বেদান্ত চট্টোপাধ্যায়ঃ শহর বহরমপুরের পুরোনো আড্ডার পীঠস্থান কল্পনার মোড় । পুরোনো আড্ডার কনস্ট্যান্ট সঙ্গী ৪৫ বছরের পুরোনো স্বাদ । নীলরতন ধর ওরফে নিলু দীর্ঘ ৪৫বছর ধরে কল্পনার মোড়ে মানুষকে খাওয়াচ্ছেন নিজের বানানো ঘুগনি। কালের স্রোতে সময় থেমে নেই । বহরমপুর শহরের ছবিটাও দিনকে দিন বদলাচ্ছে । বদলায়নি নিলু ধরের ঘুগনির স্বাদ। এই ঘুগনি বিক্রি করেই সামলেছেন সংসার , মানুষ করেছেন ছেলে মেয়েদের । এখন দুই নাতি সুমন ও শুভঙ্কর কে নিয়ে দোকান সামলাচ্ছেন নিলু ধর ।
কল্পনার মোড়ের ‘নিলু ধরের ঘুগনি’ এখনো না খেয়ে থাকলে আপনি কিছুই খাননি, এমনটাই বলছেন শহর বহরমপুরের ভোজন রসিক মানুষ । বহরমপুর শহরের অনেক মানুষেরই রাতের বেলা রুটির সাথে, ‘নিলুর ঘুগনি’ ছাড়া নাকি জমেই না । “আমার দুই নাতি আমার ছেলের মতই । আমাকে ছাড়া ওদের চলে না ; আমিও ওদের ছেড়ে থাকতে পারিনা” ,এমনটাই জানাচ্ছেন স্বয়ং নীলরতন ধর ।আরও জানাচ্ছেন, “ যতদিন পারবো মানুষ কে ভাল খাবার খাওয়াব । লোকে হয়ত এই ভালো খাবারটুকু খেতেই আসেন আজও” ।
নিলুর ঘুগনি খেতে শুধু শহরের মানুষ নয় শহরের বাইরের বহু মানুষ ভিড় জমান । কল্পনার মোড়ের পুরানো বাসিন্দা সৌম্যদীপ সোনাই জানাচ্ছেন, “ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত সন্ধ্যে মানেই নিলু কাকুর ঘুগনি । নিলু কাকুর ঘুগনি বহরমপুরের ঐতিহ্য” । নিলুর ঘুগনি খেতে খেতে শহরের প্রবীণ নাগরিকরা জানাচ্ছেন , ‘নিলুর ঘুগনি প্রজন্মের পর প্রজন্মের গল্প’ ।
নীলরতন ধরের সাথে কথা বলতে বলতেই দেখা গেলো একজন দাদু ঘুগনি খেতে এসেছেন নাতনি কে নিয়ে । জানা গেলো নাতনি কে নিয়ে প্রায়ই আসেন ঘুগনি খেতে । এমনও অনেক ক্রেতা রয়েছেন যারা ১৯৭৮ থেকে থেকে আজ পর্যন্ত নিয়মিত আসেন দোকানে । ক্রেতাদের ভালো ঘুগনি খাওয়াতে পছন্দ করেন নিলু ধর ।
মুখে বয়সের ছাপ পরলেও হাতের রান্নার স্বাদ আজও বদলায়নি । শুধুই কী ঘুগনি, ঘুগনির সাথে পাওয়া যায় পরোটা , মাংস । ঘুগনিও রয়েছে বিভিন্ন রকম । নিরামিষ ঘুগনি, মাংসের ঘুনি, স্পেশাল ঘুগনি ।
সকাল থেকে নিজের বাড়িতেই এই ঘুগনি বানানোর কাজ শুরু করেন নিজেই, সাথে সাহায্য করেন স্ত্রী । তারপর সন্ধ্যে বেলায় ঠেলা গাড়ি করে ঘুগনির হাঁড়ি নিয়ে হাজির হন । নিলুধরের এই বিশেষ ঘুগনি খেতে প্রতিদিনই ভিড় জমান ৮ থেকে ৮০ সকলেই । কল্পনার মোড়ে এই ঘুগনির দোকান সকলেই চেনেন । যদি কেউ এখনো না চেনেন , তাঁদেরকে আমন্ত্রন জানাচ্ছে কল্পনার মোড়।