিয়ার রাইটার হিসেবে রিয়ার সাথে পরীক্ষায় বসে ছিল সে।
রিয়ার বাবা পেশায় ব্যবসায়ী, মা গৃহবধূ। ঘর এবং বাইরের সমস্ত কাজ সামলে রিয়ার সর্বক্ষণের পড়াশোনা সঙ্গী ছিল রিয়ার বাবা-মা। প্রয়োজনে লিখে দেওয়া, কখনো বই পড়ে রিয়াকে বুঝিয়ে দেওয়া বিষয়ের নির্যাস। রিয়ার এই সাফল্যের কথা বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে আসছিল মা জবা রায়ের। মনে পড়ে যায় মেয়েকে নিয়ে লড়াইয়ের দিনগুলির কথা। শত ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করেও মেয়েকে প্রতিষ্ঠা করবে বলে, আজও লড়ে চলেছে এই কৃতি ছাত্রীর বাবা বিশ্বনাথ রায়।
রিয়ার নজর কাড়া সাফল্যে খুশি তাঁর স্কুল লিপিকা মেমোরিয়ালের শিক্ষিকারাও। রিয়া ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্রী এমনটাই জানাচ্ছেন তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শালিনী মুখোপাধ্যায়। শুধুমাত্র রিয়ার পড়াশোনার জন্যই নয়, এই ছাত্রী আনুগত্য, নিয়মানুবর্তিতা বরাবরই শিক্ষিকাদের মন জয় করেছে। সামনে সুদূর ভবিষ্যৎ। তাঁর এই নজরকাড়া সাফল্য তাঁকে উচ্চ শিক্ষার পথ প্রসারিত করবে বলেই মনে করছেন সবাই।