মে দিবসে সবার ছুটি। আমাদের ছুটি নেই

Published By: Madhyabanga News | Published On:

দেবনীল সরকার, বেদান্ত চট্টোপাধ্যায়ঃ  ” আজ মে দিবস সবার ছুটি। আমাদের ছুটি নেই। আজও টানা  কাজ” বহরমপুরের সুতীরমাঠে কাজের মাঝেই বলছেন বছর চল্লিশের অরবিন্দ সরকার । “কাজ প্রতিদিন করতেই হবে। সংসার আছে । ছেলেমেয়ে আছে। ছুটি নিলে চলবে ?”, সাফ লজিক অরবিন্দ সরকারের। স্কুল ছাড়ার পরেই লেগে পড়েছেন নির্মাণ শ্রমিকের  কাজে। সোমবার সকালেও প্রতিদিনের মতো কাজে লেগে পড়েছেন সহকর্মীদের নিয়ে।  মে দিবসের সকালে বহরমপুরের রাস্তায় দেখা হল বছর চব্বিশের নাজিম শেখের সাথেও। সিমেন্টের বস্তা কাঁধ থেকে নামিয়ে যুবকের বক্তব্য, “বাড়তি আজ কিছুই না। বাড়তি বলতে প্রতিদিন বাজারের দর”। তাই ছুটি বাড়তি নেই।

কিছুটা এগিয়ে লালদিঘির মোড়ে বাইক থামিয়ে জলঙ্গির বাসিন্দা রাণা ইসলাম বললেন, ” আমাদের তো পি এফ, গ্র্যাচুইটি কিছুই নেই। কাজ করি, কিন্তু স্থায়ী রোজগার নেই। আমাদের জন্যই নাকি মে দিবস। কিন্তু আমার তো ছুটি নেই”। রাণার পিঠে তখন ভারী ব্যাগ। একটি ডেলিভারি সংস্থার কর্মী তিনি দ্রুত পৌঁছে দিতে হয় গরম খাবার থেকে হরেক রকম পার্সেল। পিঠে ভারী ব্যাগের বোঝায় কষ্ট হলেও কিছুই করার নেই। ছুটছেন রাণা।

সোমবার সারা বিশ্বজুড়ে  পালিত হচ্ছে   মে দিবস। ১৮৮৬ সালে এই দিনেই  আমেরিকার শিকাগো শহরে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘট আন্দোলনে নেমেছিলেন শ্রমিকরা । ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেটে শ্রমিকদের সভায় পুলিশের আক্রমণে বহু শ্রমিক নিহত হন, গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দেওয়া হয় চার শ্রমিক নেতাকে। পরে ১৮৯০ সালের ১ মে থেকে গোটা দুনিয়ায় শ্রমিকরা মে দিবস উদ্‌যাপন শুরু করেন । আমাদের রাজ্যেও শাসক, বিরোধী সব দলই মে দিবস পালন করে শ্রমিক দিবস হিসেবে। এই বছরও ঘটা করে পালিত হচ্ছে মে দিবস।

কিন্তু অসংগঠিত অংশের শ্রমিকরা এখনও মে দিবসের আঙিনার বাইরে। নেই নূন্যতম মজুতি, নেই সামজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্যবীমা। লাফিয়ে বাড়ছে বাজারদর। তাই অনেক শ্রমিককেই করতে হচ্ছে বেশি কাজ কিন্তু তাও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। কাজের অভাবে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে লক্ষলক্ষ শ্রমিক  পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে জেলার বাইরে কাজ করতে যান। প্রশ্ন উঠছে তাদের নিরাপত্তা নিয়েই। এসবের মাঝেই খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, খুব একটা ভালো নেই আমাদের চারপাশের শ্রমজীবী মানুষও। নিত্যদিনই যাদের লড়াই।