স্বাধীনতার দিনেও পরাধীন ছিল মুর্শিদাবাদ

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ ইংরেজদের হাত থেকে স্বাধীন হল দেশ, শুধু স্বাধীনই নয়, ভাগও হল একই সঙ্গে। দুই বাংলার মাঝখান দিয়ে উঠল কাঁটাতার। আলাদা হল এপার ও ওপার। একই বঙ্গদেশের সবটা একইসঙ্গে কিন্তু স্বাধীন হয়নি। যেমন মুর্শিদাবাদ। পলাশির যুদ্ধ, কোম্পানির শাসনের শুরুয়াদ- সবই নবাবী বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদের মাটিতে।
১৯৪৭ সালের ১৫ ই অগাস্ট যখন ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করছে, তখন সেই স্বাধীনতার স্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকে মুর্শিদাবাদ। ১৫ই অগাস্ট নয় ঠিক তার তিন দিন পর অর্থাৎ ১৮ ই অগাস্ট মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে ওড়ে তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা। আজ স্বাধীনতার ৭৪ তম বর্ষে আবারও ফিরে দেখা মুর্শিদাবাদের সেই ইতিহাস। ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখা যায়, ভাগ বাটোয়ারায় মুর্শিদাবাদ পড়ে পূর্ব পাকিস্তানে। ১৯৪৭ সালের ১৫ ই অগাস্ট থেকে ১৭ ই অগাস্ট এই তিন দিন মুর্শিদাবাদ জেলা পূর্ব পাকিস্থানের মধ্যেই ছিল। অন্যদিকে বর্তমান বাংলাদেশের সাবেক খুলনা জেলা ১৫ থেকে ১৭ ই অগাস্ট এই তিন দিন ছিল ভারতের মধ্যে। ১৮ ই অগাস্ট বিনিময় পদ্ধতিতে মুর্শিদাবাদ জেলা ভারতকে দেওয়া হয় এবং পাকিস্তান পায় খুলনা জেলা। এখন অবশ্য খুলনা পাকিস্থানেও নয় রয়েছে বাংলাদেশে।

১৯৪৭ এর ১৫ ই অগাস্ট,, স্বাধীনতা দিবসে মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে পাকিস্থানের পতাকা তোলা হয়। ১৫ ই অগাস্ট সকালে বহরমপুর শহরে ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে উত্তোলিত হয় পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা। পরিস্থিতি তখন বেশ অস্থির, অনেকেই অস্বস্তিতে। অনেকেই তখন আওয়াজ তোলেন এই আজাদি মিথ্যা। জেলার ঐতিহাসিক হাজারদুয়ারী থেকে নানান প্রান্তে সেই পতাকা উত্তোলন মেনে নিতে পারেন নি অনেকেই। দিলিতেও তখন মুর্শিদাবাদকে ভারতে যুক্ত করা নিয়ে শুরু হয় তৎপরতা। সুরাহার পথ খুঁজতে প্রস্তাব আসে, দুই দেশের মাঝে যত বেশি সম্ভব নদী বর্ডার রাখার। তিন দিন ধরে তীব্র টানাপোড়েনের পর শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় মুর্শিদাবাদ থাকবে ভারতেই। স্বাধীনতার তিন দিনের মধ্যে ফের বদলালো বাংলা সহ দুই দেশের মানচিত্র। মুর্শিদাবাদ এবং খুলনার এই নাটকীয় পরিবর্তন প্রক্রিয়া শেষ হয় ১৭ ই অগাস্ট রাতে। ১৮ ই অগাস্ট সরকারি ভাবে মুর্শিদাবাদ অন্তর্ভুক্ত হল ভারতে। জেলা জুড়ে জাতীয় পতাকা উত্তলন উৎসবের মতো করে পালন করেন মুর্শিদাবাদবাসী। স্বাধীনতার আজ ৭৪ তম বর্ষে এসেও জ্বলজ্বল করছে মুর্শিদাবাদের সেই স্বাধীনতার কাহিনী। মুর্শিদাবাদ জেলার আনাচে কানাচে যেন ছড়িয়ে সেই ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়েই স্বাধীনতা উদযাপন করে চলেছেন জেলাবাসী।

ব্যুরো রিপোর্ট, মধ্যবঙ্গ নিউজ