Berhampore Barack Square বহরমপুরে আচমকায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল শতাব্দী প্রাচীন গাছ। একটি বট গাছের সাথে সাথে ভেঙে পরে শিরিষ গাছও। এতো পুরনো গাছ কেন গোড়া থেকে উপরে পড়ল তা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই। এই গাছকে কি বাঁচানো যেত ? তা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন উঠছে। সুবিশাল এই গাছ শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয়। এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে অনেক জীব বৈচিত্র। কত পাখীর বাসা ছিল এই গাছে। গরমে একটু বিশ্রাম নিতে প্রতিদিন কত মানুষ এই গাছের তলায় আশ্রয় নিতেন। তবে এক লহমায় সব শেষ। কয়েক মিনিটের মধ্যেই উপরে যায় বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ারের পাশে থাকা সুপ্রাচীন বট গাছ।
শতাব্দী প্রাচীন এই গাছ কেন ভেঙে পড়ল কী জানাচ্ছেন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ-
বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক মলয় মণ্ডল তিনি এই বিষয়ে জানান, “এই গাছগুলি অনেক পুরনো। প্রায় ২০০ বছর। দীর্ঘদিন ধরে আবহাওয়ার কারণে একটা প্রভাব পরছিল। তার ওপর ধীরেধীরে পিঁপড়েরা বাসা করছিল। যার ফলে ভেতর থেকে ফাঁপা হয়ে পরছিল। এর কারণেও গাছটি ভেঙে পরতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে মাটির তলা পচে যাওয়ার কারণেও নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ফাঙ্গাস ট্রিটমেন্ট করলেও গাছগুলি আরও ভালো থাকতে পারত”।
আজ থেকে নয়। বিগত ৩ মাস ধরে এই বিশাল বৃক্ষ ধীরেধীরে মাটি ছাড়তে শুরু করেছিল। কিন্তু কীভাবে প্রশাসনের নজরে আসল না। সেই বিষয়েও উঠছে প্রশ্ন। যদিও এটি নতুন না আজ থেকে ৭ মাস আগে নভেম্বরের ২ তারিখ। টেক্সটাইল কলেজের উল্টোদিকের গাছের বিশাল বড় একটি ডাল ভেঙে পরেছিল। সাধারণ মানুষের বসার জায়গায়। সেদিনের ঘটনায় কেউ আহত হয় নি। কালকের ঘটনাতেও কারোর কোনপ্রকার ক্ষতি হয় নি। কিন্তু প্রশ্ন এখানেই প্রায় ২০০ বছরের পুরনো গাছকে কী রক্ষা করা যেত না ? তবে কী কেবল ছত্রাকের কারণে নাকি এর পেছনেও রয়েছে অন্য কারণ। এনিয়ে কী দাবি পরিবেশবিদের।
পরিবেশবিদ শুভময় মজুমদার এই বিষয়ে বলেন, “এক পিঁপড়ের কারণে গাছ নষ্ট হয়েছিল। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে গাছের তলা ভালো করে খেয়াল করলে বোঝা যাবে তলায় অনেক জল জমা আছে। যার ফলে শেকড় সমস্ত নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু গাছের ওপরের মাথা খুব ভাড়ি তাই শেকড় সমেত উপড়ে পরে গেল এই সুপ্রাচীন গাছটি। আর যায় হোক যদি আমরা জলের এই দিকটা নিয়ে না ভাবি। তাহলে আশেপাশের গাছ গুলিকেও শেষ করে ফেলবে”।
দীর্ঘদিন ধরে বহরমপুর পোস্ট অফিসের সামনে বসে ব্যবসা করেন বহু মানুষ। বেশিরভাগ চা বিক্রেতা। পাশাপাশি পোস্ট অফিসে কাজ সেরে এই তীব্র গরমের হাত থেকে রেহায় পেতে বসতেন গাছের তলায়। ঝড় বৃষ্টির ক্ষেত্রেও অনেকাংশে এই গাছগুলি বাঁচাত। কিন্তু এখন আর সেই সব কিছুই থাকবে না। বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
এই ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও আতঙ্কিত। কিন্তু তাদের মনে একটাই কষ্ট। আর দেখা যাবে এই এত প্রাচীন গাছকে। মাথার ওপর কোনরকম সুরক্ষা থাকল না। গাছ মায়ের মতন আগলে রাখে সবাইকে। তার চলে যাওয়াই একটা পুরো ইকো সিস্টেমের মরে যাওয়া। তাই আসুন গাছের যত্ননি আমরা। সাধারণ মানুষ সচেতন হলেই। সবুজ দীর্ঘজীবী হবে।