এখন খবরমধ্যবঙ্গ নিউজপরিবেশবিনোদনহেলথ ওয়াচখেলাঘরে বাইরেলাইফস্টাইলঅন্যান্য

Ashima Vyadh Khadi Mela: অসীমা ব্যাধরা হস্তশিল্পের নীরব…

Published on: December 6, 2025
Ashima Vyadh Khadi Mela

 Ashima Vyadh Khadi Mela বহরমপুর খাদি মেলা ২০২৫-২৬

Ashima Vyadh Khadi Mela সেই চরকা টানা খাদি। স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ। মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়। টানা চরকা টেনে চলেছেন আজকের মায়েরা। তার পাশে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বাড়ি থেকে তৈরি করে আনা পোশাকের সম্ভার নিয়ে হাজির। ছোট ছোট স্টল মাঠ জুড়ে। বহরমপুরের (Berhampore) ব্যারাক স্কোয়ার যেন নক্সী কাঁথার মাঠ। প্রত্যন্ত এলাকার গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের হাতের তৈরি সামগ্রী নিয়ে এসেছেন মহিলা কারিগররা। তড়তিপুরের গামছা, রুমাল সহ বিভিন্ন রকমের তাঁদের সৃষ্টি সম্ভারের নকশায় যেন আলো ঝরছে ব্যারাক স্কোয়ারে। সেখানেই কাজ করে চলেছেন গ্রাম-বাংলার হস্তশিল্পের (Handicrafts) নীরব কারিগর অসীমা ব্যাধরা।

আরও পড়ুনঃ Dhurandhar Berhampore: কাঁপাচ্ছে রণবীর, ‘ধুরন্ধর’ উন্মাদনা বহরমপুরেও

Ashima Vyadh Khadi Mela বাংলার প্রতিটি গ্রাম যেন অজানা অজস্র গল্পের ভান্ডার। সেই গল্পের একটি চরিত্র মুর্শিদাবাদের বলরামপুরের আখেরমিল গ্রামের অসীমা ব্যাধ। যিনি শৈশব থেকে হাতে গড়া শিল্পের সঙ্গে বেঁচে আছেন। তাঁর জীবনের জার্নি কেবল একটি পেশার ইতিহাস নয়। বরং গ্রামের ঐতিহ্য, আত্মনির্ভর এবং পরিবারের শিল্পচর্চার উদাহরণ। বহরমপুর খাদি মেলা ২০২৫-২৬ এ  গ্রাম বাংলার মহিলা হস্ত শিল্পীরা এসেছেন। তাঁদের মধ্যে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন অসীমাও। সেখানেই তিনি তাঁর শিল্পী জীবনের সীমাহীন রঙ নিয়ে মধ্যবংগ নিউজের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বললেন।

Ashima Vyadh Khadi Mela

 Ashima Vyadh Khadi Mela শুনুন আখেরমিল গ্রামের অসীমা ব্যাধের কথা

Ashima Vyadh Khadi Mela চরকার প্রদর্শনীর ঠিক সামনে মুক্ত হাটে বাঁশ, বেতের জিনিস বিক্রি করছেন অসীমা। বাজার থেকে কম দামে বেতের বোনা জিনিস কিনতে অনেকেই উঁকি দিচ্ছেন তাঁর কাছে। জানালেন, তিনি কাজ শেখেন শৈশবে। তাঁর পরিবারের পুরনো পেশা ছিল বাঁশ ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বানানো। বাড়ির বড়রা তাঁকে নকশা দেখা, কাটাকাটি, রঙ করা সবই হাতে-কলমে শিখিয়ে দিয়েছেন। সেই শেখা আজ তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বলেন, ‘‘আগে ছুরি, কাঠের জিনিস, খেলনা বানাতাম। সব নকশা মেনে শিখিয়েছিল। তখন থেকেই এই কাজে আছি।’’

Ashima Vyadh Khadi Mela এই শিল্পের সবচেয়ে বড় ভিত্তি তাঁর পরিবার। স্বামী-স্ত্রী থেকে সন্তানরা, এমনকি শ্বশুর-শাশুড়িও কাজের অংশীদার। প্রায় দশ থেকে বারো জন সদস্য মিলে তাঁদের ছোট্ট কর্মশালাটিকে পুরোপুরি পারিবারিক শিল্পকেন্দ্রে পরিণত করেছে। কেউ কাঠ কাটেন, কেউ রং করেন, আবার কেউ শুকোনোর কাজ করেন। তাঁদের সংসার আর শিল্প দুটি একই সুতোর বাঁধনে আবদ্ধ। তাঁদের তৈরি সামগ্রী শুধু গ্রামে বিক্রি হয় না। ত্রিপুরা, অসম এবং দেশের নানা প্রান্তে তাদের কাজ পৌঁছে যায়। মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতার বিভিন্ন সরকারি মেলায়ও তাঁরা নিয়মিত অংশ নেন। বর্তমানে তাঁর ছেলে কলকাতার মেলায় বসে তাঁদের পণ্য বিক্রি করছেন। এই ছোট্ট গ্রাম থেকে তাঁদের শিল্প শহরের ব্যস্ততার চত্বরে জায়গা করে নিয়েছে।

