নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ লোকসভা নির্বাচনের মুখে গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে ফের বেআব্রু তৃণমূল । সালার থানার পূর্ব গ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে সুখচাদ শেখ নামে প্রবীণ এক তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। পুরনো বিবাদের জেরে খুন বলে দাবি করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সেদিনের ঘটনাটিকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। সামনে আসে তৃণমূলের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর ও ভরতপুর ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বন্দ। মৃতের ছেলে মিঠু সেখ পূর্ব গ্রামের বুথ সভাপতি। তাঁর অভিযোগ, সে তালিবপুর প্রধানের রবি সেখের অনুগামী হওয়ায় ব্লক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের অনুগামীরা তার বাবাকে পিটিয়ে খুন করেছে।
মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে সালার থানায় মোস্তাফিজুর রহমান সহ ১৭ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ রাতেই তালিবপুর অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি মেহেরাজ সেখ, মজিত সেখ ও সুরজ সেখকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের সাতদিনের হেফাজতে চেয়ে শুক্রবার আদালতে তুলেছিল পুলিশ। যদিও বিচারক চারদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে পুলিশের এফআইআরে নাম ওঠে মোস্তাফিজুর ওরফে সুমনেরও। সুমন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের মৎস কর্মাধ্যক্ষও। যা নিয়ে এলাকায় ফের অশান্তির আঁচ করছে পুলিশ।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই বিধায়ক অনুগামী ও সুমনের মধ্যে ছুতোয়নাতায় অশান্তি লেগে থাকে ভরতপুর এলাকায়। এলাকায় কে আসল ছড়ি ঘোরাবে তাই নিয়ে নেতাদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও কম শোনেননি জেলাবাসী। অভিযোগ, দুই নেতার দ্বন্দের জেরে দলের একাধিক কর্মসূচি দুভাগে উদযাপিত হয়। বিধায়ক এড়িয়ে চলেন ভরতপুর ২ এর ব্লক সভাপতিকে।কম যান নি ব্লক সভাপতিও। দুই নেতার কোন্দলের কাহিনী পৌঁছেছিল তৃণমূল নেত্রীর কানেও। এলাকার ব্লক সভাপতি বদলেরও দাবি তোলেন হুমায়ুন। দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমক খেতে হয়েছে তাঁকে একাধিকবার। কিন্তু সম্প্রতি জেলায় একাধিক ব্লকের দলীয় সভাপতি বদল হলেও ভরতপুর ২ এর ব্লক সভাপতি বদল হয় নি। যা নিয়ে হুমায়ুন বলেছিলেন, “দল যা ভাল বুঝেছে তাই করেছে।”
নিজের এলাকায় প্রকাশ্যে দলীয় কর্মী খুনে বিধায়ক বিরোধী তৃণমূল নেতার নাম জড়ানোর ঘটনায় অবশ্য সতর্ক হুমায়ুন বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কিছু বলবার নেই। তবে যা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। আইন আইনের পথে চলবে।” তিনি আরও বলেন, “যার বাড়ির লোক খুন হয়েছে তারা কার নাম দিয়েছে পুলিশকে সেটা তাদের ব্যাপার। আমি জনপ্রতিনিধি। যাদের নাম বলছেন তারা সবাই ২০২১ সালে আমার হয়ে ভোট করেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে একটা বিরোধ হয়েছে ঠিকই। তবে মনে রাখতে হবে হুমায়ুন কবীর খুন সন্ত্রাসের রাজনীতি করে না। মানুষকে ভালবেসে তাদের মতামত মেনে রাজনীতি করে।”
সুমন বলেন, ” একটা গ্রাম্য বিবাদের জেরে অনাকাঙ্খিত খুন হয়েছেন দলের কর্মী। কিন্তু কারা আমার নামে অভিযোগ করছেন। এর পেছনে তাদের কী অভিসন্ধী আছে তা জানি না। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই সত্যিটা প্রকাশ্যে আসবে।” তিনি আরও বলেন, ” বিধায়কের সঙ্গে রাজনৈতিক মতান্তর থাকলে একজন মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে যারা রাজনীতি করছেন তারা ঠিক করছেন না। এটা না হওয়াই ভালো।”
দলের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সংগঠনের জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, ” এটা কোনও রাজনৈতিক খুন নয়। একটা খেলাকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ তদন্ত করছে। যার নামই থাকুক তৃণমূল কোনও অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেয় না। যারা দোষী তারা শাস্তি পাবে।”