দেবনীল সরকারঃ ১১৭ বছর ধরে দুর্গাপুজো হচ্ছে জীবন্তীর মিত্র বাড়িতে। গত দুবছর করোনার প্রকোপে একটু থমকে গেলেও, এবছরের পুজোয় আবার চেনা ছবি ফিরেছে মিত্র বাড়িতে। হোম যজ্ঞ, খাওয়া দাওয়া, ঢাক এবং বাংলার মাটির ছবি – সব মিলিয়ে জমজমাট বনেদি বাড়ির পুজোর ।
কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন এই পরিবারের প্রায় সবাই। বাড়ি আগলে একাই থাকেন দীপ্তি দেবী, এই বাড়ির কর্ত্রী। পুজোর ক’দিন আনন্দের সীমা থাকে না তাঁর। ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনী, নাত বউ, নাত জামাই আরও সবাইকে, যাঁরা বছরের অন্য সময়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন বিভিন্ন প্রান্তে তাদেরকে এক ছাদের তলে পেয়ে ভীষণ খুশি তিনি। মায়ের মূর্তির সামনে বসে হোমের আয়োজন করতে করতে বলেন তিনি।
উনিশ শতকের শেষের দিকে আদি বাড়ি বর্ধমান থেকে জীবন্তী চলে আসেন সেখানকার মিত্র পরিবার। এই পরিবারের ডাক্তারদের সুনাম ছিল জেলা জোড়া। আদি বাড়ির প্রথা মেনে জীবন্তীতেও শুরু হয় দুর্গা পুজো। সেই থেকেই এই বাড়ির বিশাল ঠাকুর দালানে হচ্ছে মায়ের পুজো। এই পুজোকে কেন্দ্র করে মিত্র পরিবার তো বটেই, জীবন্তীবাসীরও উচ্ছাসের শেষ থাকে না। সবাই মিলে, গোটা গ্রাম একত্রিত হয় পুজো কাটান এখানে।
বাড়ির ছেলে, অনিব্রতবাবুর কথায় উঠে আসে পুরোনো দিনের কথা। তিনি বলেন, তাঁর ঠাকুমা শ্রীমতী আতর মোহিনী দাসী – কেই জীবন্তীর এই পুজোর কান্ডারী বলা চলে।কারণ তাঁর বাপের বাড়িতে হতো এই পুজো কোনো একবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে তাঁর বাপের পুজো স্থানান্তরিত হয় তাঁর শ্বশুর বাড়ি অর্থাৎ এই মিত্র বাড়িতে। তবে থেকেই হয়ে আসছে পুজো। চার প্রজন্ম ধরে পুজোর আয়োজন করছে মিত্র পরিবার। অনিব্রতবাবু আরও বলেন, “ পুজো আমাদের রিচার্জের মত। একবছর শেষ হতে না হতেই আমরা পরের বছরের প্ল্যান করে ফেলি। কীভাবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এই পুজোকেও ধূমধাম করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তার! ”
বাড়ির আরও এক কনিষঠ সদস্য ওঙ্কার মিত্র, যিনি মধ্যপ্রদেশের অনুপপুরে কর্মরত। পুজোর ছুটিতে দেশে ফিরেছেন তিনি। বলেন, “ এবছর আমাদের একটি বিশেষ উদ্যোগ ছিল যা হল আমরা বাড়ির ছেলেরা সবাই একই টিশার্ট ও মেয়েরা লাল পার সাদা শাড়ি পরেছি। ছবিও তোলা হয়েছে। ”
নবমী পুজোর পর মিত্র বাড়ির চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী ছিল মধ্যাহ্ন ভোজনের ব্যবস্থা। পোলাও, ভাত, মাছ, মিষ্টান্ন ছিল সবরকমের ব্যবস্থা। পুজো প্রায় শেষ। আজ দশমী। এই দালানে দীপাবলিতে হবে মা কালীর আরাধনা। দালানের পাশেই তৈরি হচ্ছে সেই মূর্তি।