Ashima Vyadh Khadi Mela তাঁদের কাজের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো আত্মনির্ভরতা। বাজার থেকে তাঁরা শুধু বাঁশ কিনে আনেন। বাকি রঙ, নকশা, কাটাকাটি সবই ঘরে তৈরি। বাঁশের এক টুকরো কাঠিকে তাঁরা রূপ দেন খেলনা, সাজসজ্জার সামগ্রী বা দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসে। কারওর তৈরি জিনিস এনে তাঁরা বিক্রি করেন না। সবটাই তাঁদের নিজস্ব পরিশ্রমের ফসল। এই শিল্পে সময় ও দক্ষতা দুইয়েরই বিনিয়োগ আছে। বাঁশ কাটতে সময় লাগে, এরপর তা শুকোনো, পরে রং করা পুরো প্রক্রিয়াটি দুই থেকে তিন দিন পর্যন্তও সময় নেয়। কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ধৈর্যের কাহিনি ও গতানুগতিক রুটিন। যা অবাক করা তাঁদের পণ্যে আর্থিক বিনিয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে। শুধু বাঁশ কিনে আনাই একমাত্র খরচ। কিন্তু বাজারে তা ৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। প্রতিটি শিল্পকর্মেই রয়েছে সময়, দক্ষতা এবং নীরব শ্রমের মূল্য।

Ashima Vyadh Khadi Mela অসীমা বহরমপুরের প্রতিটা খাদি মেলায় আসেন। তিনি বলেন, মেলায় বিক্রি ভালো হয়, মানুষের আগ্রহও রয়েছে। প্রতিবারই তাঁরা এই মেলায় উপস্থিত থাকেন। লকডাউনের আগে তাঁদের মেলায় উপস্থিতি নিয়মিত ছিল। কিন্তু করোনা অতিমারীতে কাজ বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের মতো ছোট কারুশিল্পীরা বিপদের মুখে পড়েন। পুনরায় কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে। তবে মনোবল তাঁরা হারাননি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার শিল্পে প্রাণ ফিরে আসে ।

 Ashima Vyadh Khadi Melaসরকারি সাহায্য মেলে?

Ashima Vyadh Khadi Mela অসীমা জানিয়েছেন,সরকারি মেলায় অংশগ্রহণ করলেও সাহায্যের পরিমাণ সীমিত। খাবার ও কিছু খরচের সহায়তা তাঁরা পান। তবুও সেই স্বীকৃতি তাঁদের কাছে সম্মানের জায়গা তৈরি করে। কারণ তাঁদের শিল্প শুধু পণ্য নয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা। আজকের সময়ে হস্তশিল্পের মূল্য নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। কিন্তু অসীমা ব্যাধের মতো কারিগররা নীরবে কাজ করে যান, তাঁদের গল্প আমরা খুব কমই জানি। শহরের বাজারে তাঁদের তৈরি সামগ্রী সাজানো থাকে, কিনে নেওয়া হয়, ব্যবহার হয়। অথচ পিছনের মানুষটি অচেনাই থেকে যান। অসীমার জীবন তারই প্রতিফলন। তাঁর গল্প দেখায়, শিল্প কেবল আয়ের পথ নয়, তা জীবনযাত্রার ছায়া, সংস্কৃতির বাহক। অসীমারা প্রমাণ করেন, গ্রামবাংলার হাতের কাজ এখনও জীবন্ত, এখনও সম্মানের যোগ্য। তাঁদের পরিশ্রম, ধৈর্য ও প্রতিভাই বাংলার হস্তশিল্পকে টিকিয়ে রাখছে।

Ashima Vyadh Khadi Mela এই শিল্পী পরিবারগুলোর প্রতি সমাজের দায়িত্ব আছে। তাঁদের কাজকে মূল্য দেওয়া, তাঁদের গল্পকে সামনে আনা এবং তাঁদের অস্তিত্বকে শ্রদ্ধা করা। কারণ তাঁদের হাতে তৈরি প্রতিটি জিনিস শুধু পণ্য নয়। সেটি বাংলার মাটি, মানুষের স্মৃতি আর জীবনের রঙ নিয়ে বেঁচে থাকে।

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now