হাড়ের ভয়ঙ্কর এই অসুখের নাম অস্টিওপোরোসিস , রুখবেন কীভাবে ? Osteoporosis and Prevention

Published By: Madhyabanga News | Published On:

অস্টিওপোরোসিস রোগটি হচ্ছে আমাদের শরীরের হাড়ের  অসুখ। আমাদের শরীরে ২০৬টি হাড় রয়েছে। এই  হাড়গুলো জন্মের সময় নরম থাকে। তারপর আস্তে আস্তে হাড়ে ক্যালসিয়াম জমা হয়ে হাড় শক্ত হয়। শক্ত হওয়া বলতে হাড়ের ডেনসিটি বা হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে। ফলে হাড় শক্ত এবং মজবুত হয়। ছোট বাচ্চার হাড়ে যদি চাপ পড়ে, তাহলে হাড় বাঁকা হয়ে যাবে। আর বয়স্ক লোকের হাড়ে যদি চাপ পড়ে, তাহলে ভেঙে যাবে। মানুষের জন্মের পর ২০ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের ঘনত্ব বাড়তে থাকে। তারপর ন্যাচারালি ঘনত্ব কমতে থাকে। অর্থাৎ ক্ষয় হতে থাকে। একটা নির্দিষ্ট বয়সে (৬০-৭০ বছর) হাড়ের ঘনত্ব অনেক কমে যায়। ঘনত্ব কমে যাবার নির্দিষ্ট মাপ রয়েছে। আমরা বলছি, অস্টিওপোরোসিস। উদাহরণস্বরূপ বলি, কাঠ যেমন ঘুণে খেয়ে ফেললে নড়োবড়ো হয়ে যায়। হাড়েরও ভেতরে আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়ে অস্টিওপোরোসিস হয়। এক কথায় ঘুণে খাওয়া হাড়ের মতো।

অস্টিওপোরোসিস লক্ষণ খুব বেশি দেখা দেয় না। কিন্তু অল্প চাপে (হাঁটতে হাঁটতে পড়ে গেলে) তাতেই ভেঙে যায়। বিশেষ করে হিপ বল (কোমর-পায়ের ওপরের হাড়) গোড়ায় এবং মেরুদণ্ডের হাড়গুলো ভেঙে যায় সহজেই। তাতে রোগীরা বিছানায় মাসের পর মাস পড়ে থাকে। এ ধরনের ফ্রাকচার হবার কারণে মৃত্যুও হয়ে থাকে।

অস্টিওপোরোসিস ২ রকম। একটি হচ্ছে মহিলাদের। তাদের মাসিক বন্ধ হবার পর হাড়ের ক্ষয় খুব দ্রুত হয়। ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ক্ষয় শুরু হয়। আর পুরুষদের হাড়ের ক্ষয় শুরু হয় ৬৫ বছরের পর। একটা বয়সে গিয়ে সবারই হাড় ক্ষয় শুরু হয়। ৮০ বছর বয়সী লোকের দেখা যায়, তাদের ম্যাক্সিমাম হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে।

হাড় ক্ষয় এখন কম বয়সে নির্ণয় করা যায়। কারণ আমাদের সেই ধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে। ৪০-৫০ বছর বয়সে যদি হাড়ের পরীক্ষা করা যায়। তাহলে তার প্রাথমিক অবস্থায় বোঝা যাবে হাড়ের ঘনত্ব কতো রয়েছে। ঘনত্ব খুব কম, নাকি স্বাভাবিক রয়েছে। যাদের কম থাকবে, তাদের ভেঙে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন তাদের প্রতিরোধমূলক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

ধূমপান হাড়ের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে এবং এর ফলে মহিলাদের হাড়ের ভর (হাড়ের খনিজ ঘনত্ব) উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। অস্টিওপরোটিক মহিলারা ছাড়াও যারা অস্টিওপোরোসিসের জন্য ওষুধ খাওয়ার সময় ধূমপান চালিয়ে যান, তারা চিকিত্সার সম্পূর্ণ সুবিধা অর্জন করতে ব্যর্থ হন। যে মহিলারা অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন করে তাদেরও অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি রয়েছে।

অস্টিওপরোসিস হতে পারে এমন অন্যান্য জীবনধারার কারণগুলি হল:

  • অপর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ,
  • খুব কম শারীরিক কার্যকলাপ
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ
  • অত্যধিক অ্যালকোহল গ্রহণ এবং

পুষ্টি

ক্যালসিয়াম: হাড়ের শক্তির সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর জন্য আপনার জন্য প্রয়োজনীয় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলির মধ্যে একটি হল ক্যালসিয়াম। অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করার জন্য আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুগ্ধজাত খাবারের সাথে একটি সুষম খাদ্য খেতে হবে, যা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের প্রাথমিক উৎস।

ভিটামিন ডি: ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম বিপাক সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেম এবং কিডনি থেকে আপনার ক্যালসিয়াম শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে এবং এর ফলে এটি আপনার শরীরের টিস্যু এবং রক্তে উপলব্ধ করে। এটি আপনার হাড়ে ক্যালসিয়াম জমাতে সাহায্য করার জন্যও কাজ করে।

হাড়ের জন্য ব্যায়াম

বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীর অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার শরীরে কিছু বড় পরিবর্তন ঘটে:

  • হাড়ের ভর এবং ঘনত্ব হ্রাস পায়
  • পেশীর আকার এবং শক্তি হ্রাস পায়
  • টেন্ডন এবং লিগামেন্ট কম স্থিতিস্থাপক হয়
  • তরুণাস্থি অবক্ষয় এবং জয়েন্টের প্রদাহ ঘটে

উপরের শারীরিক পরিবর্তনগুলি আপনাকে ফ্র্যাকচার, বিভিন্ন আঘাত, অস্টিওপোরোসিস এবং আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকিতে ফেলে। প্রতিদিন ব্যায়াম করা উপরোক্ত জটিলতাগুলি প্রতিরোধ করতে এবং অস্টিওআর্থারাইটিস এবং অস্টিওপোরোসিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী অবস্থার ক্ষেত্রে অনেক ত্রাণ প্রদান করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম হাড়ের ক্ষয় রোধেও সাহায্য করতে পারে এবং আপনাকে পেশীর শক্তি, সমন্বয় এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা ফলত পতন এবং সম্পর্কিত ফ্র্যাকচার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

আপনি একটি ব্যায়াম প্রোগ্রাম শুরু করার আগে, আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। আপনার ডাক্তারের পরামর্শে শুধুমাত্র ব্যায়াম করুন। আপনার নিজের ব্যায়ামের নিয়ম অনুসরণ করবেন না, কারণ আপনার ডাক্তার আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর ভিত্তি করে কিছু বিধিনিষেধের সুপারিশ করতে পারেন।