মধ্যবঙ্গ নিউজ ডেস্কঃ মায়ের জীবন ছিল চার বছরের ছোট্ট মাহি। একমুহূর্তও তাকে কাছের থেকে ছাড়া করতো না। সাজিয়ে দিত রং-বেরংয়ের জামাতে। চারিদিকে লোকের ভিড়ে সেই মাহি এখন খুঁজে চলেছে তার মাকে। কান্নাকাটি করছে। সবাইকে বলছে, মা কোথায় আছে? আমার মাকে এনে দাও।
এই ক্ষুদে শিশুকন্যাকে ঘিরে চোখের জল অনেকের। কি বলে সান্ত্বনা দেবে খুঁজে পাচ্ছেন না। সেই সময় একই ভ্যানে মুখোমুখি পড়ে রয়েছে তার মা-বাবার নিথর দেহ। মৃত্যু হয়েছে তার মাসিরও। বয়স ত্রিশের কোঠায় থাকা একই পরিবারের তিনজনের অকাল মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া বেলডাঙায়। দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা পাওয়া শিশুকন্যা মাহি ও বাড়িতে থাকা তার আরও দুই নাবালিকা দিদির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই। শুক্রবার বেলা দশটা নাগাদ বড় দিদির বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে বেলডাঙায় ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন তারা। মেয়ে মাহিকে বাইকে চাপিয়ে নিয়েছিলেন তার মা মনিকা ।
দুর্ঘটনায় প্রাথমিক আঘাত সামলে মাহি সুস্থ রয়েছে বলে পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন। মাহির মামা আজিজুল রহমান এদিন বহরমপুর হাসপাতালের মর্গে দাঁড়িয়ে বলেন, ওই ঘটনায় আমার দুই দিদি জরিনা বিবি (30), মনিকা খাতুন (28) ও জামাইবাবু আসনাল সেখের (30) মৃত্যু হয়েছে। বেলডাঙ্গাতে বড় দিদি জরিনা বিবির বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল আমার মেজদিদি ও জামাইবাবু। বাইকে করে তারা সেখান থেকে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিল। শুনেছি বেলডাঙা-বহরমপুরগামী রাস্তায় ডাম্পারের ধাক্কায় ওই ঘটনা ঘটেছে। আমার মেজো দিদির মেয়ে মাহি সুস্থ আছে। ওই দিদির বিয়ে আমাদের গ্রাম মালিহাটি কান্দরাতেই হয়েছে। ওই দিদির 2 মেয়ে অর্থাৎ অন্য দুই ভাগ্নি আমাদের গ্রামের বাড়িতেই আছে। মাহি ও ওই দুই ভাগ্নিকে কী বলে সান্তনা দেবো আমরা বুঝতে পারছি না। তারা শুধু কান্নাকাটি করছে। দুর্ঘটনায় দুই মেয়েকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ হয়ে মর্গের সামনে বসে রয়েছেন সালার থানা এলাকার কান্দরার বাসিন্দা আসলিফ সেখ। ওই পরিবারের এক আত্মীয় জানিয়েছেন, ঘটনার পর আমার জামাইয়ের মোবাইল থেকে স্থানীয় লোকেরা ফোন করে খবর দেয়। প্রথমে আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি। এখানকার পুলিসের মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ করি । পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনায় ডাম্পার চালকের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে । বাইকে সওয়ারি হওয়ার সময় হেলমেট পড়বার বিষয়ে অনেকেই সচেতন নন। বাইকে অতিরিক্ত যাত্রী না চাপানোর বিষয় নিয়েও অনেকে সচেতন নয়।