দেবনীল সরকার, বহরমপুরঃ ইতিহাসের জেলা মুর্শিদাবাদ। অনেক যুদ্ধের শুরুয়াত দেখেছে এই জেলা। ‘যুদ্ধ আসলে আসলে নতুনের কথা বলে না, যুদ্ধ বলে ধবংসের কথা’ – একথা সবাই জানেন। কিন্তু আজ এই সময়েও শহর বহরমপুর থেকে ৫৩০১ কিলোমিটার দূরে মধ্যপ্রাচ্যরে কোনও শহরে যুদ্ধ চলছেই। প্রতিনিয়ত নিয়তির বলি হচ্ছে বাচ্চা থেকে বুড়ো, স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে। যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় হাসপাতাল থেকে স্কুল কলেজ সবই শেষ।
তবুও থমকে যাওয়া জীবন থেকে মুক্তির আশায় বুক বেঁধেছে মানুষ। বরাবরের মতো। কারণ, ধ্বংস না, সৃষ্টিই পৃথিবীর নীতি। আর সেই সৃষ্টির নেশাতেই শনিবার বিকেলে ‘যুদ্ধের বিপরীতে’ দাঁড়ালেন মুর্শিদাবাদ জেলার একদল মানুষ। বহরমপুরের রাস্তায় নামলেন তাঁরা। হাতে রং, তুলি বা স্কেচ পেন। সামনে সাদা ক্যানভাস ভরিয়ে তুললেন যুদ্ধ বিরোধী ছবিতে অক্ষরে। ‘রক্তপাত নয় জীবন চাই’ লিখলেন শহরের চিত্রশিল্পী কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত। ছবিতে ‘তরোয়ালে ফুটল ঘাসফুল’। ‘যুদ্ধ নয় শান্তি চাই’ লেখা হল শিল্পী মিজানুর খানের লাল স্কেচ পেনে। সাথে উকুলেলেতে ‘আরও বেঁধে বেঁধে থাকার’ গান গাইল তরুণ শিল্পী অর্কপ্রভ। না কোনও প্রথাগত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়। পথের মাঝেই ‘সিরিয়াস কথা’ বলার পরিসর করল একদল মানুষ। কেউ এসে পড়লেন কবিতা। কেউ বললেন নিজের কথা। শহর বহরমপুরের রবীন্দ্রসদনের উলটো দিকে, সঞ্জয়দার চায়ের দোকানের পাশে ‘সাংস্কৃতিক অঙ্গন’-এর খোলা মঞ্চে গোল করে বসে, চলল ঘণ্টা চারেকের প্রদর্শনী। আলোচনা, গান, ছবি, কবিতায় উঠে এল ‘যুদ্ধের বিপরীতে’ যাবার কথাবার্তা।
বিরাট নলওয়ালা বন্দুকের আগায় এসে বসেছে লাল ঠোঁটের ছোট্ট ফিঙ্গে, কোথাও শিশুর মরদেহ দু’হাতে তুলে বাবার হাহাকার, গ্রেনেডের হুঁক থেকে উঠছে সদ্য ফোটা চারাগাছ, একটা আস্ত যুদ্ধবিমান মোড়া রয়েছে ব্যান্ডেজে, বন্দুকের গুলটিতে করে নিক্ষেপ করা হবে একগুচ্ছ ফুল – এগুলি শুধুই ভাবনা নয়। কালি কলম তুলিতে সাদা কাগজে ফুটিয়ে তুলেছেন জেলার দুই চিত্রশিল্পী কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত ও মিজানুর খান। এই ছবি দেখতে ভিড় করেছিলেন শহরের মানুষ। এসে খানিক সময় কাটালেন, নিজের মতামত রেখে গেলেন। শহর বহরমপুরের মানুষ সাক্ষী থাকলেন এক পথ প্রদর্শনী, সভার।.
যুদ্ধ কবে থামবে আমরা জানি না। কিন্তু ইতিহাস মনে রাখবে, যখন মধ্যপ্রাচ্যের এক ছোট্ট শহর গাজায় থরে থরে সাজানো হচ্ছিল মৃতদেহ। রাস্তায় হন্যে হয়ে অভুক্ত মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তখন ইতিহাসের এই শহরে তাঁদের করুণ পরিস্থিতি নিয়ে শহরের মানুষ চর্চা করেছিল, ছবি এঁকেছিল, গান গেয়েছিল, কবিতা পাঠ করেছিল, এক হয়েছিল কিছু নিরীহ প্রানের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। শনিবার সন্ধ্যায় এই শহরের একদল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ দাঁড়িয়েছিল ‘যুদ্ধের বিপরীতে’।