আর নেই “লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন” । আজ নাচমহলে ঝাড় বাতিটিও আর নেই, ছড়ায় না আতরের সুগন্ধি , রঙিন জলের ফোয়ারাও আর ওড়ে না।এখন চারিদিকে শুধুই মাকড়শার জাল। তবে বাড়িজুড়ে রয়েছে ইতিহাস। পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করছে নিমতিতা রাজবাড়ি।
প্রায় ৩৫০ বছর আগে তৎকালীন জমিদার গৌরসুন্দর চৌধুরী ও দ্বারকানাথ চৌধুরীর দ্বারা নির্মিত নিমতিতা রাজবাড়ি আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে। এক সময় রাজবাড়িতে সন্ধ্যে ছিল উৎসব মুখর। ক্ষীরোদা প্রসাদ, বিদ্যাবিনোদ, শিশির কুমার ভাদুরীর নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে এই রাজবাড়িতেই। ‘জলসাঘর’, ‘দেবী’-র মতো বিখ্যাত ছবির শ্যুটিং হয়েছে এই বাড়িতেই। এই বাড়িতে পা পড়েছে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচিত্র নির্মাতা সত্যিজিৎ রায়ের। সময়ের সাথে সাথে আজ সবকিছু বদলেছে, জমিদার বাড়ি তার যৌবন হারিয়ে আজ জীর্ণ। History of Nimtita Rajbari
রক্ষণা বেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়েছে কারুকার্যমুলক একাধিক অংশ। তবুও জরাজীর্ণ অবস্থায় কোনক্রমে দাঁড়িয়ে আছে একাধিক জানা অজানা ইতিহাসের সাক্ষী মুর্শিদাবাদের নিমতিতার এই রাজবাড়ি। যা আজ অবহেলিত ।
ইটালিয়ান ধাঁচে তৈরী এই বাড়ির ভিতর একসময় পাঁচটি উঠোন, দেড় শতাধিক কক্ষ, নাট্য মঞ্চ, ঠাকুর দালান ছিল। এখন বাড়িটা জনমানবশূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে। জলসাঘর ছবিতে এই বাড়িতে এসেছিলেন গঙ্গাপদ বসু, বেগম আখতার, ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান, অপর্ণা সেন, সৌমিত্র চ্যাটার্জি ও শর্মিলা ঠাকুর। উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী,বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, অন্নদাশঙ্কর রায়, সাহিত্যিক লীলা মজুমদারও এই বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু সেই সব আজ অতীত, আজ সব ধ্বংসের পথে, জরাজীর্ণ অবস্থায় পুরো রাজবাড়ি চত্বর, বিভিন্ন জায়গায় আগাছায় ভরেছে, বাড়ির বিভিন্ন অংশে ফাটলও ধরেছে।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদ জেলা সফরে এসে জেলার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। সার্কিট ট্যুরিজমে জোর দেওয়ার ভাবনা পর্যটন দপ্তরের। তাহলে কি এই নিমতিতা রাজবাড়িকেও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সাজিয়ে তোলা হবে? এই প্রশ্ন নিমতিতা বাসীর। স্থানীয়রাও চাইছেন এই ইতিহাস বিজড়িত নিমতিতা রাজ বাড়ি সংস্কার করে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। পর্যটকেরা আসবেন, জানার সুযোগ পাবেন ইতিহাসের কথা।
এই রাজবাড়ির পাশেই রয়েছে গঙ্গা-পদ্মার বিভাজন, ধ্বংস হওয়ার আগে প্রাণ ফিরে পেতে চাইছে নিমতিতা রাজবাড়ি। বলছেন, স্থানীয়রা কবে আবার প্রাণ ফিরে পাবে নিমতিতা রাজবাড়ি! কবে পর্যটকেরা আসবেন? সেদিকেই তাকিয়ে জেলাবাসী । পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠলে হবে কর্মসংস্থান, এলাকার উন্নয়ন। সার্কিট ট্যুরিজম এর অধিনে নিমতিতা রাজবাড়িকে বাঁচিয়ে তোলার আর্জি স্থানীয়দের। Murshidabad Tourist Places