ঋত্বিক দেবনাথঃ আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছে থাকাটা খুব দরকার। ইচ্ছের জোরেই যেকোন প্রতিকূলতাকে কাটানো সম্ভব। তেমনই জীবনের প্রতিবন্ধকতার মতন প্রতিকূলতা কাটিয়ে। নজিরবিহীন জেদের উদাহরণ তৈরি করলেন মুর্শিদাবাদের Murshidabad এক পড়ুয়া। চোখে তার হাজার স্বপ্ন। মনে অটুট ভরসা। সেই ভরসা এবং কঠোর পরিশ্রমকে সঙ্গী করে। আবারও সাফল্যের মুখ দেখল। ওই পরীক্ষার্থী মুর্শিদাবাদের আলম রহমান (Alam Rahaman)। ২০২৪ এর উচ্চমাধ্যমিকে Higher Secondary পায়ে লিখে ৪০২ নম্বর পেয়েছে সে।
আলম ছোট থেকেই প্রতিবন্ধী । হাত তার পরিপূর্ণ না। তাহলেই বা কী ? রাস্তা কখনও বন্ধ হয় ? উত্তর হয়ত না হয় না। সারাবছর আলমের নার্ভের ওষুধ চলে। দামি ওষুধ এবং সেই সমস্ত ওষুধ কেনার জন্য অর্থ উপার্জনকারী সংসারে একজনই। তিনি আলমের বাবা ফিরোজ মহম্মদ । এছাড়াও পরিবারে রয়েছেন আলমের মা এবং দুই বোন। মা বাড়িতে থেকেই সংসার সামলান। আলমের নামের সঙ্গেই তার আম্মির নামের মিল রয়েছে। আম্মির নাম আলমআরা বেগম। ছেলের লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে আলমের মা বলেন, “ ছোট থেকেই ছেলে ইচ্ছে শক্তি খুবই প্রবল। পড়াশোনার বিষয়ে কখনও থেমে থাকেনি। আমারা আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকতে পারি। কিন্তু কোনোদিনও ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার ইচ্ছেটাকে কমতে দিইনি”।
আলমই Alam Rahaman পরিবারের ভরসা । কঠোর পরিশ্রম করেই ২০২৪ এর উচ্চ মাধ্যমিকে ৮০.৪% পেয়েছে। এরপর কী করতে চাও ? সেই প্রশ্নের উত্তরে আলম বলে, “ আমি বিএসসি নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। যেহেতু সাইন্স সাবজেক্ট খুব ভালোবাসি। তাই এরপরেও সাইন্স নিয়েই পড়ার ইচ্ছে রয়েছে”।
এমনও হয়েছে পড়তে পড়তে শরীর খারাপ করায় পড়া মাঝপথেই পড়া থামাতে হয় তাকে। আবার কড়া কড়া ওষুধের ডোজ। তাও সে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছে টাকে দমতে দেয়নি। আলম বলে, “ আমার সেইভাবে পড়াশোনার নির্দিষ্ট টাইম ছিল না। শরীর ভালো থাকলে পড়তে বসতাম । আবার খারাপ হলে বন্ধ করতাম। কিন্তু সেই সময়ও আমি ভাবতাম কখন আবার পড়তে বসব” । সত্যি আলমকে অনেক বড় হতে হবে। অনেক পথ দূর যেতে হবে। তাই লড়াকু আলম রহমান মাধ্যমিকের পর সাইন্স নিয়েছিল। তারপর থেকে কেবলই কঠোর পরিশ্রম। ফিরে তাকাতে হয়নি
আলমমের মা তার এই পরিশ্রমের বিষয়ে বলেন, ” ছোট থেকেই প্রতিবন্ধী সে । কিন্তু তাও আমাকে বলত। যেভাবেই হোক পড়াশোনা চালাতে হবে। পড়তে হবে। ”
আলম কোনদিনও তার এই প্রতিবন্ধকতাকে জীবনে এগিয়ে চলার পথে বাধা হিসেবে আসতে দেয় নি। মাধ্যমিকে কান্দির আলম রহমান উপযুক্ত লেখক না পাওয়াই নিজের পা দিয়ে লিখেছিল। সেইবার সে পেয়েছিল ৬২৫। আলমকে সম্মানান জানিয়েছিল ইমাজিন কমিউনিটি মিডিয়াও।
এবার সেই আলম আবারও নিজের পায়ের জোরে ২০২৪-এর উচ্চ মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৪০২। আলম রহমান কান্দির বাসিন্দা। কান্দি রাজ হাই স্কুলের পড়ুয়া সে। ক্রমাগত লড়াই এবং প্রতিকুলতার মধ্যদিয়েই নিজের জীবনে বড় বড় সাফ্যল্য অর্জন করছে।
সকলকে উৎসাহ দিলে আলম Alam Rahaman বলে, “ মনোবল বাড়িয়ে রাখো । সাফল্য আসবেই” । আলম পরীক্ষা শেষে আশা করেছিল ৯০% নাম্বার পাবে। আশা পূরণ হয়েছে তার। এরপর নতুন পথ চলা শুরু হবে। এই পথ চলায় সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস চাই সে। কারণ এরপর আরও অর্থ লাগবে। আলমের পরিবারের এটাই আপাতত প্রাথমিক চিন্তা।