মামিনুল ইসলাম: হরিহরপাড়া ১৩ই নভেম্বর – বৈদু্তিক যন্ত্রচালিত মেশিনের চাহিদায় আজ বিলুপ্তির পথে হাতে বোনা তাঁত শিল্প। মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া বংশ পরম্পরায় তাঁত বুনেই জীবিকা নির্বাহ করেন বহু তাঁত শিল্পী। সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসা এই তাঁত শিল্পকে পুনরায় জীবিত করে তুলতে সরকারী সাহায্যের উপরেই ভরসা তাদের।একটা সময় ছিল, যখন গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকেই শোনা যেত তাঁত বোনার শব্দ। কিন্তু এখন আর তাঁত বোনার শব্দ শোনা যায় না। সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার স্বরুপপুর ও ধরমপুর অঞ্চলের অন্তর্গত কয়েকটি গ্রামের মানুষ এই তাঁত বুনেই জীবিকা নির্বাহ করেন। দীর্ঘদিনের পুরনো এই শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। শিল্পীদেরও দুর্গতির কোন শেষ নেই। হ্যান্ডলুমের জায়গায় এসেছে পাওয়ার লুম। বাজারে এখন তাঁত শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরন, কাচামালের প্রচুর অভাব। যার কারনে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন শিল্পীরা। বাজারযাত কারনে যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমন বাজারে তাঁত শিল্পের পন্য চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে, তার উপর আবার বাজারে এখন বৈদুতিক যন্ত্রচালিত মেশিন। ফলে মেশিনের তৈরি গামছা কাপড়ের সঙ্গে চিরাচরিত হস্ত চালিত তাঁত শিল্পীরা তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে পারছেন না। একদিকে যেমন বিক্রির সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তেমন আবার তাদের রোজগারও কমছে দিন দিন। যার কারনে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁত শিল্পীরা জানান, আগে তাঁত শিল্পের পন্যের সঠিক মুল্য পাওয়া যেত। এখন আর তাঁতের পারিশ্রমিক মুল্য পাওয়া যায়না। কাজের অভাবে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে নতুন প্রজন্ম।
কুতুবুদ্দিন আনসারি একজন তাঁত শিল্পী।বংশ পরম্পরায় তাঁত শিল্পের সাথেই জড়িত বলে জানাচ্ছেন তাঁত শিল্পী কুতুবুদ্দিন । সুতোর অতিরিক্ত দাম, অথচ লাভ নেই। যন্ত্র চালিত মেশিনের ধাক্কায় বর্তমানে গামছা বুনেই কোনরকমে সংসার চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি।আগে গ্রামের মহিলারা সংসার সামলেই তাঁত বুনতেন। এখন দিনে হাতে গুনে কয়েকটা গামছা বোনেন। সরকারী ভাবে কোন সাহায্য মেলেনি বলেই আক্ষেপ এই এলাকার তাঁত শিল্পীদের। তবে পাওয়ার লুম হওয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে বলেই মত অন্যান্য শিল্পীদের। বর্তমানে কম সময়ে বেশি পরিমান গামছা তৈরি করে সুবিধার কথাই জানাচ্ছেন এই ঐতিহ্যশালী তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে পারে একমাত্র সরকারী অনুদান। সরকারী ভাবে সাহায্য পেলে হয়তো আবারও মুখ তুলে দাঁড়াবে এই শিল্প, আশাবাদী তাঁত শিল্পীরা।