নিজস্ব সংবাদদাতা, কান্দিঃ এ যেন ধনুকভাঙা পণ। রাহুল গান্ধীকে নিজের দোকানের মিষ্টি খাইয়েই ছাড়লেন অরুণ। অরুণ দাস। বহরমপুর টেক্সটাইল কলেজ মোড়ের প্রসিদ্ধ মিষ্টি ব্যবসায়ী। এবার সোনিয়া পুত্রকে মুর্শিদাবাদের ছানাবড়া খাওয়ালে তাঁর হ্যাট্রিক হবে। হ্যাট্রিক হল। তবে বেগ পেতে হল বেশ। পৌষ সংক্রান্তির দিন বহরমপুরের সাংসদের বাড়ি গিয়ে আমতা আমতা করে জেনে এসেছিলেন রাহুল আসছেন।
কিন্তু এবারও মিষ্টি খাওয়ানো সম্ভব কি না তা অবশ্য নিশ্চয়তা ছিল না। তবুও বুক বেঁধেছিলেন আশায়। তৈরি করেছিলেন সাত ও দশ কেজির ছানাবড়া। বৃহস্পতিবার বহরমপুরে রাহুল গান্ধীর রোড শোয়ের সকাল থেকেই ধুয়ে মুছে ফুল মালায় সাজিয়েছিলেন দোকান। অপেক্ষা করেছেন সকাল থেকে। দুপুরে বাড়ি পর্যন্ত খেতে যাননি। যখন ঘড়িতে রাত সাতটা পেরিয়ে গিয়েছে রাহুল গান্ধীর হুড খোলা লাল গাড়িটি চোখের সামনে দিয়ে বেড়িয়ে গেল। কাতারে কাতারে লোকজন অপেক্ষা করছেন ইন্দিরার নাতিকে একটিবার চোখে দেখবার জন্য তারই দোকানের সামনে।
তাড়িয়ে তাড়িয়ে ভিড় দেখেছেন। বুকের ভেতর ছটফট করেছে। একবার শুধু একবার রাহুল গান্ধীর হাতে মিষ্টির হাঁড়ি তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু নাহ। কথাতেই আছে প্রত্যেক সকাল আলাদা। সেই মন্ত্রে ভর করে বৃহস্পতিবার যে কাজ তিনি পারেন নি সেই কাজ সফল করতে ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়েন। স্নান সেরে কচি কলাপাতা রঙের ওয়েস্টকোট চাপিয়ে সোজা ফোন করেন পরিচিত কংগ্রেস নেতাকে। সেই মতো গোকর্ণে ছুটে গিয়েছেন। মিষ্টির হাঁড়ি হাতে রাহুল গান্ধীর জন্য সাজানো মঞ্চের পাশে অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু রাহুল সেখানে ও আসেননি।
দূর থেকে দেখতে পেয়েছেন রাহুলকে সঙ্গে করে বাংলার কংগ্রেস সভাপতি এগিয়ে আসছেন সামনের দিকে। একবার রাহুল গান্ধীর সঙ্গে হাত মেলাবার আপ্রাণ চেষ্টা রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের। উদ্দাম উদ্দিপনায় সকলেই ভুলেছেন নিত্যদিনের কাজ। মরিয়া হয়ে ছুড়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ ফুলের তোড়া। সেই ভিড় সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন নিরাপত্তা রক্ষীরা। সব বাধা ঠেলে এগিয়ে গেলেন অরুণ। হাতে তুলে দিলেন মিষ্টির হাঁড়ি। প্যাকেটেও কিছু দিলেন। নজর এড়ালো না অধীরের ও। পাশ থেকে জানিয়ে দিলেন এই সেই অরুণ, যাঁর দোকানে ২০০৯ ও ২০১৪ সালে বসে ছানাবড়া খেয়েছিলেন রাহুল।।সঙ্গে ছিলেন জঙ্গিপুরের প্রাক্তন সাংসদ ও ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
তাঁকে উদ্দেশ্য করে হাত নাড়লেন রাহুল। একগাল হেসে পাল্টা হাত নাড়লেন অরুণ। মুখোমুখি হয়ে বললেন, “আমি মিষ্টি ব্যবসায়ী। আমার মিষ্টি খাইয়েই আনন্দ।”