মাসুদ আলি, সামশেরগঞ্জঃ কথায় আছে, রূপ মেলে মন মেলে মানুষ মেলে না। কিন্তু মিলল সেই মানুষের দেখা। যাঁর রয়েছে মান ও হুঁশ। কে ইনি? আর কেউ নন একজন অতি সাধারণ একজন অটো চালক। নাম বাবলু সেখ। রোজ মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জ রুটে অটো চলান বাবলু। তবে শুক্রবার ছিল বাবলুর পরীক্ষার দিন। নিজের সাথে নিজের পরীক্ষা। একদিকে টাকার লোভ আর অন্যদিকে সততা। তবে শেষে পর্যন্ত জিতে গেল সততাই।
শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে ফারাক্কা কলেজে পরীক্ষা দিতে বেড়িয়েছিলেন জঙ্গিপুরের কলেজের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া অরিন্দম মন্ডল। পথে পকেট থেকে পরে যায় মানিব্যাগ। সেখানে প্রায় দশহাজার টাকা সহ ছিল ব্যক্তিগত নথিও। সব খুইয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পরে অরিন্দমের। তিনি জানান, “আমি কলেজে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলাম। এই টাকাটা বাড়ি থেকে বাবা পাঠিয়েছিল। মাসের খরচা, পড়াশোনার খরচা সব কিছুই এই টাকার ওপর নির্ভর করে করতে হত। কিন্তু তখন হটাত সেদিন পকেট থেকে পরে যাওয়ার পর আমার যেন চোখের সামনেটা অন্ধকার হয়ে যায়। বুঝেই উঠতে পারছিলাম না কী করব এবার।”
সেখানে দেবদূতের মতো খুইয়ে যাওয়া মানিব্যাগ রাস্তায় পরে থাকতে দেখেন অটোওয়ালা বাবলু। সেই মানিব্যাগ দেখতে পেয়েই ভোগ নয়, সততার পরিচয় দিলেন সামসেরগঞ্জের জয়কৃষ্ণপুর ঘোষপাড়া গ্রামের অটোচালক বাবলু শেখ। কলেজ ছাত্রের হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগ সহ ১০ হাজার টাকা নিয়ে ডাকবাংলা ট্র্যাফিক পুলিশ অফিসে গিয়ে জানান বিষয়টি। মানিব্যাগ থেকে অরিন্দমের নাম পরিচয় পেয়ে পুলিশ তাঁকে যোগাযোগ করে টাকা সহ ব্যাগটি ফিরিয়ে দেয়। অটোচালক বাবলু সেখ জানান, “আমি অটো নিয়ে প্যাসেঞ্জারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হটাত নজর পড়ল কিছু মানুষ রাস্তা থেকে টাকা কোরাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি তাঁকে ধরি। আর টাকাগুলো ফেরত নিয়ে নি। দিয়ে থানায় গেলাম। পুলিশ বলল সব জমা দিতে কিন্তু আমি বলেছিলাম আমি টাকা রাখব যার টাকা তাকেই আমি ফেরত দেব। পুলিশ আমার কথা শোনে এবং সেই মতন লোকটার খোঁজ করা হয়।”
এবং শেখের এই সততায় মুগ্ধ মানিব্যাগের মালিক অরিন্দম মণ্ডল। ‘বর্তমান দুনিয়াই যখন মানুষ মানুষের ক্ষতি করতে দু’বার ভাবে না। সেখানে এই বাব্লু দা’র মতন মানুষরাও রয়েছেন। যেটা সত্যি খুব ভালো লাগল।’ বাবলুকে বাহবা দিয়েছেন পুলিশের কর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই।